ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: উত্তরাখণ্ডে আবারও প্রকৃতির রুদ্ররূপ। মঙ্গলবার দুপুরে আচমকা মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বানে তছনছ হয়ে গেল উত্তরকাশীর ধরালী গ্রাম(Uttarakhand Cloudburst)। ক্ষীরগঙ্গা নদীর ভয়াবহ স্রোতে ভেসে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪ জনের, নিখোঁজ অনেকে। সেনার একটি ছাউনিও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে নিখোঁজ হয়েছেন ১১ জন সেনাকর্মী। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামীর নির্দেশে উদ্ধারকাজে সেনা, পুলিশ ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) নেমেছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। এদিকে বিপর্যয়ের পরে আবারও উঠে এসেছে প্রশ্ন— কেন হয় মেঘভাঙা বৃষ্টি? কেন এত ভয়াবহ হয় এর প্রভাব?
মঙ্গলবারের ঘটনাপ্রবাহ (Uttarakhand Cloudburst)
দুপুর গড়াতেই উত্তরকাশীর আকাশ কালো হয়ে আসে(Uttarakhand Cloudburst)। স্থানীয়দের বয়ান অনুযায়ী, দুপুর ১টা নাগাদ আচমকা শুরু হয় প্রবল বর্ষণ। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র এক ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ১২০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে যায়। এর পরেই ক্ষীরগঙ্গা নদীতে নামে ভয়াবহ হড়পা বান। নদীর জল মুহূর্তে ফুলে ফেঁপে ওঠে। প্রবল স্রোতে ভেসে যায় আশপাশের এলাকা।
ধরালী গ্রামে ধুয়েমুছে যায় একাধিক ঘরবাড়ি। রাস্তা, সেতু সবই মুহূর্তে গায়েব। সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যায় হর্ষিলের সেনাছাউনিতে। জলের তোড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সেনার অস্থায়ী ঘাঁটি। সেনা সূত্রে খবর, অন্তত ১১ জন জওয়ান নিখোঁজ। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। আহতদের হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দেরাদুনের মিলিটারি হাসপাতালে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী জানিয়েছেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমাদের অগ্রাধিকার হল প্রাণ বাঁচানো। সেনা, পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে সর্বশক্তি দিয়ে উদ্ধারকাজ চালাতে বলা হয়েছে।’’ ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলায় এয়ারলিফট করে এনডিআরএফ-এর একাধিক টিমকে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) ধামীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন।
কী এই মেঘভাঙা বৃষ্টি? (Uttarakhand Cloudburst)
অনেকের মনে প্রশ্ন— সাধারণ বর্ষণের সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায়?
সংজ্ঞা অনুযায়ী: ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় এক ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হলে সেটাকে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলা হয়। সাধারণত পাহাড়ি এলাকাতেই বেশি হয়। এই বৃষ্টির পরে পাহাড়ি নদীগুলিতে জলের স্রোত হঠাৎ ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তার সঙ্গে ভূমিধসের আশঙ্কাও থেকে যায়(Uttarakhand Cloudburst)।
কেন হয় মেঘভাঙা বৃষ্টি? (Uttarakhand Cloudburst)
মেঘভাঙা বৃষ্টির নেপথ্যে থাকে মূলত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ।
- যখন অনেকটা উষ্ণ, আর্দ্র বাতাস পাহাড়ের ঢাল বেয়ে দ্রুত উপরে উঠে যায়
- ক্রমে ঠান্ডা হয়ে জলীয়বাষ্প মেঘে পরিণত হয়
- মেঘ আর জলীয়বাষ্প ধরে রাখতে না পেরে হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে নামে
এই প্রক্রিয়াকে ‘অরোগ্রাফিক লিফট’ বলা হয়। এই অবস্থায় কয়েক মিনিটেই নামতে পারে প্রবল বর্ষণ। এর পরেই শুরু হয় হড়পা বান— পাহাড়ি নদীতে হঠাৎ জল বৃদ্ধি পেয়ে প্রবল বেগে নিচে নামে।

কেন বেশি ঘটে হিমালয় অঞ্চলে? (Uttarakhand Cloudburst)
হিমালয়ের পাদদেশের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিরূপ, তাপমাত্রার তারতম্য ও বায়ুপ্রবাহের কারণে মেঘভাঙা বৃষ্টি বেশি হয়। উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, সিকিমে প্রায়ই এরকম বিপর্যয় ঘটে। আবহাওয়া দফতর কখনও কখনও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়, কিন্তু ঠিক কোন এলাকায় কতটা বৃষ্টি হবে, তা আগে থেকে বলা কঠিন।
বিশেষজ্ঞের মতামত (Uttarakhand Cloudburst)
দেহরাদুনের আবহাওয়াবিদ ড. অনুরাগ ত্যাগী বলেন,“হিমালয়ের ঢালে উষ্ণ ও শীতল বাতাসের মিশ্রণে মেঘভাঙা বৃষ্টি তৈরি হয়। এই ধরনের বৃষ্টি অনুমান করা অত্যন্ত কঠিন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত দশকে এর প্রকোপ আরও বেড়েছে। ২০১৩ সালের কেদারনাথ বিপর্যয়ের পর আমরা দেখছি, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ক্রমশ বাড়ছে।”
আরও পড়ুন: Blast in Mohali : মোহালির অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, কেঁপে ওঠে ২ কিমি পর্যন্ত এলাকা
ইতিহাসে মেঘভাঙা বৃষ্টির ভয়াবহতা (Uttarakhand Cloudburst)
- ২০১৩: কেদারনাথে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মৃত্যু হয় প্রায় ৪০০০ মানুষের
- ২০২১: জোশীমঠে ভয়াবহ ভূমিধস ও বন্যা
- ২০২৪: জুন মাসে হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডে একাধিকবার মেঘভাঙা বৃষ্টি, ক্ষতি কয়েকশো কোটি টাকার
বর্তমান পরিস্থিতি (Uttarakhand Cloudburst)
- মৃত ৪
- নিখোঁজ ১১ সেনাকর্মীসহ একাধিক মানুষ
- ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রাম ধরালী, আশপাশের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত
- সেনা, NDRF উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে, এয়ারলিফট করে বিশেষ দল আনা হয়েছে
- বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছে অন্য জেলাগুলিতেও
সরকারের বার্তা (Uttarakhand Cloudburst)
মুখ্যমন্ত্রী ধামী বলেছেন,“আমরা প্রতিটি জীবনের জন্য লড়াই করছি(Uttarakhand Cloudburst)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইট করে জানিয়েছেন,“উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বিপর্যয় নিয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। উদ্ধারকাজে সবরকম সহায়তা দেওয়া হবে।”