ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সরকার যদি ট্র্যান্সজেন্ডার সৈন্যদের ধরে রাখতে আগ্রহী হয়, তবে “কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে” ট্রান্সজেন্ডার সৈন্যদের অব্যাহতির জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে বলে জানা গিয়েছে (US Army)।
পেন্টাগনের নতুন নীতি (US Army)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে থাকা ট্রান্সজেন্ডার সৈন্যদের সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে, যদি না তারা বিশেষ ছাড়পত্র (ওয়েভার) গ্রহণ করেন, পেন্টাগন বুধবার এক স্মারকলিপিতে জানিয়েছে (US Army)। এই স্মারকলিপিটি জনসমক্ষে আসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জানুয়ারির শেষের দিকে জারি করা একটি নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অংশ হিসেবে। ট্রাম্পের নির্দেশের লক্ষ্য ছিল ট্রান্সজেন্ডারদের সেনাবাহিনীতে যোগদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, যেসব সেনা (US Army) লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তনের মানসিক সমস্যা (জেন্ডার ডিসফোরিয়া) নিয়ে ভুগছেন বা অতীতে এমন সমস্যার ইতিহাস রয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তবে যদি কোনো সৈন্য সেনাবাহিনীতে থেকে যাওয়ার জন্য বিশেষ ছাড়পত্রের আবেদন করেন এবং যদি সরকার মনে করে যে তার উপস্থিতি যুদ্ধক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তাহলে তিনি সেনাবাহিনীতে থাকতে পারবেন। ওয়েভার পেতে হলে সেনাদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা কখনো লিঙ্গ পরিবর্তনের চেষ্টা করেননি এবং একই লিঙ্গ পরিচয়ে টানা ৩৬ মাস কাটিয়েছেন, যেখানে কোনো মানসিক বা সামাজিক সমস্যা দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: Caro Quintero: ‘মাদক সম্রাট’ রাফায়েল ক্যারো কুইন্তেরো সহ ২৯ জনকে আমেরিকায় পাঠালো মেক্সিকো
নতুন নিয়মে সেনাবাহিনীতে যোগদানের বাধা (US Army)
এর আগে এই মাসের শুরুর দিকে পেন্টাগন ট্রান্সজেন্ডারদের সেনাবাহিনীতে যোগদানে নিষিদ্ধ করে এবং যারা ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীতে রয়েছেন, তাদের জন্য লিঙ্গ পরিবর্তনের চিকিৎসা বন্ধ করে দেয় (US Army)। সাম্প্রতিক স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, যারা লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তনের চিকিৎসা নিয়েছেন বা জেন্ডার ডিসফোরিয়ার ইতিহাস রয়েছে, তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন না। এছাড়া, যারা ক্রস-সেক্স হরমোন থেরাপি নিয়েছেন বা লিঙ্গ পুনর্গঠন সার্জারি করেছেন, তারাও সেনাবাহিনীতে অযোগ্য বলে গণ্য হবেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যদি সরকার মনে করে যে কোনো ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি সেনাবাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি সেনাবাহিনীর নিয়ম মেনে চলতে পারবেন, তাহলে তাকে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
আমেরিকায় ট্রান্সজেন্ডার নীতির পরিবর্তন
গত কয়েক বছরে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য নীতিতে বারবার পরিবর্তন এসেছে। ডেমোক্র্যাটিক সরকারগুলো তাদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন ট্রান্সজেন্ডারদের সেনাবাহিনী থেকে বাদ দেওয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করেছে। ২০১৬ সালে, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডারদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
এই নীতির অধীনে, যারা ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তারা খোলাখুলিভাবে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিতে পারতেন। এছাড়া, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন ট্রান্সজেন্ডার সৈন্যদের যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই নিয়ম ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্থগিত রাখেন এবং পরে পুরোপুরি বাতিল করেন।
আরও পড়ুন: Hamas on Trump: ট্রাম্পের এআই ভিডিও নিয়ে হামাসের তীব্র প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প প্রশাসনের ট্রান্সজেন্ডার সৈন্যদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের এপ্রিলে কার্যকর হয়। ২০২১ সালে, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসেই ট্রান্সজেন্ডার সৈন্যদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। তিনি বলেন, যে কোনো যোগ্য মার্কিন নাগরিক সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন। তবে ২০২৫ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর, ট্রাম্প আবারও একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যেখানে বলা হয় যে “সেনাবাহিনীতে কাজ করার জন্য লিঙ্গ পরিচয়ের পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়”।
রাজনৈতিক বিতর্ক ও ভাগ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু মার্কিন রাজনীতিতে বড় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলো ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার রক্ষায় আইন তৈরি করছে, অন্যদিকে রিপাবলিকান-শাসিত রাজ্যগুলো এই ধরনের নীতির বিরোধিতা করছে। এমনকি ট্রান্সজেন্ডার স্বাস্থ্যসেবা, স্কুল পাঠ্যবই ও জনসাধারণের জায়গায় তাদের অধিকার নিয়েও দুই দলের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডার সেনাদের নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন নীতি আবারও আমেরিকায় বড় বিতর্ক তৈরি করতে পারে।