ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে চিন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে (Trump Wants to Destroy China)। ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) দ্বিতীয়বারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদে বসতেই ফের আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ করেছেন, আর তার প্রধান নিশানা—চিন। বেজিঙের উপর শুল্কের বোঝা বাড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলার পরিকল্পনা এখন আর গোপন নয়। বরং এটা খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ট্রাম্প এবার শুধু চিনের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে লাগাম টানতে চান না, বরং বাণিজ্যিক আধিপত্যের খেলায় প্রতিপক্ষকে একেবারে কাবু করতে চান।
পুরনো ক্ষোভের নতুন রূপ (Trump Wants to Destroy China)
চিন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জটিলতা নতুন নয়। তবে এর সূত্রপাত খুঁজতে হলে যেতে হবে ২০০৮ সালের দিকে (Trump Wants to Destroy China)। সে সময় বিশ্বমন্দায় কাঁপছিল পশ্চিমা দুনিয়া, আর তার আঁচ লেগেছিল আমেরিকার রিয়্যাল এস্টেট মার্কেটেও। ওই সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন একজন সফল ব্যবসায়ী, চিনে বিনিয়োগের চেষ্টা করেন। কোয়াংজ়ু প্রদেশে বিলাসবহুল অফিস টাওয়ার তৈরির পরিকল্পনা ছিল তাঁর সংস্থার। কিন্তু চিন সরকারের পক্ষ থেকে একের পর এক অনুমোদন না পেয়ে, মোট ১৩০ বার প্রত্যাখ্যাত হন তিনি। সেই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতেই সম্ভবত ট্রাম্প রাজনীতির ময়দানে নেমে এই শুল্ক যুদ্ধকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছেন।
শুল্কের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া চিনকে (Trump Wants to Destroy China)
২০২৪ সালে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে ট্রাম্প বেজিঙের পণ্যের উপর ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছেন (Trump Wants to Destroy China)। এত উচ্চহারে শুল্ক শুধু যে চিনা পণ্যকে আমেরিকান বাজারে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে তাই নয়, একই সঙ্গে চিনের রফতানি নির্ভর অর্থনীতিকেও দুর্বল করে তুলছে। চিন দীর্ঘদিন ধরেই ইচ্ছাকৃতভাবে ইউয়ানের দাম ডলারের তুলনায় কমিয়ে রাখে, যাতে তাদের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকে। ট্রাম্প ঠিক সেখানেই আঘাত করছেন। ইউয়ানের দাম বাড়ানোর চাপ সৃষ্টি করে তিনি চিনের রফতানির পরিমাণ কমাতে চাইছেন।বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউয়ান যত শক্তিশালী হবে, চিনের রফতানির ডলারে আয় ততই কমে যাবে(Trump Wants to Destroy China)। উদাহরণস্বরূপ, আগে এক ডলারে ৭ ইউয়ান পাওয়া গেলে ৭ হাজার ইউয়ান আয় হতো নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য রফতানি করে। কিন্তু এখন এক ডলারে যদি ৬ ইউয়ান পাওয়া যায়, আয় নামবে ৬ হাজারে। এভাবে দীর্ঘমেয়াদে চিনের আর্থিক কাঠামোতে বড় ধাক্কা লাগবে।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য ও চিনের মাথাব্যথা (Trump Wants to Destroy China)
বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে চিনের জিডিপি প্রায় ১৮ লক্ষ কোটি ডলার (Trump Wants to Destroy China)। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের বেশি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি মাত্র ২.৮ শতাংশ। এই হারে চললে ২০৩০ সালের মধ্যে চিন অর্থনৈতিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যেতে পারে। আর এই ভবিষ্যদ্বাণীই ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা।তাছাড়া চিনের হাতে রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন বন্ড, যার ভারতীয় মূল্য প্রায় ৬৬ লক্ষ কোটি টাকা(Trump Wants to Destroy China)। এই বন্ড বাজারে বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে বেজিং। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন নীতিতে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায়, চিনের পক্ষেও বন্ড হ্যান্ডেল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিকে শুল্কের ধাক্কা, অন্যদিকে আর্থিক চাপ—দুটি দিক থেকেই বেজিংয়ের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।

আন্তর্জাতিক মিত্রতা ও কৌশল (Trump Wants to Destroy China)
চিনকে আরও কোণঠাসা করতে ট্রাম্প কৌশলগত ভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা করছেন। পুতিনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা এক নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত দেয়। পাশাপাশি ভারত—যার সঙ্গে চিনের সীমান্ত সংঘাত রয়েছে—তাকেও পাশে পাওয়ার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন। এতে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা চিত্রেও নতুন টানাপোড়েন সৃষ্টি হতে পারে।

বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা ও ভবিষ্যত (Trump Wants to Destroy China)
শুধু অর্থনৈতিক নয়, এই শুল্ক যুদ্ধ নতুন করে বিশ্বকে ঠেলে দিচ্ছে একটি সম্ভাব্য ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে (Trump Wants to Destroy China)। এক দিকে পশ্চিমা দুনিয়া, অন্য দিকে চিন, একে অপরকে বাণিজ্য ও কূটনীতির মাধ্যমে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। এই সংঘর্ষে ইউরোপ, ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো—সবাই কোনও না কোনওভাবে প্রভাবিত হবে।বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের কৌশল সফল হলে চিনের অর্থনীতি বড়সড় ধাক্কা খাবে, কিন্তু এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার যদি চিন এ চাপ সামলে নেয়, তাহলে বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের কর্তৃত্ব আরও দৃঢ় হবে(Trump Wants to Destroy China)।ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্সি শুরু হয়েছে আগের চেয়েও বেশি আগ্রাসী কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে। চিনকে ঠেকাতে তাঁর এই ‘শুল্ক যুদ্ধ’ বিশ্ব রাজনীতিকে নতুন দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এখন দেখার, এই কৌশল আদতে কাকে জয় এনে দেবে—ট্রাম্পকে না কি ড্রাগনকে?