ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে শুল্ক বসানোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প (Tariffs on EU)। হঠাৎ কেন এই কথা বললেন তিনি?
২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা (Tariffs on EU)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন (Tariffs on EU)। তিনি দাবি করেছেন যে এই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্থা মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য গঠিত হয়েছে। বুধবার, দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে ট্রাম্প জানান যে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক ২ এপ্রিল কার্যকর হবে। এর পাশাপাশি ইইউ-র পণ্য আমদানির ওপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
ইউরোপের দেশগুলো আমেরিকার সুযোগ নিচ্ছে: দাবি ট্রাম্পের (Tariffs on EU)
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন (Tariffs on EU), “আমরা খুব শীঘ্রই এটি ঘোষণা করব। এটি সাধারণভাবে ২৫ শতাংশ শুল্ক হবে, যা গাড়ি ও অন্যান্য সব জিনিসের ওপর প্রযোজ্য হবে।” তিনি আরও বলেন, “ওরা আমাদের সুযোগ নিচ্ছে… ওরা আমাদের গাড়ি গ্রহণ করে না, কৃষিপণ্যও নিতে চায় না। নানা অজুহাত দেখিয়ে ওরা আমাদের পণ্য আমদানি বন্ধ করে রাখে, অথচ আমরা ওদের সবকিছু গ্রহণ করি।”
ইইউ গঠনের উদ্দেশ্যই আমেরিকাকে দুর্বল করা: ট্রাম্প
ট্রাম্প দাবি করেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল আমেরিকাকে দুর্বল করা (Tariffs on EU)। তিনি বলেন, “আমি ইউরোপের দেশগুলোকে ভালোবাসি। আমিও তো ওখান থেকেই এসেছি, অনেক বছর আগে, তাই না? কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন তৈরি করা হয়েছে আমেরিকাকে ঠকানোর জন্য… এবং ওরা খুব ভালোভাবেই সেটা করেছে। তবে এখন আমি প্রেসিডেন্ট।”
তবে বাস্তবে, ১৯৯৩ সালে মাসট্রিচট চুক্তির মাধ্যমে ইইউ গঠিত হয়। এটি মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপীয় সংহতি গড়ে তোলার জন্য তৈরি হয়েছিল।
আরও পড়ুন: Trump Aid to Pakistan: এফ-১৬ রক্ষণাবেক্ষণে পাকিস্তানকে প্রায় ৪০ কোটি ডলার অনুদান দিল ট্রাম্প!
ইইউ-এর বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ও আমেরিকার ঘাটতি
ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ইইউ আমেরিকার সঙ্গে পণ্য বাণিজ্যে ১৫৫.৮ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ১৫৯.৬ বিলিয়ন ডলার) উদ্বৃত্তে ছিল। তবে পরিষেবা বাণিজ্যে ইইউ ১০৪ বিলিয়ন ইউরোর ঘাটতিতে ছিল। ইইউ থেকে আমেরিকার রপ্তানির সবচেয়ে বড় অংশ গঠন করে যন্ত্রপাতি ও যানবাহন। এরপর রয়েছে রাসায়নিক পদার্থ, অন্যান্য নির্মিত পণ্য এবং ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যাল সামগ্রী।
শুল্ক বাড়লে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইইউ-র আমদানির ওপর শুল্ক বসালে আমেরিকার সাধারণ ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। অর্থনীতিবিদরা ইতিমধ্যেই এই আমদানি শুল্কের কারণে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন।
ইউরোপের বাজারে আতঙ্ক, ইইউ-র পাল্টা প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইউরোপীয় শেয়ারবাজারে বড় ধাক্কা লেগেছে। ইইউও ট্রাম্পের এই হুমকির বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। ইইউ-র নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, তারা অবৈধ বাণিজ্য বাধার বিরুদ্ধে দৃঢ় ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাবে।
আরও পড়ুন: Bangladesh: বাংলাদেশে নতুন ছাত্র সংগঠনে পদ নিয়ে বিক্ষোভ ও মারামারি
এক বিবৃতিতে কমিশন বলেছে, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাজার। এটি আমেরিকার জন্যও উপকারী হয়েছে। ইইউ একটি বৃহৎ ও সংযুক্ত বাজার তৈরি করেছে, যা বাণিজ্য সহজ করেছে, মার্কিন রপ্তানিকারকদের জন্য খরচ কমিয়েছে এবং ২৭টি দেশে মান ও নিয়ম একীভূত করেছে। এর ফলে ইউরোপে মার্কিন বিনিয়োগ অত্যন্ত লাভজনক হয়েছে।”
আমেরিকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায় ইইউ
ইউরোপীয় কমিশন আরও বলেছে, “আমরা চাই আমেরিকা আমাদের সঙ্গে মিলে কাজ করুক, যেন আমাদের জনগণ ও ব্যবসা এই সুযোগগুলোর সুবিধা পায়। আমাদের একে অপরের বিরুদ্ধে নয়, বরং একসঙ্গে কাজ করা উচিত।”
ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তির সম্ভাবনা
এটি প্রথমবার নয় যে ট্রাম্প ইইউ ও ব্রিটেনের ওপর শুল্ক বসানোর হুমকি দিলেন। তবে, ট্রাম্প এর আগেও বলেছেন যে ব্রিটেনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করা সম্ভব হতে পারে। ব্রিটেনের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি তুলনামূলক কম হওয়ায় এই চুক্তির সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।