ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। বঙ্গোপসাগরে শক্তি বাড়িয়ে বাংলা-ওড়িশায় তাণ্ডবের আশঙ্কা। অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আছরে পড়তে পারে ওড়িশায় বালাশ্বরের কাছে। শুক্রবার সকালের মধ্যে ল্যান্ডফলের সম্ভাবনা। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে দূর্যোগের আশঙ্কা বাংলার উপকূলীয় এলাকায়। অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। ভারী বৃষ্টি পূর্বাভাস কলকাতা সহ উত্তর ২৪ পরগনা ও পশ্চিম মেদিনীপুরে।
মঙ্গলবারই বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। বুধবার জন্ম নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। ক্রমশ এগোচ্ছে স্থলভাগের দিকে। হাওয়া অফিস জানিয়ে দিল, ২৪ তারিখ ভোরেই তা উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকারে পরিণত হবে। তারপর পুরী এবং সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারা দিয়ে স্থলভাগে ঢুকবে। উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় ঝড়ের গতিবেগ পৌঁছবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটারে।
আরও পড়ুন: দীপাবলির আগেই রাজ্যে দুর্যোগের আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ নিয়ে আগাম সতর্ক প্রশাসন
ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলে। সকাল থেকে মেঘলা আকাশ থাকলেও বেলা বাড়তেই উপকূলে বৃষ্টি শুরু। কলকাতা সহ উপকূল লাগোয়া জেলাগুলি যেমন উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে মুশলধারে বৃষ্টি শুরু। দুর্যোগের আশঙ্কায় শুরু হয়ে গিয়েছে আগাম প্রস্তুতি। পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সতর্কতা নিয়েছে প্রশাসন। সোমবার থেকেই প্রশাসনের তরফে মাইকিং শুরু হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, বকখালি-সহ বিভিন্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে। তৈরি রয়েছে কন্ট্রোল রুমও। দুর্যোগ মোকাবিলায় সবরকমভাবে প্রস্তুত প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিমুখ ওড়িশার অভিমুখে হলেও তার অভিঘাত বাংলায় আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দানার প্রভাবে ইতিমধ্যেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি শুরু হয়েছে কলকাতা সহ উপকূলের জেলাগুলিতে। বৃহস্পতি পরিস্থিতি হতে পারে আরও ভয়ঙ্কর। সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আগাম সতর্ক প্রশাসন। আর সেই দুর্যোগের মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু কলকাতা পুরসভার। বাতিল হয়েছে সমস্ত পুরসভার কর্মীদের ছুটি।
আরও পড়ুন: মেট্রোলাইনে ফের আত্মহত্যার চেষ্টা! ব্যস্ত সময়ে দুর্ভোগের শিকার যাত্রীরা
কলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাতিস্তম্ভগুলির হাল খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে, যাতে কোথাও বিদ্যুতের তার বেরিয়ে না থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভেঙে পড়া গাছ সরাতে হাইড্রলিক ল্যাডার, ক্রেন, পে লোডার, ডাম্পারের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। গাড়ি চলাচলের রাস্তা যাতে গাছ পড়ে দীর্ঘ ক্ষণ বন্ধ না থাকে, সে বিষয়ে বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে অফিসারদের। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের সাহায্য চাওয়া হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের আওতাভুক্ত বন্দর এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সতর্কতা মূলক মাইকিং শুরু কলকাতা পুলিশের। ‘ডানা’র বিপদ এড়াতে বন্ধ লোকাল ট্রেনও! বৃহস্পতিবার রাত আটটার পর শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত পূর্ব রেলের শিয়ালদহ স্টেশন থেকে আর কোনও লোকাল ট্রেন ছাড়বে না। টানা ১৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে রেল পরিষেবা।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র জের! শিয়ালদহ শাখায় ১৪ ঘণ্টা পুরোপুরি বন্ধ ট্রেন পরিষেবা
ঘূর্ণিঝড় দানা আছড়ে পড়ার আগে সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে তৎপর এনডিআরএফ কর্মীরা। দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকা সন্দেশখালি, ধামাখালি, জেলিয়াখালি সহ বিভিন্ন জায়গায় মাইকের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন এনডিআরএফ। বিপর্যয় মোকাবিলায় খোলা হয়েছে ফ্লাড সেন্টার। প্রস্তুত রয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ঘূর্ণিঝড় দানা নিয়ে সতর্কবার্তা চলছে সুন্দরবন এলাকায়। সরকারি দফতর থেকে একাধিক এলাকায় চলছে মাইকিং। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি। ইতিমধ্যেই বসিরহাট মহাকুমা শাসকের দফতরে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম এবং চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন।
আয়লা, আম্ফান, ফনী, ইয়াস, রেমাল থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তৎপর প্রশাসন। সরকারি তরফে যেমন একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তেমনই দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে সচেষ্ট রাজ্য সরকার।