ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ফের তীব্র উত্তেজনার মুখে (US China Tariff War)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) চিনা পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা জবাব দিল চিন। বেজিং জানিয়ে দিয়েছে, আমেরিকা থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক বসানো হবে। পাশাপাশি চিন সরকার ১১টি মার্কিন সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ চাপিয়েছে।এই সিদ্ধান্তের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তলানিতে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে বাণিজ্য ঘিরে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা, যার প্রভাব পড়তে পারে আন্তর্জাতিক বাজারে।
ট্রাম্পের ঘোষণা ঘিরে চাপে বেজিং (US China Tariff War)
দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসার পর থেকেই ট্রাম্প একাধিক দেশে “পারস্পরিক শুল্কনীতি” চালুর পথে হাঁটছেন (US China Tariff War)। তিনি ঘোষণা করেছেন, যেসব দেশ আমেরিকার পণ্যের উপর যে হারে শুল্ক নেয়, আমেরিকাও সেসব দেশের পণ্যের উপর সমান শুল্ক আরোপ করবে। সেই যুক্তিতেই চিনা পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়।ট্রাম্প বলেন, “চিন আমাদের পণ্যে ৬৭ শতাংশ শুল্ক নেয়। আমরা ওদের অনেকটা ছাড় দিয়েছি। মাত্র ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। তারা যদি আরও বাড়তি শুল্ক বসায়, সেটা হবে একটা বড় ভুল।”
চিনের পাল্টা পদক্ষেপ (US China Tariff War)
শুক্রবার চিন ঘোষণা করে, তারা শুধু শুল্ক নয়, একাধিক কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে (US China Tariff War)। গ্যাডোলিনিয়াম, ইট্রিয়াম-সহ সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ‘রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস’-এর রফতানি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এই খনিজগুলি আধুনিক প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপরিহার্য।এছাড়াও, চিনের বাণিজ্য মন্ত্রক ১১টি মার্কিন সংস্থাকে ‘অবিশ্বস্ত’ ঘোষণা করে তাদের চিনে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। সেইসঙ্গে জানিয়ে দেয়, চিনা কোনও সংস্থাও আর ওই মার্কিন কোম্পানিগুলির সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে না।

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া (US China Tariff War)
এই ঘোষণার পরেই নিজের সমাজমাধ্যমে সরব হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (US China Tariff War)। তিনি বলেন, “চিন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে, ওরা ভুল করছে। মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক বসিয়ে ওরা নিজেদেরই ক্ষতি করবে।”তবে আশ্চর্যজনকভাবে, বৃহস্পতিবার ট্রাম্প টিকটক সংক্রান্ত আলোচনার প্রসঙ্গে বলেন, “চিন যদি টিকটক চুক্তি স্বাক্ষরে রাজি হয়, তাহলে শুল্ক নিয়ে সমঝোতা সম্ভব।” কিন্তু বেজিং সেই প্রস্তাবে কোনও সাড়া না দিয়েই পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেয়।

আরও পড়ুন: UN Report : গাজ়ায় প্রতিদিন ১০০ শিশু হতাহত, রিপোর্টে জানালো রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন (US China Tariff War)
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির (US China Tariff War) মধ্যে এই সংঘাত চলতে থাকলে তা সার্বিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলবে।রফতানি-আমদানি বাধাগ্রস্ত হবে, জ্বালানি ও কাঁচামালের দাম বাড়বে, বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় ভুগবেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন উন্নয়নশীল দেশগুলি, যারা এই দুই অর্থনীতির উপর নির্ভর করে ব্যবসা করে।
সমাধান কোথায়? (US China Tariff War)
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে (US China Tariff War)। তারা দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছে।কিন্তু আপাতত দুই পক্ষের অবস্থান অনড়। সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।পরিস্থিতি যদি এমনই চলে, তাহলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড়সড় ধস নেমে আসতে পারে—এমনটাই আশঙ্কা এখন বিশ্বজুড়ে।