ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের (Janani Suraksha Yojana) এক অডিট রিপোর্টে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। ৩০ মাসে ২৫ বার সন্তান প্রসব করেছেন এক মহিলা। ওই মহিলার নাম কৃষ্ণা কুমারী। শুধু তাই নয়, ৫ বার বন্ধ্যত্বকরণও করা হয়েছে তাঁর। আগরার ফতেহাবাদ কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের নথিতে এমনই তথ্য ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াচ্ছে উত্তরপ্রদেশে। কিন্তু বাস্তবে কৃষ্ণার শেষ সন্তান নাকি নিয়েছে আজ থেকে আট বছর আগে।
শিশুরা নথিতেই ছিল, বাস্তবে জন্মায়নি (Janani Suraksha Yojana)
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জননী সুরক্ষা যোজনা’ (Janani Suraksha Yojana) গরিব গর্ভবতী মহিলাদের সহায়তার জন্য করা হয়েছে। এই প্রকল্পে গরিব-পিছিয়ে পড়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সরকারি হাসপাতালে সন্তান প্রসব ও বন্ধ্যাত্বকরণ করালে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। আর সেই প্রকল্পে ধরা পড়েছে প্রতারণার ছবি। রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘জননী সুরক্ষা যোজনা’র আওতায় একাধিক শিশুর জন্মের জন্য ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে সেই সব শিশুরা কেবল নথিতেই ছিল, বাস্তবে জন্মায়নি। পুরো কেলেঙ্কারিতে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের।
জাল নথি ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট (Janani Suraksha Yojana)
৩৫ বছর বয়সী কৃষ্ণা কুমারীর নামে জাল নথি ব্যবহার করে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয় (Janani Suraksha Yojana)। এরপর সে সব অর্থ সরাসরি কৃষ্ণা কুমারীর নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়। এত ঘনঘন এক মহিলার নামে টাকা ট্রান্সফারের তথ্য দেখে সন্দেহ হয় অডিট টিমের।এরপরই জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ডিরেক্টর ডা. পিঙ্কি জোরওয়াল ঘটনাস্থলে পৌঁছন এবং তদন্ত শুরু করেন। তাদের রিপোর্টে উঠে আসে, এক মহিলার নাম করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিছু অসাধু কর্মী টাকা তুলতেন। এবং পরে তা ভাগ করে নিতেন। শুধুমাত্র একটি নাম ও একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এই প্রতারণা হয়েছে বলেই এ বিষয়টা সামনে এসেছে বলে অনুমান।ইতিমধ্যে ৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী-সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ জনকে।
আরও পড়ুন: Man Kills Ailing Wife: ‘ওকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিচ্ছি’ অসুস্থ স্ত্রীকে খুন করে আত্মঘাতী শিক্ষক
জমা-খরচ সম্পর্কিত বার্তা পাননি
কৃষ্ণা জানান, তিনি আলিগড় জেলার নাগলা কদম গ্রামের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে গুড়গাঁওয়ে থাকেন। তাঁর দুই ছেলে, একজন ২০১৪ সালে, অন্যজন ২০১৭ সালে জন্ম নেয়। দ্বিতীয় সন্তানের পরেই তিনি স্থায়ী বন্ধ্যত্বকরণ করান।পুলিশ জানিয়েছে, এক এজেন্ট কৃষ্ণার নামে অ্যাকাউন্ট খোলেন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায়। কিন্তু তাতে কৃষ্ণার মোবাইল নম্বর যুক্ত করা হয়নি, ফলে টাকা জমা-খরচ সম্পর্কিত কোনও বার্তাও তিনি পাননি।
৪৫ জন মহিলার নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট
কৃষ্ণা আরও জানান, তাঁর এক আত্মীয় অশোক, তাঁর নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ায়। সিএমও-র প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, অশোক নামের ওই ব্যক্তি একা কৃষ্ণা নয়, মোট ৪৫ জন মহিলার নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং সব অ্যাকাউন্টেই তাঁর নিজের মোবাইল নম্বর যুক্ত করেন। এই সব অ্যাকাউন্টেই জননী সুরক্ষা যোজনার আর্থিক সহায়তা পাঠানো হয়েছে বলে দেখা গেছে।
অর্থ নিয়ে নতুন করে অডিট
এই প্রকল্পের আওতায় কোনও মহিলা যদি সরকারি হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন, তাহলে গ্রামীণ এলাকায় ১,৪০০ টাকা এবং শহরাঞ্চলে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য পান। নিচু আয়ের শ্রেণী এবং তফসিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত নারীদের জন্য এই বরাদ্দ আরও বেশি হয়। এই ঘটনায় একাধিক সরকারি কর্মচারী ও পদস্থ কর্তার বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে। পাশাপাশি, আগ্রার সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতাল মিলিয়ে জননী সুরক্ষা যোজনার আওতায় দেওয়া অর্থ নিয়ে নতুন করে অডিট চলছে।