ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ব্রাজিল এবং আমেরিকার মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক সংঘাত আরও তীব্র হল(US Tariff War)।ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিয়ো লুলা দ্য সিলভা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করে কোনও আলোচনায় বসবেন না। তাঁর বক্তব্যে কূটনৈতিক বার্তা স্পষ্ট—“আমি কখনও ট্রাম্পকে ফোন করব না। কারণ, তিনি আলোচনায় আগ্রহী নন।”
এই মন্তব্য সামনে আসে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে, যখন লুলাকে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়। প্রসঙ্গত, ট্রাম্প কিছুদিন আগেই দাবি করেছিলেন যে শুল্ক বিতর্ক মেটাতে লুলা তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন। কিন্তু ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট সেই দাবি প্রকাশ্যে খারিজ করলেন।
কেন বাড়ল এই উত্তেজনা? (US Tariff War)
সম্প্রতি ট্রাম্প (Donald J. Trump) ব্রাজিল থেকে আমেরিকায় রফতানি হওয়া পণ্যের উপর ৫০% শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেছেন(US Tariff War)। এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন চরমে পৌঁছেছে। লুলা এই দিনটিকে বর্ণনা করেছেন—“আমেরিকা-ব্রাজিল সম্পর্কের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক দিন।”
তবে শুধু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ব্রিক্স-ভিত্তিক দেশগুলির সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে বলেন—“আমি শি জিনপিং-কে ফোন করব। মোদীকেও ফোন করব। অনেক বিশ্বনেতাকে ফোন করব।”
এই বক্তব্যকে কূটনৈতিক মহল মনে করছে, আমেরিকার চাপের বিরুদ্ধে ব্রিক্স জোটকে আরও শক্তিশালী করার কৌশল।
উত্তেজনার আরেক কেন্দ্রবিন্দু (US Tariff War)
ভারত, চিন এবং ব্রাজিল—তিনটি দেশই ব্রিক্স জোটের মূল সদস্য(US Tariff War)। সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং ইরানে হামলার বিরুদ্ধে ব্রিক্স সম্মেলনে একসঙ্গে বিবৃতি দেওয়া হয়। যদিও সেই বিবৃতিতে সরাসরি আমেরিকা বা ইজ়রায়েলের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে বার্তা ছিল স্পষ্ট—আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের নীতি প্রত্যাখ্যান।
ঠিক এর পরেই ট্রাম্প ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলিকে শুল্ক বৃদ্ধির হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী—“যে সব দেশ আমেরিকাবিরোধী নীতিকে সমর্থন করবে, তাদের আমেরিকায় রফতানিকৃত পণ্যের উপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক আরোপ করা হবে।”

আরও পড়ুন: Pinaka Missile : আরও শক্তি বাড়লো ‘পিনাকা’-র! খুব শীঘ্রই যুক্ত হতে চলেছে ভারতীয় সেনায়
ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কী? (US Tariff War)
সপ্তাহ খানেক আগে হোয়াইট হাউস থেকে লুলার উদ্দেশে পাঠানো শুল্ক-চিঠিতে ট্রাম্প স্পষ্ট লেখেন যে—
- ব্রাজিলে স্বাধীন নির্বাচনের উপর বারবার আঘাত হানা হচ্ছে।
- আমেরিকানদের বাক্স্বাধীনতার অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
তবে আন্তর্জাতিক মহলের মতে, শুল্ক আরোপের আসল কারণ হল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর বিরুদ্ধে চলা বিচারপ্রক্রিয়া(US Tariff War)। চিঠিতে ট্রাম্প স্পষ্ট লেখেন—“শ্রদ্ধেয় বোলসোনারোর সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। এই বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ হওয়া উচিত।”
এর পাশাপাশি, তিনি আরও দাবি করেন যে ব্রাজিল এবং আমেরিকার মধ্যে ‘অন্যায্য বাণিজ্য ঘাটতি’ তৈরি হয়েছে, যা শুল্ক আরোপের অন্যতম কারণ।

আরও পড়ুন: Khalistani Movement : কানাডায় খালিস্তানি ‘দূতাবাস’ প্রতিষ্ঠা! ভারত-কানাডা সম্পর্কের নতুন করে ভাঙন ?
ভবিষ্যতে কী হতে পারে? (US Tariff War)
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সংকট কেবল বাণিজ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না (US Tariff War)।
- ব্রাজিল যদি শি জিনপিং এবং নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় তৈরি করে, তবে ব্রিক্স জোটের প্রভাব বাড়বে।
- অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন যদি শুল্ক আরও বাড়ায়, তবে দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্যিক বাজারে আমেরিকার প্রভাব কমতে পারে, এবং চীন ও ভারত সেখানে শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে।
- ব্রাজিলের কৃষিপণ্য, ইস্পাত এবং তেল রফতানিতে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব পড়লে বিশ্ববাজারেও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।