ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদ—দুই দেশেরই সরকার দাবি করছে, তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে (US Pakistan Trade)। কিন্তু সেই চুক্তির প্রকৃত বিষয়বস্তু নিয়েই তৈরি হয়েছে দ্বিধা ও বিতর্ক। যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন পাকিস্তানের বিশালাকার তৈলভান্ডার উন্নয়নে একযোগে কাজ করবে দুই দেশ, সেখানে পাকিস্তানের বক্তব্য, এই চুক্তি মূলত একটি বাণিজ্য চুক্তি—যার ফলে আমেরিকায় তাদের পণ্যের উপর শুল্ক কমানো হবে। দুই দেশের বিবৃতির এই অসঙ্গতি আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক জল্পনা উসকে দিয়েছে।
যৌথভাবে কাজ করবে আমেরিকা ও পাকিস্তান(US Pakistan Trade)
গত বুধবার সমাজমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প লেখেন, “আমরা এইমাত্র পাকিস্তানের সঙ্গে একটা চুক্তি সেরে ফেললাম(US Pakistan Trade)। এই চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের বিশাল তৈলভান্ডারকে কাজে লাগাতে যৌথভাবে কাজ করবে আমেরিকা ও পাকিস্তান।” ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ওই তেল প্রকল্পে কে নেতৃত্ব দেবে, তা ঠিক করবে তাঁর প্রশাসন। এমনকি তিনি মন্তব্য করেন, “হয়তো একদিন পাকিস্তান ভারতকেও তেল রপ্তানি করবে।”
এই মন্তব্য যেমন কূটনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই বিতর্কিতও। কারণ, এর আগে ভারত বারবার জানিয়ে এসেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। তবুও, ট্রাম্পের মন্তব্যে আবারও সেই বিতর্কিত মধ্যস্থতার প্রসঙ্গ উঠে এল।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি (US Pakistan Trade)
অন্যদিকে, পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়েছে, “আমেরিকা ও পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগ এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করেছে(US Pakistan Trade)। এই চুক্তির ফলে আমেরিকায় পাকিস্তানি পণ্যের উপর শুল্ক হ্রাস পাবে।” সেই সঙ্গে তারা আরও জানায়, এই চুক্তির আওতায় জ্বালানি, খনি ও খনিজ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি-সহ নানা ক্ষেত্রে যৌথভাবে আর্থিক বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত হবে।
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে সেই বিষয়গুলোর কোনও উল্লেখই নেই। তিনি শুধু তেলের কথাই বলেছেন। আবার পাকিস্তান কোনও নির্দিষ্ট শুল্কের হার বা শতাংশ কমানোর ব্যাপারেও স্পষ্ট করেনি। ফলে, আদৌ শুল্ক কমানো হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: Jagdeep Dhankhar : উপরাষ্ট্রপতির গাড়ি বিতর্ক! ১৭ মাসেও মেলেনি বুলেটপ্রুফ গাড়ি, চলাফেরা ইনোভায়!
ট্রাম্পের প্রচারমূলক চমক? (US Pakistan Trade)
এই পরিপ্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—এটা কি প্রকৃতই কোনও ঐতিহাসিক বাণিজ্যচুক্তি, নাকি ২০২৪ মার্কিন নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের একটি প্রচারমূলক চমক (US Pakistan Trade)? অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও কি এটা আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রমাণের একটি রাজনৈতিক প্রয়াস?

প্রসঙ্গত, অতীতে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির সময় পাকিস্তান ট্রাম্পকে (Donald J. Trump) নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই সময় ট্রাম্প নিজেকে সংঘর্ষ থামানোর মধ্যস্থতাকারী বলে দাবি করেছিলেন। ভারত অবশ্য সেই দাবি কখনওই মানেনি। তাই এবার তেল-বাণিজ্য চুক্তির বিষয়েও দুই দেশের আলাদা ব্যাখ্যায় সংশয় এবং রাজনৈতিক দ্ব্যর্থতা আরও ঘনীভূত হল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।