ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন নেতানিয়াহু (Netanyahu-Trump Meeting)। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। আলোচনার মূল বিষয় গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি এবং ইরান-সংক্রান্ত ইস্যু। সংবাদ সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে এই বৈঠক হওয়ার কথা।
এই বৈঠক এমন এক সময় হচ্ছে, যখন ইজরায়েল ও ইরান-সমর্থিত হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা চলছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান (Netanyahu-Trump Meeting)
বৈঠকের আগে ট্রাম্প জানান, মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ইজরায়েলসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি (Netanyahu-Trump Meeting)। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, যুদ্ধবিরতি অবিশ্বাস্যভাবে অনিশ্চিত। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি গ্যারান্টি দিতে পারছি না যে শান্তি বজায় থাকবে।”
মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ, যিনি সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করেছেন, তিনিও বলেন, “আমরা অবশ্যই আশাবাদী।” কাতারে আলোচনা করতে যাচ্ছে ইজরায়েলি প্রতিনিধিদল
নেতানিয়াহুর দফতর মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে, একটি ইজরায়েলি প্রতিনিধিদল এই সপ্তাহের শেষে কাতার যাবে। সেখানে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে টেকনিক্যাল আলোচনা হবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “চুক্তির বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার টেকনিকাল বিষয়ের তথ্য নিয়ে আলোচনা হবে।”
চাপের মুখে নেতানিয়াহু (Netanyahu-Trump Meeting)
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির কৃতিত্ব তার (Netanyahu-Trump Meeting)। তিনি ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
চুক্তির প্রথম পর্বে হামাস ১৮ জন বন্দি মুক্তি দিয়েছে এবং ইজরায়েল গাজায় হামলা বন্ধ করেছে। পাশাপাশি ইজরায়েল কয়েকশো প্যালেস্তিনীয় বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
কিন্তু পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নেতানিয়াহুর চরম ডানপন্থী জোটসঙ্গীরা যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। অন্যদিকে, ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে নেতানিয়াহুর উপর চাপ দিতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
ইজরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ
ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহু ইজরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চান (Netanyahu-Trump Meeting)। তারা ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সৌদি আরবকে নতুন আঞ্চলিক কাঠামোর মধ্যে আনতে চান। কিন্তু নেতানিয়াহুর প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্র গঠনের ঘোর বিরোধিতা এই প্রক্রিয়ার বড় বাধা।
তিনি সফরের আগের দিন বলেছেন যে, তিনি এই বৈঠকের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পুনর্গঠনের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে চান। সৌদি আরব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শেষ না হলে এবং প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি না হলে তারা অংশ নেবে না।
আরও পড়ুন: US-China Tariff War: চীন-আমেরিকা বাণিজ্যযুদ্ধে নতুন মোড়, ট্রাম্পের শুল্কের পাল্টা জবাব বেজিং-এর
ট্রাম্পের অবস্থান: ইজরায়েলকে সমর্থন, প্যালেস্তিনীয়দের স্থানান্তরের প্রস্তাব
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন আরও বাড়িয়েছেন। তিনি ২,০০০ পাউন্ড ওজনের বোমার সরবরাহ পুনরায় শুরু করেছেন। তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন যে প্যালেস্তিনীয়দের গাজা থেকে মিশর ও জর্ডানে সরিয়ে দেওয়া উচিত। তবে মনে করা হচ্ছে যে ইরান ইস্যু থাকবে তার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
ট্রাম্পের ইরান নীতি ও নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ
ট্রাম্প তার প্রথম দফার প্রেসিডেন্সির সময় ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। তিনি আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নেন। কিন্তু এই প্রশাসনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে নেতানিয়াহুর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার জন্য ট্রাম্পের ধৈর্য সীমিত হতে পারে।
মার্কিন বিদেশ দফতরের প্রাক্তন সহকারী সচিব মীরা রেজনিক বলেন, “যদি নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক সংকট এই প্রশাসনের বৃহত্তর লক্ষ্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে ট্রাম্প তার প্রতি সহানুভূতি দেখাবেন না।”
তিনি আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্বের শুরুতে বলেছিলেন যে, তিনি ২০ জানুয়ারির মধ্যে যুদ্ধবিরতি চান। তিনি তা পেয়েছেন। এখন এটি তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি এর কৃতিত্ব নিতে চান।”
কী হবে ভবিষ্যৎ
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের এই বৈঠক গাজা যুদ্ধবিরতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। যদিও নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রক্ষায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন, কিন্তু ট্রাম্প চাইছেন এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হোক।
ফলাফল কী হবে?
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি টিকবে নাকি ভেঙে পড়বে? ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে চাপে রাখতে পারবেন? সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে? ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও ইজরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নির্ভর করবে মঙ্গলবারের বৈঠকের ফলাফলের উপর।