ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: জয়নগরে নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মৃত্যুদণ্ড রদের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি (Calcutta HC On Jaynagar Case)। সোমবার মামলার শুনানিতে নিম্ন আদালতের রায় থেকে শুরু করে সমস্ত তদন্ত রিপোর্ট, তথ্য-প্রমাণ ও নথি, সমস্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট এবং কেস ডায়েরি তলব করে আদালত। পাশাপাশি আসামির ওপর নিম্ন আদালতের জারি করা ৫০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানার উপর স্থগিতাদেশ জারি করলেন হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জয়নগরে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মুস্তাকিন সর্দার নামে এক ব্যক্তিকে দোষি সাব্যস্ত করে ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন বারুইপুর অতিরিক্ত জেলা দায়রা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। সেই মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta HC On Jaynagar Case) দ্বারস্থ হন আসামি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে মৃত্যুদণ্ড রদের আবেদন জানান মুস্তাকিন।
সোমবার সেই মামলার শুনানি ছিলো। বিচারপতি দেবাংশু বসাক বারুইপুর অতিরিক্ত জেলা দায়রা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের রায়ের কপি সহ সমস্ত তদন্তের রিপোর্ট, আদালতে জমা পড়া তথ্য-প্রমাণ, নথি ও কেস ডায়েরি তলব করে বিচারপতি বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই সঙ্গে ফাঁসির আসামির উপর নিম্ন আদালতের জারি করা আর্থিক জরিমানার উপরও স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta HC On Jaynagar Case)।
আরও পড়ুন: https://tribetv.in/abas-yojona-scam-at-maldaha/
সোমবার আদালতে মুস্তাকিন সর্দারের আইনজীবী হাবিবুর রহমান দাবি করেন, তাঁর মক্কেল নির্দোষ। তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। নিম্ন আদালত তার বক্তব্য শোনেনি (Calcutta HC On Jaynagar Case)। একতরফা বিচার হয়েছে। অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। তদন্ত থেকে শুরু করে ময়নাতদন্তে অনেক ধোঁয়াশা ও গরমিল রয়েছে। তারা আশাবাদী হাইকোর্টে (Calcutta HC On Jaynagar Case) তাঁরা সুবিচার পাবেন। নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির বা মৃত্যুদণ্ডের আদেশ খারিজ হবে। মুস্তাকিন নির্দোষ প্রমাণিত হবে।
আরও পড়ুন: https://tribetv.in/two-rohingya-arrested-from-nadia-areas-on-sunday-night/
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর মধ্যরাতে জয়নগর থানা এলাকার একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় নাবালিকার দেহ। তারপরের দিন অর্থাৎ ৫ অক্টোবর জয়নগর থানার পুলিশ মুস্তাকিনকে গ্রেফতার করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সিট গঠন করে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ঘটনার এক মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে গত বছর ৫ ডিসেম্বর মুস্তাকিনকে দোষি সাব্যস্ত করেন বারুইপুর অতিরিক্ত জেলা দায়রা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। তারপরের দিন অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন বিচারক। পাশাপাশি, মৃতার পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দেয় আদালত (Calcutta HC On Jaynagar Case)। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হয় মাত্র ৬৪ দিনের মধ্যে।
দেড় মাস পর সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই হাইকোর্টের (Calcutta HC On Jaynagar Case) দ্বারস্থ হন ঘটনায় ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি মুস্তাকিন। তার আইনজীবীর দাবি, গোটা ঘটনায় তাড়াহুড়ো করে বিচার করা হয়েছে। মুস্তাকিনের কোনও বক্তব্য শোনা হয়নি। সে এই কাজ করেনি। সম্পূর্ণ নির্দোষ। গোটা ঘটনায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তার আরও অভিযোগ, তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। কেন্দ্রীয় যে হাসপাতালে নির্যাতিতা ওই নাবালিকার ময়নাতদন্ত হয়েছিল সেখানে কোনও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। এই সমস্ত কারণে মৃত্যুদন্ড রদের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়া মুস্তাকিন।