বুম ফ্যাক্ট চেক: ‘চোলি কে পিছে ক্যায়া হ্যায়’ গানে নাচে মত্ত বরকে দেখে মেয়ের বাবা রাগে বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন দাবিতে সম্প্রতি এক খবর প্রকাশ করে এবিপি আনন্দ, টিভি৯ বাংলা, এই সময়ের মতো বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম।
দিল্লির ঘটনা দাবি করে ওই প্রতিবেদনগুলিতে লেখা হয়, হবু জামাইকে এভাবে নাচতে দেখে রাগে অগ্নিশর্মা শ্বশুর ঘোষণা করেন এমন পাত্রের সাথে মেয়ের বিয়ে তিনি দেবেন না। বলা হয়, মেয়ের সাথে ওই যুবক বা তার পরিবারের কেউ যেন যোগাযোগ করতে না পারে সেবিষয়েও সাবধান করে দেন তিনি।
অঝোরে নিজের মেয়েকে কাঁদতে দেখেও মন গলেনি বাবার বলেও রিপোর্ট করা হয় প্রতিবেদনগুলিতে, উল্লেখ করা হয় নেটমাধ্যমে উঠে আসা প্রতিক্রিয়ার কথা।
বুম যাচাই করে দেখে, পুরো খবরটাই ভুয়ো। ভাইরাল এই ‘খবর’ আদপে অ্যামাজনের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এমএক্স প্লেয়ারের বিজ্ঞাপনী প্রচারের অংশ হিসাবে প্রকাশ করা হয়েছিল দ্য পাওনিয়ার পত্রিকায়।
বিজ্ঞাপনী প্রচারের অংশে থাকা সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে সত্যি বলে খবর প্রকাশ করে এবিপি আনন্দ, এই সময়, টিভি৯ বাংলা, নিউজ ১৮ বাংলা, দ্য ওয়াল, সংবাদ প্রতিদিন, ইন্ডিয়া টাইমস বাংলা, আজকালের মতো সংবাদমাধ্যম।

সংবাদমাধ্যমগুলির প্রকাশিত প্রতিবেদন ছাড়াও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে খবরের মতন প্রকাশিত পত্রিকাটিতে থাকা বিজ্ঞাপনটির ছবি। খবরের আদলে ওই অংশের শিরোনাম দেওয়া হয়, “অতিথিদের মনোরঞ্জনে ‘চোলি কে পিছে’র তালে নাচল বর। মেয়ের বাবা ভাঙলেন বিয়ে”।

আরও পড়ুন: Income Tax Bill: আগামী সপ্তাহে আসছে নতুন আয়কর বিল! কী কী নিয়ম বদল হতে পারে?
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে, এমন কোনও ঘটনা বাস্তবে ঘটেনি। অ্যামাজনের এমএক্স প্লেয়ারের বিজ্ঞাপনী প্রচারের অংশ হিসেবে তা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এক পত্রিকায়।
আমরা অনুসন্ধানে দেখি, বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে সূত্রের উল্লেখ করে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। এরপর আমরা লক্ষ্য করি, ছবিটি আসলে ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত দ্য পাওনিয়ার দিল্লির এক সংস্করণের।
ভাইরাল ছবিতে উপরের অংশে থাকা সংবাদ প্রতিবেদনগুলির সাথে ৩০ জানুয়ারি দ্য পাওনিয়ার পত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলির মিলও দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়াও আমরা ভাইরাল হওয়া খবরের ধরণ এবং একই পৃষ্ঠায় প্রকাশিত অন্যান্য খবরের ধরণের সাথে তার অসঙ্গতি লক্ষ্য করি।
১. প্রকাশিত খবরের সাথে কোনও বাইলাইন নেই
আমরা দেখি, অন্যান্য প্রতিবেদনের মতো ওই অংশটিতে কোনও বাইলাইন নেই। বাইলাইন হল সাংবাদিক, লেখক বা সংবাদমাধ্যমের নাম, যা সাধারণত সংবাদপত্রের শিরোনামের সাথে অথবা নীচে থাকে।
আমরা দ্য পাওনিয়ারের একই সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলির সাথে ওই অংশের তুলনা করি। অন্যান্য প্রতিবেদনে ‘স্টাফ রিপোর্টার’ বা ‘পাইওনিয়ার নিউজ সার্ভিস’-এর মতো বাইলাইনের উল্লেখ থাকলেও, এই সংবাদের সাথে কোনও বাইলাইন ছিল না।

২. ফন্ট স্টাইলে অসামঞ্জস্য
এরপর আমরা ওই ভুয়ো প্রতিবেদনের ফন্ট স্টাইলের সাথে দ্য পাওনিয়ার পত্রিকায় প্রকাশিত অন্যান্য প্রতিবেদনের সাথে তুলনা করে স্পষ্ট পার্থক্য খুঁজে পাই। আমরা দেখতে পাই, ভুয়ো ওই প্রতিবেদনের শিরোনামে দাঁড়ির যোগও করা হয়েছে।
আমরা এছাড়াও দেখি, “অতিথিদের মনোরঞ্জনে ‘চোলি কে পিছে’র তালে নাচল বর। মেয়ের বাবা ভাঙলেন বিয়ে” শীর্ষক ভুয়ো প্রতিবেদনটি অ্যামাজন এমএক্স প্লেয়ারের বিজ্ঞাপনের সাথে একই বাক্সে রাখা হয়েছে। সেই বাক্সের উপরে রয়েছে অন্যান্য প্রতিবেদনগুলি, যা নিচের অংশে দেখা যাবে।

৩. সম্পাদকীয় শৈলীতে পার্থক্য
আমরা আরও দেখি, ভুয়ো ওই প্রতিবেদনের সাথে অন্যান্য সংবাদ প্রতিবেদনগুলির লেখার ধরণে পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভুয়ো প্রতিবেদনে তারিখ হিসেবে ‘১৮ই জানুয়ারী’ লেখা হয়, যা দ্য পাওনিয়ারের অন্যান্য প্রতিবেদনের সাথে মেলে না।
এরপর আমরা বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে দিল্লিতে দ্য পাওনিয়ারের বিজ্ঞাপন ও বিক্রয় বিভাগের প্রধান বরুণ কুমার চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করি। চৌধুরী নিশ্চিত করে বুমকে বলেন, “এটি কোনও আসল খবর নয়, বরং এক বিজ্ঞাপন। অ্যামাজনের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এমএক্স প্লেয়ারের বিজ্ঞাপনের অংশ হিসেবে তা প্রকাশ করা হয়েছিল।”
আরও পড়ুন: Delhi Assembly Election: কী হতে চলছে দিল্লি বিধানসভার ফলাফল? বুথ ফেরত সমীক্ষায় কার পাল্লা ভারী?
তিনি আসল প্রতিবেদনের সাথে ওই অংশের তফাৎ বোঝাতে প্রচারমূলক অংশ উল্লেখ করার যে প্রয়োজন ছিল, সেকথাও স্বীকার করে নেন।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: রোহিত কুমার)
এই খবরটি শক্তি কালেক্টিভের অংশ হিসাবে প্রথমে বুম দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল এবং ট্রাইব টিভি বাংলার দ্বারা অনুবাদ করা হয়েছে। এই খবরটির শিরোনাম এবং সামারি বাদে বাকি খবর ট্রাইব টিভি বাংলার কর্মীরা সম্পাদনা করেনি।