ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের টানাপোড়েনের মধ্যেই পাকিস্তান সরকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ করল। দীর্ঘ তিন বছর শূন্য থাকা এই পদে নিযুক্ত হলেন সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর বর্তমান প্রধান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ আসিম মালিক (Mohammad Asim Malik)। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মালিক এবার থেকে দ্বৈত দায়িত্ব পালন করবেন—তিনি একাধারে আইএসআই প্রধান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে মহম্মদ আসিম মালিক (Mohammad Asim Malik)
পাক সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর)-এর সূত্র উদ্ধৃত করে পাকিস্থানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মালিকের (Mohammad Asim Malik) এই নিয়োগ শুধু প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বেই নয়, রাজনৈতিক বার্তাও বহন করছে। কারণ, ভারতের সঙ্গে যখন সীমান্ত উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক চাপানউতোর বাড়ছে, তখন পাকিস্তান সরকার এক সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণের কেন্দ্রবিন্দুতে বসিয়ে দিল।
তিন বছর পর শূন্যস্থান পূরণ (Mohammad Asim Malik)
এর আগে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০২১ সালের মে মাসে কূটনীতিক মঈন ইউসুফকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরান সরকারের পতনের পর থেকে ওই পদটি ফাঁকা ছিল। এবার প্রায় তিন বছর পর সেই পদে আবার একজনকে বসানো হল—তাও আবার একজন সক্রিয় সেনা জেনারেলকে।পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক ভারসাম্যের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
ভারত-পাক সম্পর্কের জটিল পরিস্থিতিতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মালিকের (Mohammad Asim Malik) নিয়োগ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত, এমন এক সময়ে এই নিয়োগ, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) সরকারও জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামোয় বড়সড় রদবদল করেছে। সাত বছর পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্ষদ পুনর্গঠন করে ‘র’–এর প্রাক্তন ডিরেক্টর অলোক জোশীকে তার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছে ভারত সরকার। তার ঠিক পরেই মধ্যরাতে পাকিস্তান এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
পাকিস্তানে ক্ষমতার টানাপোড়েন
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পাকিস্তানে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের (Shehbaz Sharif) মধ্যে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার টানাপোড়েন এখন প্রকাশ্যে আসছে। শোনা যাচ্ছে, আসিম মুনির রাজনৈতিক পরিসরে প্রভাব বাড়াতে চাইছেন। এই প্রেক্ষাপটে আইএসআই প্রধানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদেও বসানো সেনাবাহিনীর একপ্রকার কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত ,পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন ঘটনা একেবারে নতুন নয়। নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে নওয়াজ শরিফ যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফের ঘনিষ্ঠদের বাদ দিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা জিয়াউদ্দিন বাটকে আইএসআই প্রধান করেছিলেন। তার কিছুদিন পরেই সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান নওয়াজ। ফলে এবারও আইএসআই প্রধানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বানানো শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে সেনা এবং সরকারের সম্পর্কের জটিল রাজনীতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।