ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বালোচিস্তানে আবার উত্তাল পরিস্থিতি। আন্তর্জাতিক মহলে বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠার পরে এবার স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি’ (BLA) সরাসরি পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র’ হিসাবে ঘোষণা করার দাবি তুলেছে (Balochistan Liberation Army)। শুধু তাই নয়, ইসলামাবাদকে অভিযুক্ত করেছে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টার জন্য। BLA-র তরফে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি তারা পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ও সামরিক পরিকাঠামোর উপর ৫১টি স্থানে মোট ৭১টি পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। এই হামলাগুলি তারা চালিয়েছে তথাকথিত ‘অপারেশন হেরোফ’-এর অংশ হিসাবে।
বেদনার নাম বালোচিস্তান (Balochistan Liberation Army)
১৯৪৭ সালের ১১ আগস্ট ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্ত হয় দেশীয় রাজ্য কালাত(Balochistan Liberation Army)। এক দিন পর ১২ আগস্ট, শাসক মির সুলেমান দাউদ ঘোষণা করেন বালোচিস্তানের স্বাধীনতা। কিন্তু সেই স্বপ্নের আয়ু মাত্র সাত মাস—১৯৪৮ সালের ২৭ মার্চ, পাকিস্তানি সেনার চাপে কালাতকে জোর করে অন্তর্ভুক্ত করা হয় পাকিস্তানে। সেই দিনই বালোচদের কাছে রচিত হয় তাদের “পরাধীনতা দিবস”।গত সাত দশক ধরে এই অঞ্চল পাকিস্তানের দমননীতি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং পরিকল্পিত শোষণের শিকার। হাজার হাজার বালোচ নাগরিক “নিখোঁজ” হয়েছেন, যাঁদের ভাগ্য আজও অজানা।
নতুন জোট, নতুন লড়াই (Balochistan Liberation Army)
২০২৫-এর মার্চে এক ঐতিহাসিক মোড় নেয় বালোচ বিদ্রোহ। তিনটি প্রধান সশস্ত্র সংগঠন—
বালোচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (BLF)
বালোচ রিপাবলিকান গার্ডস (BRG)
সিন্ধুদেশ রেভলিউশনারি আর্মি (SRA)
এরা প্রত্যেকে মিলে BLA-র নেতৃত্বে গঠন করে নতুন যৌথ ফ্রন্ট(Balochistan Liberation Army)। এই ফ্রন্টে একত্র হয়েছে তিনটি প্রধান বালোচ গোষ্ঠী—মারি, মেঙ্গল ও বুগতিরা। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবার একসঙ্গে লড়ছে এতগুলি বালোচ বিদ্রোহী দল।ইসলামাবাদের দাবি, এই ঐক্যের নেপথ্যে রয়েছে ভারতের গোপন সমর্থন। যদিও ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে এর সত্যতা স্বীকার করা হয়নি।

আরও পড়ুন: India Pakistan Ceasefire : সিন্ধু জলচুক্তি না মিটলে যুদ্ধবিরতির উপর প্রহার, বললেন পাক বিদেশ মন্ত্রী
উন্নয়নের নামে নিপীড়ন(Balochistan Liberation Army)
চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC) বালোচ বিদ্রোহের অন্যতম আগুনের স্ফুলিঙ্গ(Balochistan Liberation Army)। এই ১,৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ করিডর শিনজিয়াং থেকে শুরু হয়ে গ্বদর বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত। বিদ্রোহীদের অভিযোগ—এই রাস্তাই এখন লুটের সোজাসাপ্টা পথ। বালোচিস্তানের খনিজ, গ্যাস, মাছ, জল—সব কিছুর উপর অধিকার বিস্তার করছে চিন এবং পাকিস্তান সরকার। এমনকি গ্বদর উপকূলের মৎস্যজীবীদের পর্যন্ত বাধা দেওয়া হচ্ছে সমুদ্রে মাছ ধরতে—এমন বিস্ফোরক অভিযোগও উঠেছে।

আরও পড়ুন: Step Son of Dilip Ghosh Die : রহস্যজনক মৃত্যু দিলীপ ঘোষের স্ত্রীর একমাত্র পুত্র সৃঞ্জয় দাশগুপ্তের!
আন্তর্জাতিক স্তরে সাপোর্ট খোঁজার প্রয়াস(Balochistan Liberation Army)
রাষ্ট্রপুঞ্জ সম্প্রতি বালোচিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে। তবে BLA-র মতো সংগঠন আরও চাইছে—বিশ্ব মঞ্চে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক’ রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। এক সময় ‘বালোচিস্তানের গান্ধী’ নামে পরিচিত নেতা আবদুল কাদির বালোচ দিল্লিতে এসে সরাসরি দাবি জানিয়েছিলেন, “যেমন ১৯৭১-এ ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তেমনই এবার পাশে থাকুক বালোচিস্তানের।”
ভারতের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ চিত্র(Balochistan Liberation Army)
পাকিস্তানে চলতি সময়েই ভারত (Narendra Modi) চালিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’, ধ্বংস করেছে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি(Balochistan Liberation Army)। এরপর BLA পরিষ্কার বলেছে—“পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত আমাদের পাশে রয়েছে।” এই বক্তব্যে বালোচদের ভারতমুখী আকাঙ্ক্ষা যেমন স্পষ্ট, তেমনই জোরালো হচ্ছে আন্তর্জাতিক চাপও। BLA-র সদ্য আক্রমণ, আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের ভাবমূর্তির পতন, আর ভারতের কৌশলগত সক্রিয়তা—সব মিলে বালোচিস্তানের ভবিষ্যৎ লড়াই এক নতুন চেহারা নিচ্ছে।