ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: নবীন প্রযুক্তির সন্ধানে ভারতীয় বায়ুসেনার সেমিনার (India Air Force Seminar at Aero India) হল এয়ারো ইন্ডিয়া ২০২৫-এ। ভবিষ্যতের প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো এবং দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ভারতীয় বায়ুসেনা (IAF) ‘নবাচার উৎকৃষ্টম ভবিষ্যম’ (উদ্ভাবনই ভবিষ্যতের পথ) থিমে একটি সেমিনারের আয়োজন করে।
২০২৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত এয়ারো ইন্ডিয়া ২০২৫-এর অংশ হিসেবে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় (India Air Force Seminar at Aero India)। সেমিনারের মূল লক্ষ্য ছিল প্রতিরক্ষা বাহিনী, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) সংস্থার মধ্যে সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করা, যাতে উদ্ভাবনের জন্য একটি কার্যকর পরিবেশ গড়ে ওঠে। এই অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী শ্রী সঞ্জয় শেঠ এবং বায়ুসেনা প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
আত্মনির্ভরতার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি (India Air Force Seminar at Aero India)
প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠ বলেন, “আত্মনির্ভরতা শুধুমাত্র একটি নীতি নয়, এটি ভারতের ভবিষ্যতের জন্য একটি রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গি।” তিনি বলেন (India Air Force Seminar at Aero India), প্রতিরক্ষা খাত এই দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম স্তম্ভ, যেখানে দেশীয় উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় বায়ুসেনা (IAF) দেশীয় প্রতিরক্ষা উন্নয়ন ও উৎপাদনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে, যা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
দেশীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির বিকাশ (India Air Force Seminar at Aero India)
প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন (India Air Force Seminar at Aero India), দেশীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়ন শুধু অস্ত্র নির্মাণে সাহায্য করবে না, বরং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামগুলির রক্ষণাবেক্ষণও সহজ করে দেবে। তিনি বলেন, এই উন্নয়নের ফলে সশস্ত্র বাহিনী প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যতের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে পারবে। তিনি উল্লেখ করেন, গত কয়েক বছরে ভারতীয় বায়ুসেনা সফলভাবে ৭৮টি প্রকল্প iDEX প্রকল্পের আওতায়, ৪৮টি প্রকল্প MAKE উদ্যোগের অধীনে এবং ৩৭টি প্রকল্প TDF উদ্যোগের মাধ্যমে চালু করেছে, যা বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নয়ন করা চলছে।
নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ সহযোগিতার আহ্বান (India Air Force Seminar at Aero India)
প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী প্রতিটি স্টেকহোল্ডারকে আহ্বান জানান (India Air Force Seminar at Aero India), যাতে তারা প্রতিরক্ষা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহে সাহায্য করতে পারে, যাতে আধুনিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা যায়। তিনি বলেন, ভারতের উদ্ভাবনের মূল চালিকা শক্তি হল ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (MSMEs) এবং স্টার্টআপগুলো। তিনি উল্লেখ করেন, এই সংস্থাগুলির সৃজনশীলতা ও দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
তিনি MSME প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহ দেন, যাতে তারা তাদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে প্রতিরক্ষা খাতে প্রবেশ করে এবং দেশকে আরও আত্মনির্ভর করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন সুযোগের উন্মোচন
সেমিনারের সময় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী ‘IAF Compendium of Challenges & Opportunities for Indian Industry’ নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেন। এই বইতে প্রতিরক্ষা খাতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এয়ারোস্পেস ক্ষেত্রে উদ্ভাবন ও বৃদ্ধির সুযোগগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও, তিনি ভারতীয় বায়ুসেনার তৈরি ‘VAYU VITT’ ডিজিটাল পোর্টাল চালু করেন। এই পোর্টালের মাধ্যমে IAF এবং HAL-এর মধ্যে সরবরাহ আদেশ, সার্টিফিকেশন ও পেমেন্ট সংক্রান্ত কাজ আরও স্বচ্ছ ও ডিজিটাল হবে।
Mehar Baba-II প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা
এই অনুষ্ঠানে Mehar Baba-II প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় এবং নতুন ‘Mehar Baba-III’ চ্যালেঞ্জ চালু করা হয়। এই প্রতিযোগিতা ভারতে প্রতিরক্ষা উদ্ভাবনের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে শুরু হয়েছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নতুন প্রযুক্তিগত সমাধান নিয়ে আসতে পারেন।
মানব ও রোবোটিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে আলোচনা
সেমিনারের অংশ হিসেবে ‘Manned Unmanned Teaming – From Concept to Targeting’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা করা হয়। এই আলোচনায় বিমান ও মহাকাশ বিজ্ঞানী, শিল্প প্রতিনিধি, সার্টিফিকেশন সংস্থা এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারতীয় প্রতিরক্ষা খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে দেশীয় প্রযুক্তির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও বলেন, স্বাধীন প্রযুক্তিগত সমাধান ছাড়া আধুনিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে।
দেশীয় শিল্পের ভূমিকা
এই সেমিনারের মাধ্যমে ভারতীয় বায়ুসেনা প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও প্রযুক্তি বিকাশে দেশীয় শিল্পের ভূমিকাকে আরও জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার ও বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করলে, ভারত ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আরও সক্ষম হয়ে উঠবে।
প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মতে, এখনই সঠিক সময়, যখন ভারতীয় MSMEs, স্টার্টআপ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে আত্মনির্ভর ভারত গঠনে অংশগ্রহণ করতে পারে।