ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : শুভেন্দুর ‘চ্যাংদোলা’ মন্তব্যের পাল্টা সরব হয়ে ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir) জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে আগে জাত, তারপর দল। এ বার এই মন্তব্যের জেরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শো-কজ করা হলো ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে (Humayun Kabir)।
শো-কজ হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir)
হুমায়ুনের (Humayun Kabir) মুখে দু’দিন ধরে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য শোনা যাচ্ছিল। যে ধরনের মন্তব্য তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী করেছেন বলে বিধানসভায় তৃণমূল নিন্দাপ্রস্তাব পাস করিয়েছে, ঠিক একই ধরণের মন্তব্য শোনা গিয়েছে তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুনের মুখেও। বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকেই তিনি নির্দেশ দেন যাতে তৃণমূলের পরিষদীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি হুমায়ুনকে শো-কজের চিঠি পাঠায়। যদি তার জবাব ‘সন্তোষজনক’ না হয়, তাহলে দল কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। একইসাথে, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য প্রবীণ মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকেও সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, এমনটাই জানা গেছে নবান্ন সূত্রে।২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হচ্ছে হুমায়ুনকে জবাব দেওয়ার জন্য। সূত্র বলছে ,‘সন্তোষজনক’ উত্তর না পেলে সাসপেন্ডও হতে পারেন হুমায়ুন।
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee: নাম না করেই শুভেন্দুকে নিশানা মমতার, সভাপতির পদ নিয়েই বিতর্ক?
বেফাঁস মন্তব্য হুমায়ুনের (Humayun Kabir)
গত মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (suvendu adhikari) দাবি করেছিলেন, ‘২০২৬-এ বিজেপি ক্ষমতায় এলে তৃণমূলের জয়ী মুসলিম বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে বাইরে ছুড়ে ফেলা হবে।’ শুভেন্দুর সেই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। তাঁর এই মন্তব্যের পাল্টা বুধবার বিধানসভায় সরব হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বধর্ম সমন্বয়ের পাঠও দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর বৃহস্পতিবার বিধানসভার বাইরে হুমায়ুন (Humayun Kabir) বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী জাতিগত আক্রমণ করছে কেন প্রশাসন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করছে না? পুলিশ কি নাকে ঠুসি দিয়ে আছে? আমাকে কেন আমার জাতির জন্য এত চিৎকার করতে হয়? কেন এখানে আইনশৃঙ্খলা সমস্যা তৈরি করছে, গোটা একটা মুসলিম জাতিকে আক্রমণ করছে? পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? ব্যর্থতার কথা আমি বলব না। পুলিশ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে?’’আমার জাতিকে আক্রমণ করবে আর আমি শুভেন্দুকে ছেড়ে দেব? কোনও মতেই ছাড়ব না। ‘‘আমার কাছে আমার জাতি দলের চেয়ে বড়।’
আরও পড়ুন : TMC Inner Clash: জোড়াফুলের ভেতরেই অন্তর্দ্বন্দ্ব, ‘অরাজনৈতিক’ ঘটনা, দাবি সভাপতির!
প্রসঙ্গত, হুমায়ুন এর আগেও একাধিকবার বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। দলের পক্ষ থেকেও তাঁকে বারবার ‘শোকজ’ করা হয়েছে। একবার তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজের ভাইপোকে রাজা বানাতে চাইছেন’’—এমন বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য দল থেকে সাসপেন্ডও হয়েছিলেন। এরপর তৃণমূল ছেড়ে পুরনো দল কংগ্রেসে ফিরে যান। পরে বিজেপি যোগদান করে, আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। কিন্তু তাতেও হুমায়ুনকে দমন করা যায়নি। ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করতে হবে’’ বলে প্রকাশ্য মন্তব্য করে ফের বিতর্ক তৈরি করেন। সেই সময়ে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী তাঁকে ‘শোকজ’ করেছিলেন। হুমায়ুন ক্ষমাপ্রার্থনা করে চিঠি দিয়ে সেবার পার পেয়ে যান, তবে আবারও বিতর্কিত মন্তব্য করে তিনি শোকজের মুখে পড়েছেন। এবার দল তার বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার।