ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ফ্রান্সিস (Next Pope) বয়সের প্রোফাইল কমাতে এবং কার্ডিনাল কলেজের বিস্তার বিস্তৃত করতে চেয়েছিলেন এবং বেশিরভাগের জন্যই এটি তাদের প্রথম সম্মেলন।
কনজারভেটিভ বনাম প্রগ্রেসিভ সংঘর্ষ (Next Pope)
রোমান ক্যাথলিক গির্জার ভবিষ্যৎ ঠিক করতে আসন্ন দিনে রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল কার্ডিনালরা আরও তৎপর হতে চলেছেন (Next Pope)। প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ক্যাথলিকদের নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য ১৩৫ জন কার্ডিনাল সিস্টিন চ্যাপেলে গিয়ে আলাদা থাকবেন এবং ভোট দেবেন।
এবার ভোটদানে যোগ দিতে চলা কার্ডিনালদের অধিকাংশেরই আগে কোনও পোপ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। পাশাপাশি কার্ডিনালদের ভৌগোলিক বিস্তৃতিও এবার অনেক বেশি, যা নির্বাচনকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। গত ১২ বছরে পোপ ফ্রান্সিসই ভোটের উপযোগী ৮০ শতাংশ কার্ডিনাল নিয়োগ করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরেই ২০ জন নতুন কার্ডিনাল হয়েছেন। এদের অনেকেই একে অপরকে চিনতেন না, পোপের মৃত্যুর পরে রোমে এসে প্রথম দেখা হয়েছে।
ভ্যাটিকানের করিডরে বাড়ছে গোপন লবি (Next Pope)
পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া আগামী সপ্তাহে শুরু হতে পারে (Next Pope)। তবে ইতিমধ্যেই ভ্যাটিকানের করিডর, ডাইনিং রুম আর বাগানে গোপনে আলোচনা ও লবিং বাড়ছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাথলিক চার্চ বিশেষজ্ঞ মাইলস প্যাটেন্ডেন বলেন, “আসলে এই আলাপচারিতা সম্ভবত বছরের শুরু থেকেই চলছিল, কারণ পোপ ফ্রান্সিসের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল।”
আরও পড়ুন: Vancouver Festival: কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে উৎসবে গাড়ি চাপা, নিহত ও আহত বহু, আতঙ্ক ছড়াল শহরে
ভ্যাটিকান পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০ জনেরও বেশি কার্ডিনালকে পাপাবিলে অর্থাৎ পোপ হওয়ার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ধরা হচ্ছে (Next Pope)। তবে ইতিহাস বলছে, প্রাথমিকভাবে যারা এগিয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত তারাই নির্বাচিত হয় না। ২০১৩ সালে জর্জ মারিও বার্গোগলিও (বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস) প্রথম দিকে পাপাবিলে ছিলেন না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিই নির্বাচিত হন।
কনজারভেটিভ ও প্রগ্রেসিভ শিবিরের সংঘাত (Next Pope)
অনেক কার্ডিনাল যাঁরা নিজেরা পোপ হতে চান না, তাঁরাও তাঁদের পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থন করতে সক্রিয় হচ্ছেন, বিশেষ করে নবাগতদের মধ্যে। রক্ষণশীল পন্থার পক্ষে লবিং করছেন আমেরিকান বিশপ রেমন্ড বার্ক এবং জার্মান কার্ডিনাল গারহার্ড মুলার। মুলার সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, যদি কড়া নীতির পোপ নির্বাচিত না হন, তাহলে গির্জা বিভক্ত হতে পারে।
প্রগতিশীল শিবিরে রয়েছেন লুক্সেমবার্গের জাঁ-ক্লদ হলেরিখ, যুক্তরাজ্যের টিমোথি র্যাডক্লিফ এবং কানাডার মাইকেল চের্নি।
অনেকেই পোপ ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তিনি নিজের সমর্থকদের বেশি করে কার্ডিনাল করেছেন। তবে মাইলস প্যাটেন্ডেন বলেন, “ইতিহাসে কোনো পোপই তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি।” তিনি আরও বলেন, কার্ডিনালদের মধ্যে পরিষ্কার করে রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল বিভাজন থাকলেও, আসলে একটা “স্পেকট্রাম” রয়েছে। কেউ কেউ সামাজিক ইস্যুতে রক্ষণশীল, আবার পরিবেশ বা অন্য ইস্যুতে উদারপন্থী।
কার্ডিনালদের গঠনে বৈচিত্র্য আনলেন ফ্রান্সিস
পোপ ফ্রান্সিস চেষ্টা করেছেন যাতে কার্ডিনালদের মধ্যে বৈচিত্র্য আসে। ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকার প্রভাব কমাতে তিনি ইরান, আলজেরিয়া, মঙ্গোলিয়ার মতো ছোট ক্যাথলিক সম্প্রদায় থেকে কার্ডিনাল নিয়োগ করেছেন। ২০১৩ সালে ভোটদানে উপযুক্ত কার্ডিনালের অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন ইউরোপীয়। এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশে। এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকা থেকে ১৮ শতাংশ করে এবং সাব-সাহারা আফ্রিকা থেকে ১২ শতাংশ কার্ডিনাল আছেন। পোপ ফ্রান্সিস কার্ডিনালদের গড় বয়সও কমাতে চেয়েছিলেন। গত ডিসেম্বরে নিয়োগপ্রাপ্ত সাতজনের বয়স ছিল ৬০-এর নিচে। মেলবোর্নের ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত বিশপ মাইকোলা বাইচকের বয়স মাত্র ৪৪।
আরও পড়ুন:
কবে জানা যাবে নতুন পোপের নাম
কনক্লেভ শুরু হওয়ার পর দ্রুতই প্রথম ভোট হবে। প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ভোট হবে, যতক্ষণ না কোনো প্রার্থী দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। মাইলস প্যাটেন্ডেন বলেন, “কার্ডিনালদের ওপর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ থাকবে। পুরো বিশ্বের নজর তাঁদের ওপর। জুন বা জুলাই মাসেও যদি কনক্লেভ চলতে থাকে, তাহলে ক্যাথলিক অনুগামীরা অস্বস্তি বোধ করতে পারেন।” গত একশো বছরে বেশিরভাগ কনক্লেভ দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই শেষ হয়েছে। সবচেয়ে দীর্ঘ কনক্লেভ হয়েছিল ১৩শ শতকে, যা চলেছিল দুই বছর নয় মাস। আর সবচেয়ে ছোটটি হয়েছিল ১৫০৩ সালে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল।
কে হতে পারেন পরবর্তী পোপ
বুকিদের মতে, পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি হিসেবে এগিয়ে আছেন ভ্যাটিকানের প্রধান কূটনীতিক পিয়েত্রো পারোলিন এবং ফিলিপিনো কার্ডিনাল লুইস আন্তোনিও টাগলে। এবারের কনক্লেভের ফলাফল নিয়ে জুয়ার বাজার তুঙ্গে। নটিংহ্যাম বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক লাইটন ভন উইলিয়ামস বলেন, “রেনেসাঁ যুগের রোমান ব্যাঙ্কার ও দরবারিদের সময়ের খেলা এখন বিশ্বের কোটি টাকার বাজারে পরিণত হয়েছে, যেখানে একটা ক্লিক বা ক্রিপ্টো ওয়ালেটের টোকায় বাজি ধরা যায়।”
তিনি বলেন, এ বছরের বাজির গতির সঙ্গে পোপ নির্বাচন নিয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক আগ্রহের গভীরতা স্পষ্ট হয়েছে, যা মিডিয়া ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির মাধ্যমেও আরও বেড়েছে।