মলয় দে, নদীয়া: একটু একটু করে ভাগীরথী গর্ভে তলিয়ে গেছে বাপ ঠাকুরদার আমলের চাষের জমি। কেউ হয়েছেন ভিটে ছাড়া কেউবা নিজের জমি খুইয়ে অন্য এলাকায় রয়েছেন ভাড়া। নদীয়ার শেষ প্রান্ত শান্তিপুর হরিপুর পঞ্চায়েতের অত্যন্ত প্রান্তিক নৃসিংহপুর চৌধুরীপাড়ার অন্যতম প্রধান রাস্তা এখন জলের তলায়। সম্প্রতি কিছুদিন আগেও ওই এলাকার নৌকা ঘাট ভেঙে ছিল জলের তোড়ে। ফলে কৃষিকাজ এবং ভাগীরথী পেরিয়ে পূর্ব বর্ধমানে শ্রমিকের কাজ করতে যাওয়া অনেকেই পড়েছিলেন সমস্যায়। কিন্তু এবার দুয়ারে ভাগীরথী রাস্তা বলতে আর কিছু নেই।
কয়েক বছর আগে নৃসিংহপুর ঢোকার রাস্তা হিসেবে কিছুটা পিচের এবং কিছুটা ইটের রাস্তা মঞ্জুর হয় ভাগীরথী বরাবর। যাতে স্থানীয় বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষজন কৃষিকাজ এবং নৌকা পারাপারের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করত। তবে পুরো অংশ শেষ হওয়ার আগেই জলের তলায় প্রস্তাবিত রাস্তাটি। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সাইক্লোন ডানার প্রভাবে জোরে ঢেউ আসার ফলেই হয়তো আঘাত লেগে ভেঙেছে প্রায় এক বিঘা জমি। আর এরই মধ্যে পড়েছে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ মিটার ওই রাস্তাটি।
বিপাকে পড়েছেন নতুন চড়া চৌধুরীপাড়া কুলে পার, হালদার পাড়া, গৌরনগরপাড়া তেওয়ারি চর সহ এলাকার প্রায় ৬টি গ্রামের ১০,০০০ মানুষ। তারা জানাচ্ছেন, গ্রাম থেকে বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার অন্যতম প্রধান রাস্তা ছিল এটাই। আর তার ফলেই চিকিৎসা থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ যাওয়া ছাত্রছাত্রী, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ এবং শ্রমজীবী মানুষদের ঘুরে যেতে হচ্ছে প্রায় ছয়-সাত কিলোমিটার রাস্তা। যার জন্য লাগছে অতিরিক্ত টোটো ভাড়াও।
তবে ভাগীরথী পাড় বাঁধাইয়ের কাজ জেলা পরিষদ এবং অন্যান্য সরকারি তহবিল থেকে সামান্য ব্যয় বরাদ্দ কোনও কোনও জায়গায় শুরু হলেও এলাকাবাসীদের মতে তা অপরিকল্পিত এবং আন্তরিকতা বিহীন। তাই মাঝেমধ্যে কয়েক বস্তা বালি এবং কখনও কখনও বাসের খাচা ফেলে গেলেও আদতেও কোন স্থায়ী সমাধান লক্ষ্য করা যায়নি। স্থানীয় হরিপুর পঞ্চায়েতের বিরোধী দল বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মূলত কাজের আগেই কাট মানি এবং প্রকল্প মূল্যের সব খরচ নিজেদের পকেটে পরলে এই অবস্থাই হয়।
অন্যদিকে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত থেকে জানানো হয়েছে, ভাগীরথী কিংবা যেকোনো নদী দেখভাল করে থাকেন কেন্দ্রীয় সরকারের দফতর। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সেচ দফতর সহযোগিতা করলেও ড্রেসিং করে বালি খনন না করলে এই অবস্থাই হবে।