ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ‘গুগ্ল কর’ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার (Google Tax)। এই পদক্ষেপ এসেছে এমন সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) পারস্পরিক শুল্কনীতি কার্যকর করেছেন এবং তার জেরে বিশ্ববাজারে নেমেছে ধস। প্রশ্ন উঠছে—এই সিদ্ধান্ত আমেরিকাকে খুশি করার চেষ্টা, না কি এর পেছনে রয়েছে নয়াদিল্লির নিজস্ব কৌশলগত বাণিজ্য পরিকল্পনা?
‘ইকুয়ালাইজ়েশন লেভি’ (Google Tax)
২০১৬ সালে চালু হওয়া এই কর, যা ‘ইকুয়ালাইজ়েশন লেভি’ নামে পরিচিত (Google Tax), বিদেশি প্রযুক্তি সংস্থাগুলির ডিজিটাল বিজ্ঞাপন পরিষেবার উপর ৬% হারে আদায় হতো। গুগ্ল, মেটা, অ্যামাজ়নের মতো বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে ভারতে বিপুল পরিমাণ লাভের পরিপ্রেক্ষিতে করের আওতায় আনা হয়। তবে সংস্থাগুলির দেশে সশরীরে উপস্থিতির প্রয়োজন ছিল না।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা (Google Tax)
নতুন অর্থ আইনের আওতায় কেন্দ্র এই কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে (Google Tax)। অর্থনীতিবিদদের মতে, এতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হয়েছে:
প্রথমত, আমেরিকার টেক সংস্থাগুলিকে ভারতের বাজারে আরও সহজ প্রবেশাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে ওয়াশিংটনকে জানানো হচ্ছে যে, নয়াদিল্লি কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করছে না।
দ্বিতীয়ত, কর কমানোর ফলে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খরচ কমছে, যার ফলে ভারতীয় সংস্থাগুলিও ডিজিটাল প্রচারে আরও বেশি উৎসাহিত হচ্ছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর বৈঠক (Google Tax)
ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর বৈঠকে এর ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল (Google Tax)। মোদী (Narendra Modi) তখন বলেছিলেন, “আমরা চিন নই। আমাদের দেশে প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে সস্তায় বিজ্ঞাপন দিতে দেওয়া হয়।” বহুজাতিক সংস্থাগুলির কাছে এই সিদ্ধান্ত স্বস্তিদায়ক হলেও, বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ভারতের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাজারে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। বিশেষ করে যখন গুগ্ল ও মেটা তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়ে বাজারে দখলদারি শক্তিশালী করতে চাইছে।

আরও পড়ুন: Tahawwur Rana : ভারতকে প্রত্যর্পণে বাধা নেই ২৬/১১- চক্রী তাহাউর রানার! প্রত্যর্পণ রুখতে আবেদন খারিজ আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের
ই-কমার্স সংস্থার কর মুকুব (Google Tax)
এর আগে ২০২3 সালে অনাবাসী ই-কমার্স সংস্থার উপর থেকে ২% করও তুলে নেয় সরকার (Google Tax)। তবে আমদানি করা কিছু পণ্যের উপর এখনও ভ্যাট ২৮% পর্যন্ত রয়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ইঙ্গিত দিয়েছেন, কেন্দ্র এই ভ্যাট হার পর্যালোচনা করতে পারে, যদিও এ নিয়ে ২৮টি রাজ্যের সম্মতির প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: Yunus Letter : ট্রাম্পকে চিঠি ইউনূসের! ‘পাল্টা শুল্ক’ তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ বাংলাদেশের
আইফোনের দাম বাড়বে?
এই প্রেক্ষিতে, ৫ এপ্রিল থেকে আমেরিকার নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হওয়ায় ভারতের পণ্য রফতানি মার খেতে শুরু করেছে (Google Tax)। চিংড়ি, কার্পেট, মেডিক্যাল সরঞ্জাম, এবং সোনার গহনার উপর ২৬% পর্যন্ত শুল্ক বসানো হয়েছে, যার ফলে রফতানিকারকদের উদ্বেগ বাড়ছে। আইফোনের দামেরও বাড়তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।চাপ এড়াতে ৫টি বিমান বোঝাই করে আইফোন আমেরিকায় পাঠিয়েছে অ্যাপল। কারণ, ৯ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। এশিয়ার শেয়ার বাজারে এরইমধ্যে ধস নেমেছে; আমেরিকাতেও বাজারে রক্তক্ষরণ।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষি
বিশ্বের বহু দেশ ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষিতে নেমেছে। হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান কেভিন হ্যাসেট জানিয়েছেন, ৫০টিরও বেশি দেশ চিঠি পাঠিয়েছে আমেরিকাকে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।ভারতের রফতানির ১৮% যায় আমেরিকায়, আর আমদানির ক্ষেত্রে মার্কিন পণ্যের অংশ ৬.২২%। দু’দেশের মোট বাণিজ্য ১০.৭৩%। তাই ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব বিশাল হতে বাধ্য।
ভারতের কৌশলী অবস্থান
তবে অন্যান্য দেশের মতো চিনের মতো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ভারত কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। বেজিং ইতিমধ্যেই ১১টি মার্কিন সংস্থার বাণিজ্য বন্ধ করেছে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইছে নয়াদিল্লি। সূত্র জানাচ্ছে, ভারত দ্রুত একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি করতে চায়, যাতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে থাকা যায়।