ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উত্তেজনার আবহে নতুন মোড় নিচ্ছে আমেরিকা ও চিনের বাণিজ্য যুদ্ধ। এবার পাল্টা জবাবে কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটল বেজিং(US China Tariff War)। ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স’-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আর আমেরিকায় বিরল খনিজ ও চুম্বক রফতানি করবে না। ইতিমধ্যেই চিনা বন্দরগুলিতে চুম্বক ও খনিজ পদার্থ পাঠানো বন্ধ রাখা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
ধাক্কা আমেরিকার প্রযুক্তি ও শিল্পে(US China Tariff War)
চিনের এই পদক্ষেপে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেতে পারে আমেরিকার প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্প (US China Tariff War)। চুম্বক এবং বিরল খনিজ পদার্থ যেমন— নিওডিমিয়াম, ল্যান্থানাম ও ইউরোপিয়াম, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বৈদ্যুতিন গাড়ি, মোবাইল ফোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও জেট ইঞ্জিন তৈরির ক্ষেত্রে। বিশ্বে বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণে রাখে চিন। আমেরিকায় ব্যবহৃত এমন বহু প্রযুক্তির কাঁচামাল চিন থেকেই আসে। এই সরবরাহ বন্ধ হলে মার্কিন উৎপাদন শিল্প বড় ধাক্কা খাবে বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বিরল খনিজ ও চুম্বক রফতানিতে রাশ (US China Tariff War)
চিন সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, তারা রফতানির জন্য নতুন একটি “ন্যাশনাল এক্সপোর্ট কন্ট্রোল ফ্রেমওয়ার্ক” গঠন করতে চলেছে, যেখানে কোন কোন উপাদান কোন দেশে রফতানি করা যাবে— সেই বিষয়ে কড়া নজরদারি থাকবে। সূত্রের খবর, ওই খসড়া তালিকায় বিরল খনিজ ও চুম্বক উপাদানকে ‘কৌশলগত সম্পদ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: Balochistan Blast : বালোচিস্তানে ফের রক্তাক্ত হামলা! বোমা বিস্ফোরণে মৃত ৩ পুলিশকর্মী, আহত অন্তত ১৬
একের পর এক শুল্ক (US China Tariff War)
এই সিদ্ধান্তের পেছনে সরাসরি রয়েছে আমেরিকার সাম্প্রতিক শুল্ক নীতি (US China Tariff War)। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) দ্বিতীয় দফার কার্যকালে বেজিংয়ের উপর একের পর এক শুল্ক চাপিয়ে চলেছেন। সম্প্রতি চিনা পণ্যের উপর সর্বোচ্চ ১৪৫% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক বসিয়েছে আমেরিকা। এই পরিস্থিতিকে ‘অবিচার ও বৈষম্যমূলক’ বলে দাবি করেছে চিন। পাল্টা জবাবে চিনও মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক ৮৪% থেকে বাড়িয়ে ১২৫% করেছে।

আরও পড়ুন: US Iran Nuclear Talks : পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে পিছু না হটলে সামরিক পদক্ষেপ, হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের!
ভূরাজনৈতিক লড়াই (US China Tariff War)
দু’দেশের এই ‘শুল্ক যুদ্ধ’ এখন কেবল অর্থনৈতিক লড়াই নয়, তা রীতিমতো ভূরাজনৈতিক লড়াইয়ে রূপ নিচ্ছে। বেজিংয়ের কূটনৈতিক মহলে জোর গলায় বলা হচ্ছে, ‘‘আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব। আমেরিকার চাপের কাছে নত হব না।’’বিশ্লেষকদের মতে, চিন এই পদক্ষেপের মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিচ্ছে— একদিকে আমেরিকান প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে চাপ সৃষ্টি, অন্যদিকে নিজেদের উৎপাদিত গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ন্ত্রণ।

চিনের বিকল্প পাওয়া কঠিন (US China Tariff War)
এই পরিস্থিতিতে আমেরিকান প্রশাসনও চিন্তা শুরু করেছে বিকল্প উৎস খোঁজার বিষয়ে। তবে স্বীকার করছে, তাৎক্ষণিকভাবে চিনের বিকল্প পাওয়া কঠিন।বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির এই দ্বন্দ্ব যে শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, তার প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল এবং শেয়ারবাজারেও। আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিমধ্যেই বিরল খনিজের দাম লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। চিন এবং আমেরিকার এই ঠান্ডা যুদ্ধ কোথায় গিয়ে থামবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও এখনই স্পষ্ট— পরবর্তী ধাক্কা আরও বড় হতে চলেছে।