ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মুম্বাই জঙ্গি হামলা কিংবা ২৬/১১, এই ঘটনা বলিউডে বরাবরই ‘হট টপিক’। একাধিক সিনেমা, সিরিজ তৈরি হয়েছে এই ঘটনাকে ঘিরে। ১৫ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও (Mumbai Blast 16 Years), সেই অভিশপ্ত রাতের স্মৃতি এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছে সকলকে। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসের ২৬ তারিখ সকলের কাছে এক অভিশপ্ত দিন (Cursed Day)।
১০ জন লস্কর-ই-তৈবার জঙ্গি সমুদ্র পথে মুম্বই এসেছিল (Mumbai Blast 16 Years)। তাঁরা প্রথমে করাচি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। গভীর সাগর পর্যন্ত একই জাহাজে থাকার পর তারা একটি ভারতীয় মাছ ধরার নৌকা ছিনতাই করে এবং মুম্বই উপকূলে এসে নাবিককে হত্যা করে। এরপরেই তাঁরা বিপুল অস্ত্র হাতে নিয়ে ঢুকে পরে বাণিজ্যনগরীতে।
দক্ষিণ মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলা (Mumbai Blast 16 Years)
আটটি হামলার (Mumbai Blast 16 Years) ঘটনা ঘটে দক্ষিণ মুম্বইয়ে। জায়গাগুলি হল ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস (Chhatrapati Shivaji Terminus), ওবেরয় ট্রাইডেন্ট (Oberoi Trident), দি তাজ মহল প্যালেস এন্ড টাওয়ার (The Taj Mahal Palace and Tower), লিওপোল্ড ক্যাফে, কামা হাসপাতাল , নরিম্যান হাউস ইহুদি কমিউনিটি সেন্টার, মেট্রো অ্যাডল্যাবস (Metro Adlabs), এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভবন ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পিছনের একটি গলি।
আরও পড়ুন: Shinde vs Thackeray: হেরেছেন ৫ বিদ্রোহী বিধায়ক! রাজনীতি ছাড়বেন একনাথ শিন্ডে?
এছাড়া মুম্বইয়ের বন্দর এলাকার মাজাগাঁও ও ভিলে পার্লের একটি ট্যাক্সির মধ্যেও বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। জঙ্গিদের মধ্যে থাকা আজমল কাসভকে এখনও ভুলতে পারেনি ভারতবাসী। বন্দুক হাতে নিয়ে যখন সে হামলা চালিয়েছে, তখন তার বয়স মাত্র ২১ বছর! কাসভের একাধিক ছবি ভাইরাল হওয়ার পর তাকে দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ।
লস্কর-ই-তৈয়বার মদতে জঙ্গি হামলা (Mumbai Blast 16 Years)
সূত্রের খবর, পাকিস্তানের (Mumbai Blast 16 Years) সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা (Lashkar-e-Taiba) এর মদতে জঙ্গি দলটি হামলা চালিয়েছিল ভারতের বাণিজ্য নগরীতে। ঘটনায় ১৮ জন নিরাপত্তা কর্মী সহ ১৬৬ জন নিহত হয় এবং ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। ২৬ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত এই হামলা চলে। তার মাঝেই ২৮ নভেম্বর সকালের মধ্যে মুম্বই পুলিশ (Mumbai Police) ও অন্যান্য নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী (Security Forces) তাজ হোটেল ছাড়া অন্য সব স্থান সুরক্ষিত করে ফেলে।
অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো (Operation Black Tornado)
২৯ নভেম্বর ভারতের জাতীয় রক্ষী বাহিনী (NSG) জঙ্গিদমনে তৎপর হয়। বিশেষ অপারেশনের জন্য গঠন করা হয় বিশেষ টিম, নাম দেওয়া হয় অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো (Operation Black Tornado)। ঘন্টাখানেক অপারেশনের পর তাজ হোটেলে আশ্রয়গ্রহণকারী বেশ কিছু জঙ্গিকে হত্যা করে এনএসজি কমান্ডোরা (NSG Commando’s)। ওই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে আজমল কাসাব নামে মাত্র একজন হামলাকারী।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ঝটিকা সফরে ঝাড়খণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী, হেমন্ত সোরেনের শপথগ্রহণ উপস্থিত থাকবেন মমতা!
জিজ্ঞাসাবাদের সময় কাসভ স্বীকার করেন লস্কর-ই-তৈয়েবা সহ পাকিস্তান কেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠন এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল। মুম্বাই হামলার পর ভারতের অভিযোগের ভিত্তিতে পাকিস্তানে তদন্ত শুরু হয়। ২৬/১১ হামলার মূল চক্রান্তকারী হিসাবে হাফিজ সাইদ (Hafiz Saeed) এবং জাকিউর রহমান লকভির (Zakir Rahman Lockvi) নাম উঠে এসেছিল।
আজমল কাসাভকে মৃত্যুদণ্ড (Ajmal Kasav sentenced to death)
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে লকভিকে গ্রেফতার করা হলেও ২০১৫ সালে জামিন পেয়ে যান তিনি। কিন্তু পাকিস্তানের উপর চাপ অব্যাহত থাকায় ২০২০ সালে হাফিজ সাইদকে একটি অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার করা হয়। লখভিকেও একটি আর্থিক অনিয়ম মামলায় গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু, তাদের কাউকেই ২৬/১১ এর মামলায় যুক্ত করা হয়নি।
পরবর্তীতে ধৃত জঙ্গি আজমল কাসাভকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
তুকারাম ওম্বলে (Tukaram OMBLE) এবং মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণণ (Major Sandeep Unnikrishnan)
মুম্বইয়ে হামলা করা জঙ্গিদের রুখতে যাঁদের অবদান ছিল তাঁদের মধ্যে অন্যতম তুকারাম ওম্বলে। ২১ বছর বয়সী হামলাকারী আজমল কাসভকে নিরস্ত্র অবস্থায় জড়িয়ে ধরে আটকে রেখেছিলেন তিনি। সেই সময়ে কাসভের চালানো গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর শরীর। তবুও তুকারাম তাকে ছাড়েননি।
এই ঘটনায় মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণণের অবদানও ভোলা মতো নয়। তাজ হোটেলে এনএসজি কম্যান্ডোদের একটি টিম লিড করছিলেন তিনি। সেই সময়েই জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ যায় তাঁর। পরবর্তীতে তাঁকে মরণোত্তর অশোক চক্র দেওয়া হয়।
আজ ১৬ বছর পূর্ণ হলো রক্তক্ষয়ী জঙ্গি হামলার। মহারাষ্ট্রের গভর্নর সি পি রাধাকৃষ্ণন এবং মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে মঙ্গলবার, মুম্বই জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। দক্ষিণ মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনার অফিসের প্রাঙ্গণে, শহীদদের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নাবিস এবং অজিত পাওয়ার।