ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) ‘পাল্টা শুল্ক’ নীতির (US Tariff War) ঘোষণার পরই বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে এশিয়ার শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে এবং সোনার দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
শেয়ারবাজারে ধস (US Tariff War)
ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই (US Tariff War) এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে পতন শুরু হয়। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং ও তাইওয়ানের বাজারে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে।
- টোকিয়োর নিক্কেই সূচক প্রথমে ৩.৯% পতনের সম্মুখীন হয়, যা পরবর্তীতে কিছুটা পুনরুদ্ধার করে ২.৯% হ্রাস পায়।
- হংকং ও সাংহাইয়ের বাজার যথাক্রমে ১.৫% ও ১.৪% হ্রাস পায়।
- দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারেও বড়সড় প্রভাব পড়ে, কারণ দেশটির ওপর ২৫% পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্কনীতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, যার ফলে তারা দ্রুত তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছেন এবং সোনা বা অন্যান্য নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন।
সোনার দাম বৃদ্ধি (US Tariff War)
ট্রাম্পের ঘোষণার (US Tariff War) পর বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকতে থাকেন, যার ফলে সোনার দাম দ্রুত বেড়ে যায়।
- আউন্সপ্রতি সোনার মূল্য ৩,১৬০ ডলারে পৌঁছেছে, যা একটি রেকর্ড।
- ভারতীয় মুদ্রায় এটি প্রায় ২,৭১,৯৮০ টাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, বাণিজ্যিক উত্তেজনা বাড়লে সাধারণত সোনার দাম বৃদ্ধি পায়, কারণ এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুন: US Tariff War : ‘মুক্তি দিবসে’ পাল্টা আমদানি শুল্ক ঘোষণা ট্রাম্পের! ভারতের উপর চাপলো ২৬ শতাংশ শুল্ক
তেলের বাজারেও প্রভাব (US Tariff War)
শুধু সোনা নয়, অপরিশোধিত তেলের দামও বাড়তে শুরু করেছে (US Tariff War) । ব্রেন্ট ফিউচার্স তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭২.৫৬ ডলারে পৌঁছেছে, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬,২২৫ টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ তেলের সরবরাহ চেইনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ভবিষ্যতে মূল্য আরও বাড়তে পারে।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশ (US Tariff War)
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ‘পাল্টা শুল্ক’ নীতি (US Tariff War) ৬০টিরও বেশি দেশের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
- যুক্তরাজ্যের পণ্যের ওপর ১০% শুল্ক বসানো হয়েছে।
- ভারতের ওপর ২৬% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
- চীনের ওপর ৩৪% শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
- জাপানের ওপর ২৪%, দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৫%, ভিয়েতনামের ওপর ৪৬% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২০% শুল্ক বসানো হয়েছে।
- কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার মুদ্রানীতি এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য প্রবাহকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
ভারতের অবস্থান (US Tariff War)
ভারতের ওপর ২৬% শুল্ক বসানো হয়েছে, যা দেশটির রপ্তানি শিল্পের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। ভারত সরকার পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছে এবং বিকল্প নীতি নির্ধারণের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যদি দ্রুত কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে এটি দেশের বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্যে সংকট
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ নীতি বিশ্ব বাণিজ্যে এক নতুন ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে। এর ফলে শেয়ারবাজারে ধস, সোনার দাম বৃদ্ধি এবং তেলের মূল্য বৃদ্ধির মতো বৈশ্বিক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। আগামী দিনে এই বাণিজ্য যুদ্ধ আরও গভীর হলে তা আন্তর্জাতিক অর্থনীতিকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন এবং বাণিজ্য উত্তেজনা কীভাবে নিরসন করা হয়।