ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিশ্ব বাণিজ্য-অঙ্গনে ফের একবার চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (US Tariff War)। সদ্য ঘোষিত শুল্কনীতিতে তিনি চিন বাদে বাকি সব দেশের জন্য ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্ক চাপানো স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও এই সিদ্ধান্তে বিশ্ব অর্থনীতিতে সাময়িক স্বস্তি ফিরেছে, অর্থনীতিবিদদের মতে এতে দীর্ঘমেয়াদী কোনো স্থিতিশীলতা আসবে না।
ট্রাম্পের পুরস্কার (US Tariff War)
ট্রাম্পের (Donald Trump) ঘোষণায় বলা হয়েছে, যারা মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেনি, তাদের ‘পুরস্কৃত’ করা হবে (US Tariff War)। তবে চিনের (Xi Jinping) ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান বজায় রাখা হয়েছে। চিনা পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে তা ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা প্রায় ৮৬০ বিলিয়ন ডলারের সমান। এই পদক্ষেপকে অনেকেই একটি নতুন শুল্কযুদ্ধের সূচনা হিসেবে দেখছেন।
মন্দার আশঙ্কা (US Tariff War)
বিশ্বের অন্যতম বড় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক জেপি মর্গ্যান চেজ়-এর মতে, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি (US Tariff War) বিশ্ব অর্থনীতিকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মন্দার মুখে ঠেলে দিতে পারে। সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শুল্কনীতি নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা ও ঘনঘন পরিবর্তন মার্কিন অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শুধু জেপি মর্গ্যানই নয়, আরএসএম ইউএস এবং গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর অর্থনীতিবিদরাও আগামী ১২ মাসে বিশ্বব্যাপী ৪৫-৫০ শতাংশ মন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বিশ্ববাজারে বড় ধাক্কা (US Tariff War)
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের সাময়িক শুল্কস্থগিত সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলেও সেটি মূল সমস্যার সমাধান নয়। এখনও ১০ শতাংশ ‘সর্বজনীন শুল্ক’ বহাল রয়েছে, যা বিশ্ববাজারে বড় ধাক্কা দিতে পারে। ২০১৮-১৯ সালের বাণিজ্য যুদ্ধের তুলনায় এই ধাক্কা ৭.৫ গুণ বেশি হতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।

আরও পড়ুন: Panama Canal :পানামা খালে চিনা প্রভাবের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিল আমেরিকা!
ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ (US Tariff War)
ট্রাম্পের শুল্কনীতি ঘিরে শুধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনেই নয়, আমেরিকার অভ্যন্তরেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে (US Tariff War)। নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি-সহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে। তাঁর ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিত ভারত, ইজরায়েল এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিও তালিকায় থাকার কারণে মার্কিন জনতার মধ্যে অসন্তোষ আরও বেড়েছে।তবে ট্রাম্পের শুল্কস্থগিত ঘোষণার পরেই বিশ্ববাজারে কিছুটা ইতিবাচক সাড়া দেখা গেছে। একটি সংবাদ সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক S&P 500 এবং NASDAQ প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্ভাব্য বাণিজ্য সংকট (US Tariff War)
এই ৯০ দিনের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চালাবে বলে জানানো হয়েছে (US Tariff War)। হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো জানিয়েছেন, যে দেশগুলি ইতিমধ্যে মার্কিন সঙ্গে শুল্ক নিয়ে যোগাযোগ করেছে, তাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা হবে।সব মিলিয়ে বলা যায়, ট্রাম্পের সাময়িক ছাড় বিশ্ব অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও, চিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং সর্বজনীন শুল্ক বহাল থাকার কারণে অনিশ্চয়তা কাটছে না। এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য স্বস্তির বার্তা না দিয়ে, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বাণিজ্য সংকটের ইঙ্গিতই যেন দিয়ে গেল।