ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সামরিক সহযোগিতায় ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তেহরান এবং মস্কো (Iran buys Su-35)। তেহরান এবং মস্কোর ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা নিয়ে পশ্চিমি দেশগুলির উদ্বেগের মধ্যেই ইরান জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার তৈরি সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনেছে (Iran buys Su-35)। ইরানের বিমান বাহিনীর হাতে বর্তমানে কয়েক ডজন মাত্র আক্রমণাত্মক যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কিছু রুশ যুদ্ধবিমান, পাশাপাশি ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা পুরনো বিমান। নতুন যুদ্ধবিমান ইরানের সামরিক শক্তিকে আরও দৃঢ় করবে।
পুরনো সরঞ্জাম সরিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির পথে ইরান (Iran buys Su-35)
ইরানের খাতাম-আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্সের উপ-সমন্বয়ক আলি শাদমানি বলেন (Iran buys Su-35), “সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। পুরনো প্রযুক্তির অস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান সরিয়ে নতুন ও উন্নততর প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “যখনই প্রয়োজন হয়, আমরা আমাদের বিমান বাহিনী, স্থল বাহিনী এবং নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য সামরিক সরঞ্জাম কিনে থাকি।”
তবে শাদমানি স্পষ্ট করে জানাননি, এই যুদ্ধবিমান ইতিমধ্যেই ইরানে এসে পৌঁছেছে কিনা। কিন্তু এই প্রথমবার কোনও উচ্চপদস্থ ইরানি কর্মকর্তা সুখোই-৩৫ কেনার (Iran buys Su-35) কথা সরাসরি স্বীকার করলেন।
দীর্ঘদিনের আলোচনার পর চূড়ান্ত চুক্তি (Iran buys Su-35)
গত নভেম্বরে ইরানের সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছিল, তেহরান রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি চূড়ান্ত করেছে (Iran buys Su-35)।
এই মাসের শুরুর দিকে, ইরান এবং রাশিয়া একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করে (Iran buys Su-35)। যদিও এই চুক্তিতে অস্ত্র স্থানান্তরের উল্লেখ ছিল না, তবে তাতে বলা হয়েছিল যে দুই দেশ সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়াবে।
এই চুক্তির মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হলো, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন তারা উভয়েই আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে।
২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এই চুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। তা হল কোনও দেশই তার ভূখণ্ডকে এমন কোনও কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেবে না, যা অপর দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। এছাড়াও, কোনও পক্ষই এমন কোনও গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রকে সহায়তা করবে না, যারা অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
এই চুক্তি বহু বছর ধরে আলোচনায় ছিল, তবে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে এটি এখন সময়ের প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।
রাশিয়া-ইরানের নতুন কৌশলগত বন্ধুত্ব
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে রয়েছে। অন্যদিকে, ইরানকে দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
এছাড়াও, ইরানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিত্র— বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, গত ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের সরকার পতনই ইরান ও রাশিয়ার সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আল-আসাদের পতনের ফলে রাশিয়া ও ইরান উভয়েই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শক্তিশালী এক মিত্রকে হারিয়েছে। ফলে এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব অনেকটাই কমে গেছে।
আরও পড়ুন: Muhammad Yunus: ছাত্রদের নিয়ে নতুন দল গঠনের ঘোষণা ইউনূসের
সামরিক শক্তি বাড়ানোর কৌশল
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান সুখোই-৩৫ কেনার মাধ্যমে নিজের সামরিক ক্ষমতা আরও বাড়াতে চাইছে। ইতিমধ্যেই, ইরান নিজস্ব ড্রোন প্রযুক্তি উন্নত করেছে এবং সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য কাজ করছে।
রাশিয়ার কাছ থেকে এই যুদ্ধবিমান কেনা ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড় পরিবর্তন আনবে। কারণ, এতদিন ইরানের বিমান বাহিনী মূলত পুরনো মার্কিন ও রুশ যুদ্ধবিমানের উপর নির্ভর করত।
তবে পশ্চিমি দেশগুলি বিশেষ করে আমেরিকা ও ইজরায়েল এই চুক্তিকে উদ্বেগের চোখে দেখছে।
পশ্চিমিদের প্রতিক্রিয়া
আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়া-ইরানের ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষত, ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে ইরানের যুদ্ধবিমান কেনা আরও বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
পশ্চিমি সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি শুধু ইরানের নয়, রাশিয়ার সামরিক ও কৌশলগত অবস্থানকেও আরও শক্তিশালী করবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের নতুন যুদ্ধবিমান কেনা মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। ইজরায়েল ইতিমধ্যেই ইরানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিকে হুমকি হিসেবে দেখছে।
এছাড়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাশাহির মতো দেশগুলোও ইরানের ক্রমবর্ধমান সামরিক সক্ষমতা নিয়ে চিন্তিত।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কেনার ফলে ইরানের সামরিক শক্তি বাড়বে ঠিকই, তবে এটি নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে।
পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইরান কীভাবে এই যুদ্ধবিমান পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করবে, সেটিও বড় প্রশ্ন। এছাড়া, এই চুক্তির ফলে রাশিয়ার উপর পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হতে পারে।
তবে সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে এই নতুন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এই চুক্তি ইঙ্গিত দেয় যে, ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত চিত্র আরও পরিবর্তিত হতে পারে।