ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইজরায়েলের নজিরবিহীন বিমানহানায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য(Iran Israel Conflict)। ইরানের বৃহত্তম পরমাণু কেন্দ্র ‘নাতানজ’ এবং একাধিক সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো ইজরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মহম্মদ বাগেরি, রেভলিউশনারি গার্ডের প্রধান হোসেন সালামি ও ডেপুটি কমান্ডার ঘোলামালি রশিদ। নিহত হয়েছেন ইরানের ছ’জন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী, তাঁদের মধ্যে আছেন দেশের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ফেরেউদুন আব্বাসিও। এই ঘটনায় বিশ্ব রাজনীতিতে তীব্র চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এই হামলার পিছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald J. Trump) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ট্রাম্পের আগাম সতর্কতা ও মার্কিন অবস্থান (Iran Israel Conflict)
ইজরায়েলি হামলার পরই আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো একটি বিবৃতি দেন— ‘‘আমরা এই হামলায় জড়িত নই, ইজরায়েল তাদের আত্মরক্ষার স্বার্থে একক পদক্ষেপ নিয়েছে(Iran Israel Conflict)।’’ তবে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন ইরানকে, ‘‘পাল্টা হামলা হলেও যেন আমেরিকান স্বার্থে আঘাত না লাগে।’’ পরে ট্রাম্প ‘ফক্স নিউজ’-এ বলেন, “আমরা চাই না ইরান পরমাণু বোমার মালিক হোক। আশা করি আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটবে।” তাঁর এই মন্তব্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একপ্রকার প্রচ্ছন্ন সমর্থনের ইঙ্গিত দেখছেন।‘ফক্স নিউজ’ দাবি করেছে, হামলার পূর্বাভাস ট্রাম্পের কাছে আগেই ছিল। এমনকি, পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দেশ থেকে মার্কিন কূটনীতিক ও সামরিক আধিকারিকদের সরিয়ে নেওয়ার ঘটনাও এই পরিকল্পনার অংশ বলে ধারণা।
‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর বিস্ফোরক দাবি (Iran Israel Conflict)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ দাবি করেছে, মার্কিন প্রযুক্তি ও অস্ত্র সহায়তা ছাড়া ইজরায়েলের পক্ষে এত গভীর ভূগর্ভস্থ পরমাণু কেন্দ্রে হামলা সম্ভবই নয়(Iran Israel Conflict)। বিশেষত এমন ‘বান্কার বোমা’ বা গভীর প্রবেশ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র শুধু মার্কিন সহায়তায়ই পাওয়া সম্ভব। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, ইরান যদি জবাবি হামলায় নামে, সেক্ষেত্রে আমেরিকা ইজরায়েলের পাশে দাঁড়াবে—এমন ইঙ্গিতও রয়েছে। অতীতে বহুবার দুই দেশের মধ্যে এমন ‘ছায়াযুদ্ধ সহযোগিতা’ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে তারা।

আঘাতের জবাবে হুঁশিয়ারি তেহরানের (Iran Israel Conflict)
এই হামলার পরেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই বিবৃতি দিয়ে বলেন— “ইজরায়েলকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে(Iran Israel Conflict)। তারা যেন খারাপ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকে।” ইরান পাল্টা ড্রোন হামলা চালালেও তা ইজরায়েল প্রতিহত করেছে। একইসঙ্গে ইজরায়েল গোটা দেশে ‘ন্যাশনাল এমারজেন্সি’ জারি করেছে, কারণ পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন: Iran Israel Conflict : ইজরায়েলি হামলায় নিহত ইরানের দুই শীর্ষ সেনাকর্তা, মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা
আলোচনা না সংঘাত? (Iran Israel Conflict)
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝেই ওমানে রবিবার আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে এক বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন সূত্রের দাবি, আলোচনায় যোগ দেবেন ওয়াশিংটনের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ(Iran Israel Conflict)। ইরান অবশ্য বহুদিন ধরেই বলে এসেছে—তারা পরমাণু অস্ত্র নয়, বরং শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তির পক্ষে। তারা নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে তাদের অধিকার রয়েছে। ইজরায়েলি হামলা ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করছে—মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বদলে যুদ্ধের আবহ ক্রমেই ঘনাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, এই সংঘর্ষকে আরও জটিল করে তুলেছে। আগামী কয়েক দিনেই বোঝা যাবে, এই আগুন সীমিত থাকবে, না আরও বিস্তৃত হবে।