ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: এই অনুষ্ঠানে রাজনাথ সিং বলেন, ‘IOS SAGAR সামুদ্রিক ক্ষেত্রে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং যৌথ নিরাপত্তার প্রতি ভারতের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। ভারতীয় নৌবাহিনী নিশ্চিত করে যে IOR-তে কোনও দেশই অপ্রতিরোধ্য অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তির ভিত্তিতে অন্য কোনও দেশকে দমন না করে।’
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল IOR-কে ভ্রাতৃত্ব এবং ভাগাভাগি স্বার্থের প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা।” RM প্রকল্প সিবার্ডের অধীনে নির্মিত ২,০০০ কোটি টাকার আধুনিক অপারেশনাল, মেরামত এবং লজিস্টিক সুবিধারও উদ্বোধন করেছেন।
রক্ষা মন্ত্রীর পতাকা দেখিয়ে যাত্রা শুরু ‘IOS SAGAR’
৫ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, কর্ণাটকের কারওয়ার নৌঘাঁটি থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল INS সুনয়না-কে ‘ইন্ডিয়ান ওশান শিপ (IOS) SAGAR’ মিশনে পতাকা দেখিয়ে যাত্রা করালেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (IOS SAGAR)। একই দিনে তিনি ২০০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ‘প্রজেক্ট সিবার্ড’-এর অধীনে নির্মিত আধুনিক অপারেশনাল, মেরামতি ও লজিস্টিক সুবিধার উদ্বোধন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষা স্টাফের প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠী, প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
IOS SAGAR: বন্ধুত্ব ও নিরাপত্তার মিশন
এই বিশেষ মিশনে INS সুনয়না-তে থাকছেন নয়টি বন্ধুদেশের (কমোরোস, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, সিশেলস, শ্রীলঙ্কা ও তানজানিয়া) ৪৪ জন নৌসেনা (IOS SAGAR)। এই উদ্যোগ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমবায়ের ভিত্তিতে নিরাপত্তা ও উন্নয়নের প্রতি ভারতের অঙ্গীকারের বড় প্রতিফলন।
রক্ষা মন্ত্রী বলেন, এই মিশন ভারতের শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সমবায় নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি। তিনি জানান, ভারত শুধু নিজের নিরাপত্তার জন্য নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সমান অধিকার ও দায়িত্ব রক্ষার জন্যও কাজ করে। তিনি বলেন, “ভারতীয় নৌবাহিনী নিশ্চিত করে যেন কোনও দেশ নিজেদের অর্থনৈতিক বা সামরিক শক্তির জোরে অন্য কোনও দেশকে দমন না করে। আমরা সবাইকে সমান মর্যাদা দিই।”
জলদস্যু দমনে ভারতীয় নৌবাহিনীর অগ্রণী ভূমিকা
রাজনাথ সিং জানান, জলদস্যু বা জাহাজ ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার সময় ভারতীয় নৌবাহিনীই প্রথম সাড়া দেওয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে। শুধু ভারতীয় নয়, অন্যান্য দেশের জাহাজের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেছে। “স্বাধীনভাবে চলাচল, নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা, জলদস্যু দমন ও ভারত মহাসাগরে শান্তি রক্ষা আমাদের প্রধান লক্ষ্য,” তিনি বলেন।
আরও পড়ুন: Narendra Modi : ২০২৯ সালের আগেই প্রধানমন্ত্রীর মুখ পরিবর্তন ! মোদীর বিকল্প কে ?
তিনি আরও জানান, ভারতীয় নৌবাহিনী অত্যাধুনিক জাহাজ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নাবিকদের নিয়ে আঞ্চলিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে শান্তি ও উন্নয়নের প্রতীক করে তুলতে চায়।
SAGAR থেকে MAHASAGAR: দিগন্তের বিস্তার
এই পতাকা প্রদর্শন ‘SAGAR’ (Security and Growth for All in the Region) উদ্যোগের ১০ বছর পূর্তি ও জাতীয় সামুদ্রিক দিবস উপলক্ষে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নতুন উদ্যোগ ‘MAHASAGAR’ (Mutual and Holistic Advancement for Security and Growth Across Regions)-এর কথাও উল্লেখ করেন রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, “SAGAR থেকে MAHASAGAR-এ রূপান্তর এক নতুন দিগন্তের সূচনা। এই মুহূর্তে IOS SAGAR যাত্রার সূচনা হওয়া নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯১৯ সালের এই দিনেই ভারতের প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ SS Loyalty মুম্বই থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তেই ভারতের পক্ষ থেকে আবারও আঞ্চলিক সহযোগিতায় নেতৃত্ব নেওয়ার বার্তা দেওয়া হল, বলেন তিনি।
IOS SAGAR: সহযোগিতার নতুন মডেল
এই মিশনের মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশের নৌবাহিনীগুলোর সম্পর্ক আরও গভীর হবে। INS সুনয়না সফরের সময় দার-এস-সালাম, নাকালা, পোর্ট লুইস এবং পোর্ট ভিক্টোরিয়া বন্দরে যাবে। অংশগ্রহণকারী নাবিকরা কোচির বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ব্যবহার করে ফায়ারফাইটিং, ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ, সার্চ-অপারেশন, ইঞ্জিন রুম ম্যানেজমেন্ট, বোট হ্যান্ডলিং প্রভৃতি বিষয়ে যৌথ অনুশীলনে অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন: Madhya Pradesh: ব্রিটিশ চিকিৎসকের নাম ভাঁড়িয়ে ভুল চিকিৎসা, অস্ত্রোপচারের জেরে মৃত ৭
এই মিশন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সহযোগিতার রূপরেখা তৈরি করবে, এবং ভারত তার আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক দায়িত্ব ও নেতৃত্ব আরও একবার প্রমাণ করবে।
প্রজেক্ট সিবার্ড: আত্মনির্ভর ভারত গঠনে নতুন পদক্ষেপ
প্রজেক্ট সিবার্ডের অধীনে তৈরি নতুন পরিকাঠামোতে রয়েছে জাহাজ ও সাবমেরিনের জন্য জেটি, অস্ত্র লোড করার ডক, রিফিটের জন্য দুটি পৃথক পিয়ার, ৪৮০টি আবাসন ইউনিট, ২৫ কিমি রাস্তা, ১২ কিমি ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাধার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র ও নিরাপত্তা টাওয়ার। ৯০ শতাংশ সামগ্রী এবং যন্ত্রপাতি ভারতীয় উৎস থেকে সংগৃহীত, যা আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের অন্যতম উদাহরণ।
এই পরিকাঠামো পশ্চিম উপকূলে নৌবাহিনীর কার্যক্ষমতা বাড়াবে, এবং উত্তর কন্নড় অঞ্চলের স্থানীয় অর্থনীতি ও শিল্পোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।