ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইরানকে উদ্দেশ্য করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন (Iran vs Trump)। তিনি জানান, যদি ইরান ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে সম্মত না হয়, তাহলে আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকবে। ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমরা আশা করছি যে, ইরান পরমাণু চুক্তি নিয়ে সম্মত হবে, কিন্তু যদি তারা সম্মত না হয়, তাহলে আমেরিকা বোমা হামলা শুরু করবে।” একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর (Iran vs Trump)
২০১৫ সালে বিশ্বশক্তির ছয়টি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি এবং চীন—ইরানের সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল (Iran vs Trump)। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখলে তার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। এই চুক্তিটি ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামে পরিচিত। তবে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি চুক্তি থেকে আমেরিকা বেরিয়ে আসেন। ট্রাম্প দাবি করেন, এই চুক্তি আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর ছিল এবং এর ফলে ইরান অনেক বেশি লাভবান হয়েছে। তার মতে, চুক্তিটি ছিল এক ধরনের ভুল পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে ইরান আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
ইরানকে দেওয়া ট্রাম্পের প্রস্তাব (Iran vs Trump)
দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করার পর ট্রাম্প ইরানকে আবার পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছেন (Iran vs Trump)। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে চিঠি পাঠিয়ে চুক্তি করতে দুটি মাস সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। ট্রাম্পের দাবি, এই সময়সীমার মধ্যে ইরান যদি চুক্তি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে আমেরিকা চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। তবে, ইরান তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। ইরানের সরকার জানিয়েছে, তারা চাপ বা সামরিক হুমকির মধ্যে সরাসরি আলোচনা করতে রাজি নয়, তবে পরোক্ষভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত রয়েছে।
ইরানের পাল্টা প্রস্তুতি (Iran vs Trump)
ট্রাম্পের এমন কঠোর বক্তব্যের পর ইরানও পাল্টা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তেহরান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইরান তাদের বিভিন্ন অঞ্চলে মাটির নিচে ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র যে কোনো মুহূর্তে প্রয়োগ করা যাবে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটি ইরানের পক্ষ থেকে এক ধরনের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যেখানে তারা আমেরিকার যেকোনো হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টা করবে। যদিও ইরান সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে তাদের এই প্রস্তুতি আন্তর্জাতিক মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন: Myanmar Earthquake: মায়ানমারে ১৬০০ ছাড়াল মৃতের সংখ্য়া, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা!
শুল্ক আরোপ
ট্রাম্প আরও বলেছেন যে, যদি ইরান পরমাণু চুক্তিতে সম্মত না হয়, তবে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে কিছু কঠোর শুল্ক আরোপ করবেন। ২০১৮ সালে ট্রাম্প তার প্রথম দফায় ইরানের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার কারণে ইরানের অর্থনীতি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ট্রাম্প আবারো সেই একই পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা ইরানের জন্য আরো বিপজ্জনক হতে পারে।

উত্তেজনা বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে
এতসব উত্তেজনা এবং হুমকির মধ্যে, বিশ্ব রাজনীতিতে ইরান-আমেরিকা সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রেখেছে। পরমাণু চুক্তি নিয়ে চরম মতবিরোধের কারণে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী এই পরিস্থিতি যে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, তা এখন স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, যাতে এই সংকট এক বিশাল সংঘর্ষে রূপ না নেয়।
আরও পড়ুন: Pakistan: মুখ পুড়লো পাকিস্তানের, নাগরিকদের নিরাপত্তায় বেসরকারি সংস্থায় ভরসা চিনের!
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘর্ষ?
ট্রাম্পের এই কঠোর অবস্থান এবং ইরানের পাল্টা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এই পরিস্থিতির সমাধান না হয়, তবে তা কেবল আমেরিকা ও ইরান নয়, বরং পুরো বিশ্বকে এক বৃহৎ সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।