ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ফের একবার মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ চড়িয়েছেন (US-Iran Nuclear Talks)। বুধবার তিনি ইরানকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা ব্যর্থ হলে, আমেরিকা সামরিক পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না। শুধু তাই নয়, সেই হামলায় ইজ়রায়েলকেও পাশে পাবেন বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প উত্তেজনায় ঘি ঢাললেন (US-Iran Nuclear Talks)
এই হুঁশিয়ারি এমন সময় এল, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে (US-Iran Nuclear Talks)। ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক চুক্তি ভেঙে দিয়ে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন এক তরফাভাবে বেরিয়ে এসেছিল। তখন থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এবার ফের সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প সেই উত্তেজনায় ঘি ঢাললেন।
পারমাণু চুক্তির ও ট্রাম্পের অবস্থান (US-Iran Nuclear Talks)
২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসনের সময় ইরান ও ছয়টি শক্তিধর রাষ্ট্র—যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং চিন—একটি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষর করে (US-Iran Nuclear Talks)। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে না গিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার সীমিত রাখবে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেবে। এর বদলে ইরানের উপর থেকে একাধিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

আরও পড়ুন: Thai Canal : চিনের নয়া বানিজ্য কূটনীতি! “তাই খাল”-কে বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে ড্রাগন?
ত্রুটিপূর্ণ চুক্তি (US-Iran Nuclear Talks)
তবে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তিকে “ত্রুটিপূর্ণ” আখ্যা দিয়ে তাতে থেকে সরে আসে এবং পুনরায় ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপায় (US-Iran Nuclear Talks)। তখন থেকেই ইরান ধীরে ধীরে ফের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পথে এগোতে থাকে। আন্তর্জাতিক নজরদারি সংস্থা আইএইএ-র রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে ইরানের কাছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে একটি বড় ধাপ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।

আরও পড়ুন: US Tariff War : ট্রাম্পের শুল্কনীতি স্থগিতের সিদ্ধান্তে স্বস্তির ছায়া নাকি মন্দার পূর্বাভাস?
সামরিক চাপ ও কৌশলগত বার্তা (US-Iran Nuclear Talks)
সম্প্রতি পেন্টাগনের এক ঘোষণায় ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে মার্কিন ও ব্রিটিশ যৌথ সামরিক ঘাঁটিতে ছয়টি বি-২ বোমারু বিমান মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও এই পদক্ষেপকে ‘প্রতিরক্ষামূলক ও বার্তাবাহী’ পদক্ষেপ বলা হলেও, এর মধ্যে ইরানকে স্পষ্ট সতর্কবার্তা পাঠানোর বার্তা রয়েছে।
হামলার হুঁশিয়ারি (US-Iran Nuclear Talks)
ট্রাম্পের বক্তব্য সেই অবস্থানকেই আরও সুস্পষ্ট করে দেয়। প্রেসিডেন্ট বলেন, “পারমাণবিক চুক্তি ব্যর্থ হলে সামরিক হামলা একমাত্র বিকল্প।” তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপে ইজ়রায়েল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকবে। এমনকি তিনি ইঙ্গিত দেন, সময় খুবই কম—অর্থাৎ, ইরানের পক্ষে দরজাটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোনও সময়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক চাপ (US-Iran Nuclear Talks)
ইরানের এই অবস্থানে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ চরমে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে যৌথ চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইরানের পরমাণু অস্ত্রধর দেশ হয়ে ওঠা ঠেকাতে প্রয়োজনে সব রকম নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামরিক বিকল্প নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।ইরান অবশ্য তাদের অবস্থানে অনড়। তেহরানের তরফে বার বার বলা হচ্ছে, তারা শুধু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করছে—বিশেষত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। তবে আন্তর্জাতিক মহল সেই যুক্তিকে খুব একটা বিশ্বাস করছে না, বিশেষ করে ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুত থাকার পর।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির কারণ (US-Iran Nuclear Talks)
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্য চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। আবার এটি নির্বাচনী রাজনীতির অঙ্গ হিসেবেও দেখছেন অনেকে, কারণ ট্রাম্পের প্রশাসন বরাবরই ইজ়রায়েলের ঘনিষ্ঠ এবং মধ্যপ্রাচ্যে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পক্ষপাতী।তবে, এই উত্তেজনা যদি সামরিক সংঘাতে রূপ নেয়, তবে শুধু ইরান বা আমেরিকা নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত এর প্রতিক্রিয়া অনুভব করবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন বোমারু বিমান মোতায়েন এই সংকেতই দেয় যে, বড় পরিসরের সংঘাতের প্রস্তুতি চলছে।
কৌশলগত বার্তা (US-Iran Nuclear Talks)
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি এক অর্থে ইরানকে ফের আলোচনার পথে টানার প্রচেষ্টা হলেও, এর অন্তরালে রয়েছে একটি কৌশলগত বার্তা—‘চুক্তি না হলে যুদ্ধ!’ এই বার্তা কেবল তেহরান নয়, গোটা আন্তর্জাতিক মহলের জন্য সতর্কতা। ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক স্থিতাবস্থা এই পরিস্থিতির নিরসনের উপর অনেকাংশে নির্ভর করবে।