ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চিন সীমান্তে কমেছে উত্তেজনা। ভারত এবং চিন দুই দেশই সেনা সরিয়েছে সীমান্ত থেকে। লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) থেকে সেনা সরিয়ে ২০২০ সালের সংঘাতের আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশই। কিন্তু,তবু সামরিক প্রস্তুতিতে একটুও কমতি রাখছে না ভারত (INS Aridhaman)। লাদাখের সীমান্ত সমস্যায় ইতি পড়লেও ভারত মহাসাগরে নিজের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করতে মরিয়া ভারতীয় নৌ-সেনা। ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে এবার ভারতীয় নৌ বাহিনী সমুদ্রে নামলো নিঃশব্দ ঘাতক (INS Aridhaman) ‘আইএনএস অরিদমন’।
কবে শুরু হল সি-ট্রায়াল? (INS Aridhaman)
ভারতীয় নৌ বাহিনীতে যুক্ত হওয়া এই নতুন ডুব জাহাজটি (INS Aridhaman) চুপিচুপি সুমদ্রের মাঝ থেকে যে কোনও লক্ষ্যে পরমাণু হামলা চালাতে পারে। এ’বছর অক্টোবর মাসে অন্ধপ্রদেশের সামরিক জাহাজ নির্মান কেন্দ্র “শিপ বিল্ডিং সেন্টার” থেকে সমুদ্রের জলে নামানো হয় ওই ডুব জাহাজটিকে। এরপর শুরু হয় ডুব জাহাজটির সি ট্রায়াল।এই ডুব জাহাজটি সি ট্রায়াল শেষ করে সার্ভিসে যুক্ত হলে একই রকম আরও একটি ডুব জাহাজ হাতে পাবে ভারতীয় নৌ বাহিনী।

নিউক্লিয়ার ব্যালেস্টিক মিসাইল (INS Aridhaman)
এই সাবমেরিনটি (INS Aridhaman) নিউক্লিয়ার ব্যালেস্টিক মিসাইল চালাতে সক্ষম। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের কোনও নিশানায় নিখুঁত আঘাত হানতে পারবে এই অ্যাটাক সাবমেরিনটি। গত ১৬ অক্টোবর এই সাবমেরিনটি সি ট্রায়ালের জন্য সমুদ্রে নামায় ভারতীয় নৌ সেনা। ১৫ অক্টোবর তেলেঙ্গানার ভিকারাবাদ জেলার দামাগুন্ডামে একটি নৌঘাঁটির উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। আর এই নৌ-ঘাঁটিটি উদ্বোধনের পরদিনই জলে নামানো হয় এই নতুন আটাক সাবমেরিন ‘আইএনএস অরিদমন’।
আরও পড়ুন: Diwali 2024: ধোঁয়ার চাদরে ঢাকল রাজধানীর আকাশ, উদ্বেগে প্রশাসন
দ্বিতীয় অ্যাটাক সাবমেরিন
এর আগে ২৯শে আগস্ট পরমাণু অস্ত্রবাহী ভারতের দ্বিতীয় অ্যাটাক সাবমেরিন ভারতীয় নৌসেনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেই অ্যাটাক সাবমেরিনটির নাম ছিল ‘আইএনএস অরিঘাট’। আর নতুন সি ট্রায়াল শুরু হওয়া এই অ্যাটাক সাবমেরিনটি আগামি বছর অর্থাৎ, ২০২৫ সালের শুরুতেই সার্ভিসে যুক্ত করতে পারবে বলে মনে করছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
গোপনে চলছে সি-ট্রায়াল (INS Aridhaman)
এই নতুন সাবমেরিনটির (INS Aridhaman) সি-ট্রায়ালের বিষয়টি বেশ গোপনে চলছে। এই মিশনের কোড নাম দেওয়া হয়েছে ‘এস-৪’। এই নতুন নির্মিত অ্যাটাক সাবমেরিনটির বেশিভাগ প্রযুক্তিই ভারতে তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে প্রায় ৭৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ তৈরি হয়েছে ভারতে।
ক্ষমতা
এই ডুব জাহাজটি ‘কে-৪’ পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারবে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূর থেকে সঠিক নিশানায় আঘাত হানতে পারে এই অ্যাটাক সাবমেরিনটি। এই রকম নিউক্লিয়ার ব্যালেস্টিক মিসাইল বহনকারী সাবমেরিন এই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৬ সালে ভারতের হাতে এসেছিল প্রথম নিউক্লিয়ার ব্যালেস্টিক মিসাইল বহনকারী সাবমেরিন আইএনএস অরিহান্ত। এই সাবমেরিনটি ৭৫০ কিমি দূর পর্যন্ত আঘাত করতে পারতো। যাতে পরমানু অস্ত্র বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে থাকত ‘কে-১৫’ মিসাইল। কিন্তু এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি বাড়াতে যুক্ত হচ্ছে নতুন সাবমেরিন।

ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে প্রভাব (INS Aridhaman)
ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে চিনা সেনার প্রভাবকে মোকাবিলা করতেই ভারতীয় নৌসেনা ব্যবহার করবে নতুন সাবমেরিন। ইন্দো- প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় দীর্ঘদিন দাদাগিরি চালিয়ে যাচ্ছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। আর এই এলাকায় চিনা নৌসেনাকে রুখে দিতে ভারতের এই নতুন সাবমেরিন বহু দিন ধরে দাবি করছিল নৌবাহিনী। এই নতুন সাবমেরিন ভারতীয় নৌবাহিনীতে সার্ভিসে যুক্ত হলে চিনা নৌবাহিনীকে রুখতে পারবে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও চলতি বছরে ৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কেবিনেটের মিটিং-এ আরও দুটি অ্যাটাক সাবমেরিনের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। লাদাখে চিনের সঙ্গে সংঘাত কমলেও মোটেই প্রস্তুতির ঘাটতি রাখছে না ভারতীয় সেনা।
আরও পড়ুন: PM Modi News: জাতীয় ঐক্য নষ্ট করছে ‘আর্বান নকশালরা’, কংগ্রেসকে তোপ প্রধানমন্ত্রীর
বর্তমান অবস্থা
ভারতীয় সেনার কাছে বর্তমানে তিনটি নিউক্লিয়ার ব্যালেস্টিক মিসাইল বহনকারী সাবমেরিন রয়েছে। একটি ২০১৬সালে সার্ভিসে যুক্ত হওয়া আইএনএস ‘অরিহান্ত’। অন্যটি এইবছর আগস্টে সার্ভিসে যুক্ত হওয়া ‘আইএনএস অরিঘাট’। বর্তমানে এই দুটি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে নিঃশব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে অতল সমুদ্রে। এছাড়াও ভারতের কাছে রয়েছে রাশিয়ার থেকে লিজে নেওয়া আরও একটি অ্যাটাক নিউক্লিয়ার সাবমেরিন। এই সাবমেরিনটিও ২০২৮ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবে ভারতীয় নৌসেনা। কিন্তু, চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির কাছে থাকা সাবমেরিন ও ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা এবং তার ক্ষমতা অনেক বেশি। আর তাই ভারত নৌসেনাকে আরও বেশি শক্তিশালি করতে একের পর এক অ্যাটাক সাবমেরিন তৈরি করছে।