ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: প্রয়াত দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং (Manmohan Singh)। উদারনীতির জনক মনমোহন সিং-এর মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। বিগত কয়েকদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁকে ভর্তি করানো হয় দিল্লি এইমসে। রাত ৮টা নাগাদ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও শেষরক্ষা হয়নি। রাত ৯টা ৫১ মিনিটে প্রয়াত হন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর পড়াশোনার পাট:
কখনও তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, কখনও তিনি অর্থমন্ত্রী। আবার দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং (Manmohan Singh)। ১৯৩২ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর অধুনা পাক পঞ্জাবের গাহ-তে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে শরণার্থী হয়ে চলে আসেন ভারতে। প্রথমে হলদোয়ানি পড়ে অমৃতসরে। অমৃতসর হিন্দু কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন মনমোহন সিং। স্নাতকোত্তর পাস করেন পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। উচ্চতর শিক্ষা সারেন অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর মনমোহনের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতা দিয়ে। প্রথমে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীতে দিল্লি স্কুল অব ইকোনমিক্সে।
উত্থানের কাহিনি:
১৯৬০ সালে, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রকের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ শুরু করেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা। আরবিআইয়ের সর্বময় কর্তা হয়ে দায়িত্ব সামলান। ১৯৭২ সালে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের উপদেষ্টা হয়ে কাজ করেন তারপর ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব সামলান মনমোহন সিং (Manmohan Singh)। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হয়ে সর্বময় কর্তার দায়িত্ব সামলান তিনি। পরবর্তী ২ বছর যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ পদে থাকেন তিনি।
অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব (Manmohan Singh)
মনমোহন সিংহ নামটা দেশ তথা বিশ্বের নজরে এসে পড়ে ১৯৯১ সালে, তিনি দেশের অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর। নরসিংহ রাওয়ের জমানায় অর্থমন্ত্রী হিসাবে দেশের আর্থিক সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছে মনমোহনের নাম। অর্থনীতির সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পুরোদস্তুর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে বেসরকারি পুঁজি, ক্ষেত্রবিশেষে বিদেশি পুঁজিকেও জায়গা করে দেওয়ার রাস্তা তৈরি হয়েছিল মনমোহনের হাতে (Manmohan Singh)। পাঁচ বছর অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন বহু বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। এক দিকে প্রবল নিন্দা আর প্রতিবাদ, অন্য দিকে দু’হাত তুলে প্রশংসা আর সমর্থন, দুই-ই জুটেছে তাঁর।
প্রধানমন্ত্রিত্ব (Manmohan Singh)
ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস বলছে, এখনও পর্যন্ত জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী এবং নরেন্দ্র মোদী ছাড়া মনমোহনই দীর্ঘতম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের প্রধান মুখ হিসাবে ২০০৪ থেকে ২০১৪। একটানা ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন মনমোহন সিং (Manmohan Singh)। ২০১৪ সালে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের কাছে ইউপিএ পরাজিত হলে ক্ষমতায় আসেন নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের ইতিহাসে মনমোহনই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি আগে নিজের অবসরের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের পাঁচ মাস আগে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভোটের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, তিনি আর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকবেন না। বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর মিতভাষী স্বভাবকে কটাক্ষ করে বার বার ‘মৌনমোহন’ বা ‘দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’ বললেও দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কাছে এই ‘সিং’ ছিলেন ‘কিং’।