ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: “তারা জানেনা প্রতি ডিসেম্বরে/উষ্ণতা খোঁজে বিকেলের ট্রাম/জানি আলোয় ভিজবে চেনা পার্কস্ট্রিট/তবু ট্যাক্সি ধরবে তুমি এয়ারপোর্ট” ট্রাম-হলুদ ট্যাক্সি (Yellow Taxi)! এগুলোই আমাদের এই-শহর কলকাতার নস্টালজিয়া। ট্রামের পর এবার কী হারাবে কলকাতার ‘আইকনিক কার হলুদ ট্যাক্সি’?
কলকাতার সঙ্গে জড়িয়ে ট্যাক্সি (Yellow Taxi)
ইংরেজিতে লেখা ট্যাক্সির নাম্বার ‘৮০০৮’ কে ‘৪০০৪’ ভেবে ভুল করেছিল ‘পুটিরাম’। অবশেষে সেই সূত্রেই সমাধান হয়েছিল ১৯৩৫ সালে লেখা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উপসংহার’ গল্পের। এর প্রায় ৩৫ বছর পর, ১৯৭০ এ সত্যজিৎ রায় লিখেছিলে, ফেলুদা কাহিনী ‘শেয়াল দেবতা রহস্য’। সেখানেও শুরু থেকে শেষ জড়িয়ে রয়েছে কলকাতার ‘ট্যাক্সি’। এমনকি এই গল্পের ক্ল্যাইম্যাক্সে ভিলেনকে তাড়া করার ঘটনাও ছিল ‘ট্যাক্সি’ তে। এভাবেই কলকাতার সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে জড়িয়ে রয়েছে কলকাতার ‘নস্টালজিয়া হলুদ ট্যাক্সি’ (Yellow Taxi)। এবার কী কলকাতার সেই ‘আইকনিক কার হলুদ ট্যাক্সি’ হারিয়ে যাবে কলকাতার রাস্তা থেকে?
বছরের শেষে চলে যাবে ট্যাক্সি (Yellow Taxi)
কেননা এবছরের শেষে এবং আগামী বছরের শুরুতেই এ শহরের রাস্তা ছেড়ে চলে যাবে আড়াই হাজার হলুদ ট্যাক্সি।কিন্তু ঠিক কী কারণে কলকাতার রাস্তা ছেড়ে দিতে হচ্ছে এই হলুদ ট্যাক্সি গুলোকে (Yellow Taxi)? মোটর ভেহিকল অ্যাক্ট-অনুযায়ী কোনো যানবাহনই ১৫ বছরের বেশি রাস্তায় চলতে পারবে না। আর সেই আইনের জন্যই কলকাতার রাস্তা ছেড়ে যাচ্ছে আড়াই হাজার হলুদ ট্যাক্সি। কলকাতা শহরের রাস্তায় এই পুরোনো হলুদ ট্যাক্সি চালানোর মেয়াদ বৃদ্ধি করার দাবি করলেও দুষণের কথা মাথায় রেখে পরিবহন দপ্তর তা মেনে নেয়নি।
আরও পড়ুন: Hooghly Robber-Cops Clash: পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা! আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেফতার ২
কেন কমছে ট্যাক্সি?
কলকাতা শহরে এখন প্রায় ছয় হাজার হলুদ ট্যাক্সি চলে। কয়েক বছরের আগেও সংখ্যাটা ছিল প্রায় তিন গুণ। এবছরের শেষে তা আরও কমে যাবে। কিন্তু কেন দ্রুত কমছে এই শহরের আইকন হলুদ ট্যাক্সি? আসলে ২০১৪ সালে হলুদ অ্যাম্বাসেডর নির্মাতা কোম্পানি ‘হিন্দ মোটর্স’ বন্ধ করে দেয় হলুদ ট্যাক্সির উৎপাদন। এজন্য বয়সের ভারে পথ ছাড়তে হলেও নতুন করে পথে ফিরে আসতে পারছে না হলুদ ট্যাক্সি। তাহলে কী আমাদের কলকাতা শহরের নস্টালজিয়া ‘হলুদ ট্যাক্সি’ ঐতিহ্য থেকে ইতিহাস হয়ে যাবে?
ট্যাক্সির ইতিহাস
কলকাতা শহরে ‘ট্যাক্সি’ চলতে শুরু করে ১৯০৯ সাল থেকে। এখন চৌরঙ্গী রোডের যেখানে ফ্র্যাঙ্ক রস কোম্পানির ওষুধের দোকান রয়েছে সেখানেই ছিল ফরাসি শেভিজাঁ কোম্পানির অফিস। তারাই কলকাতার পথে প্রথম ‘ট্যাক্সি’ চালানো শুরু করেছিল। যে ট্যাক্সির রঙ ছিল ‘লাল’।
কবে এল হলুদ ট্যাক্সি?
তবে কলকাতার রাস্তায় ‘হলুদ ট্যাক্সি’ চলা শুরু হয় ১৯৫৭ সাল থেকে। কলকাতায় ‘হিন্দ মোটর্স প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি’ প্রথম উৎপাদন শুরু করেছিল এই সাদামাটা হলুদ অ্যাম্বাসেডর গাড়ি। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এই হলুদ ট্যাক্সির। এজন্য পুরোনো গাড়িগুলো বয়সের ভারে একে একে শহর কলকাতার রাস্তা ছাড়লেও শহরের রাস্তায় আর ফিরে আসতে পারছে না নতুন ‘হলুদ ট্যাক্সি’।
আরও পড়ুন: Weather Update: কবে স্পর্শ হবে শীতের চুম্বন? বড় খবর দিল হাওয়া অফিস
মানতে পারছেনা মানুষ
শহরের পথে ‘হলুদ ট্যাক্সি’ আর দেখা যাবে না, সেটা মেনে নিতে পারছেন না নস্টালজিক শহরবাসী। যেসব হলুদ ট্যাক্সি আর শহরের রাস্তায় চলতে পারবে না তার সঙ্গে জরিয়ে রয়েছে বহু মানুষের জীবন জীবিকা! এইসব কথা মাথায় রেখেই নতুন ভাবে আবারও হলুদ ট্যাক্সি চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে পরিবহণ দপ্তর। হলুদ ট্যাক্সির বদলে এবার কলকাতার রাস্তায় ছুটবে হলুদ ক্যাব।
পথে এবার হলুদ ক্যাব?
কলকাতার আইকনিক গাড়ি হলুদ ট্যাক্সির শহর কলকাতায় বাঁচিয়ে রাখতেই কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি সংগঠনগুলিকে নিয়ে তৈরি হলো ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট ফোরাম অফ ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন। হলুদ ট্যাক্সির বদলে ‘হলুদ ক্যাব’ চালানো কথাও বলা হয়েছে। কলকাতার আইকনিক গাড়ি হলুদ ট্যাক্সিকে বাচিয়ে রাখতে চায় পরিবহন দপ্তর। আগামী বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনে নতুন ভাবে হলুদ ট্যাক্সি চালানো নিয়ে বড় কোনও ঘোষণা করতে পারে রাজ্যের পরিবহন দপ্তর। শহর কলকাতার ‘হেরিটেজ কার’ হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে রয়েছে অনেক অভিযোগ। ট্যাক্সি ড্রাইভাররা প্রায়ই প্রত্যাক্ষান করে যাত্রীদের। এতেও হলুদ ট্যাক্সির সঙ্গে কলকাতাবাসীর যে সফট কর্ণার রয়েছে তা একটুও কমেনি।