ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গয়ার পিণ্ডদান (Gaya Pindadaan) হল হিন্দু ধর্মে এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার, যা প্রধানত পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি ও মঙ্গল কামনার জন্য করা হয়। এটি ভারতের বিখ্যাত পবিত্র স্থানে গয়া শহরে গিয়ে পালন করা হয়, যাতে পূর্বপুরুষদের আত্মা আরও নির্বিঘ্নে শান্তি লাভের উদ্দেশ্যে পরপারে পাড়ি দিতে পারে। পবিত্র স্থান গয়া বিহার রাজ্যে অবস্থিত। গয়ার পিণ্ডদান একটি তীর্থ যাত্রার অংশ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, এবং এটি এক ধরনের আত্মশুদ্ধি এবং পিতৃপ্রতিদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন।
পিণ্ডদানের অর্থ (Gaya Pindadaan)
গয়ার পিণ্ডদান পুণ্য লাভের জন্য এবং পিতৃপুরুষদের আত্মার মুক্তির (Gaya Pindadaan) জন্য এক ধরনের শাস্ত্রীয় নিয়মের মধ্যে পালন করা হয়। এখানে পিণ্ডদান কথাটি দুটি শব্দ থেকে এসেছে— “পিণ্ড” এবং “দান”। “পিণ্ড” মানে মৃত ব্যক্তির শবাংশ বা মাংসের বলি, যা চিরস্থায়ী শান্তি কামনায় প্রদান করা হয়, এবং “দান” মানে উপহার বা অঞ্জলি। এর মাধ্যমে মৃতদের আত্মার শান্তি ও মুক্তি কামনা করা হয়।
পিণ্ডদানের ফলে স্বর্গলাভ? (Gaya Pindadaan)
গয়া শহরের পবিত্র নদী ফালগুতে এই (Gaya Pindadaan) পিণ্ডদান করা হয়। এখানে এসে তীর্থযাত্রীরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের স্মরণে পিণ্ডদান করেন, যাতে তাদের আত্মা পরিত্রাণ পায়। এই পিণ্ডদান সঠিকভাবে করা হলে, বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির আত্মা পুনর্জন্ম লাভের পথ থেকে মুক্তি পায় এবং স্বর্গলোকে স্থান লাভ করে।
আরও পড়ুন: Mouni Amavasya 2025: কেন কোটি কোটি মানুষ জমায়েত হন পুন্যস্নানে? জানুন মৌনী আমবস্যার মাহাত্ম্য
পিণ্ডদানের পদ্ধতি
গয়ার পিণ্ডদান সাধারণত এক বা একাধিক (Gaya Pindadaan) পুরোহিতের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। পুরোহিতরা সঠিকভাবে নিয়ম অনুসরণ করে পিণ্ডদান করেন। এই প্রক্রিয়ায়, প্রথমে কিছু চাল, সাদা তিল, গোধূম, কাঁচা কলা ইত্যাদি মিশিয়ে একটি বিশেষ পিণ্ড তৈরি করা হয়, যা মৃত ব্যক্তির নামে দান করা হয়। পিণ্ডদান শেষে তীর্থযাত্রীরা তীর্থস্থান নদীতে পিণ্ডের বিসর্জন দেন, যা মৃতের আত্মার শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
গয়াতেই কেন পিণ্ডদান ?
কথিত আছে গয়াপুরী স্থানটি গয়াসুরের নামে (Gaya Pindadaan) বিখ্যাত। গয়া মাহাত্ম্য থেকেই জানা যায় এই অসুরের আত্মত্যাগের কথা। কথিত আছে, একবার গয়াসুর নাকি শ্রীবিষ্ণুর কাছে বর প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, গয়াসুরের শরীর ছোঁয়া মাত্রই যেন মানুষ, অসুর , কীটপতঙ্গ, পাপী, ঋষি, মুনি, ভূত প্রেত পিশাচ সবাই যেন মুক্তিলাভ করে। ত্রিপুরাসুর পুত্র গয়ার এই প্রার্থনা শ্রীবিষ্ণু মঞ্জুর করেছিলেন। আর তাই আজও গয়াতে পিণ্ডদানের রীতি প্রচলিত।
শুধুই ধর্মীয় বিশ্বাস?
গয়ার পিণ্ডদান মূলত এক ধরনের ধর্মীয় কর্তব্য, যা মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি, মুক্তি ও পরকালীন সাফল্যের জন্য করা হয়। এটি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি পন্থা হিসেবেও দেখা হয়।