ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ডাকাত সর্দারের প্রতিষ্ঠিত পুজো আজও সুপ্রচলিত, পুজোয় সামিল হয় হাজারো মানুষ। মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জের সদরঘাট সিদ্ধেশ্বরী মন্দির সকলের কাছে সুপরিচিত। আনুমানিক ৫০০ বছরের বেশি সময়ে আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই থানের।
মন্দিরের যারা সেবায়ত তাদের কাছ থেকে শোনা যায়, রঘু ডাকাত সর্দার এই থানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যদিও অরক্ষিত জঙ্গলে ঘেরা ছিল এই এলাকা, পশুরা এখানে বিচরণ করতো, সবচেয়ে বেশী ভয় ছিল বাঘের। সে কারণে কোন পুরোহিত তা সেবায়ত এখানে সেই ভাবে পুজো করতে পারতেন না। সেই সময় ছিল অখন্ড ভারত, বাংলাদেশ থেকে জিয়াগঞ্জে এসে ওঠেন চক্রবর্তী পরিবার। বংশ পরম্পরায় এখন তারাই এই মন্দিরের সেবায়ত।
জীবনের পরোয়া না করে নির্ভয়ে, সংকোচহীন ভাবে, সফলভাবে এই পুজোর শুরু করেছিলেন কৈলাস চন্দ্র ভট্টাচার্য। রঘু ডাকাত সর্দার প্রতিষ্ঠিত মাটি থানের উপর মায়ের পুজো হতো। এরপরে একে একে তার বংশধর শ্রীকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, কালি কিংকর ভট্টাচার্য, তাদের জীবন ভর এই মন্দিরের সেবায়ত হিসাবে ছিলেন। বর্তমানে সুব্রত ভট্টাচার্য মায়ের পুজো করে চলছেন। ওনার মুখ থেকে শোনা যায়, পূর্বে হোগলা পাতার ঘর ছিল, নাড়া দিয়ে তৈরি হয়েছিল ছাউনি এবং মাটির থান ছিল এবং পঞ্চমুন্ডির আশ্রম হিসেবে পরিচিত ছিল।
আরও পড়ুন: https://tribetv.in/kalipuja-2024-iconic-history-of-kalyanewari-mandir-at-asansol/
কারণ মায়ের থানকে পাকাপোক্ত করবার সময় মাটি খুঁড়ে পাঁচটি অবয়ব পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীতে এটিকে মন্দির রূপ দিয়েছিলেন রায় বাহাদুর, নারায়ণ ধারা, বটকৃষ্ণ দত্ত, গোবিন্দচন্দ্র দত্ত, শ্রীপৎ সিং নামক তৎকালীন জমিদারেরা। ওনাদের সহায়তায় মন্দিরে তীরবর্গার ঘর হয়, সামনে নাট মন্দির করা হয়। মন্দির পেছনে একটি পুকুর আছে, সেই পুকুর থেকেই মাটি তুলে আনা হত। তখন অনেক নরকঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে, ধারণা করা হয় ডাকাতেরা তখনকার দিনে নরবলি দিতো। ২০১৮ সাল থেকে সম্পূর্ণভাবে তুলে দেওয়া হয় বলি প্রথা, এখন কেবল প্রতিকী বলি হয়।
এছাড়া দক্ষিণাকালী মতে মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তির পুজো করা হয়। নাটোরের রানী ভবানীর আমলে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ২০০১ সাল থেকে শিলা মূর্তি তৈরি হয়, শিল্পী গণেশ ভাস্কর প্রতিবছরই মূর্তি তৈরি করেন। থানের পাশেই নতুন মূর্তি তৈরি করা হয় এবং কালীপুজোর দিন আমাবস্যা লাগার আগে পূর্বমূর্তি থেকে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে নতুন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তবে বর্তমান পুরোহিত সুব্রত ভট্টাচার্য জানান, গুজরাটের থেকে নিয়ে আসা হয়েছে কষ্টিপাথর, আগামী চার থেকে সাড়ে চার মাসের মধ্যে মায়ের মূর্তি তৈরি করা হবে রাজস্থানের কারিগর দ্বারা। তৈরি হওয়া এই মূর্তি আগামী বছর বিজয় দশমীর দিন থানে থাকা মূর্তির প্রাণ বিসর্জন দিয়ে নামিয়ে নেওয়া হবে তারপর সেখানে কষ্টি পাথরের মূর্তিটি কারিগর দ্বারা বসানো হবে।
আরও পড়ুন: https://tribetv.in/us-republican-candidate-donald-trump-diving-garbage-car-before-the-election/
মাকে সব রকমের ভোগ দেওয়া হয় তবে মাছ বা মাংস এমন কিছু দেওয়া হয় না। সম্পূর্ণ নিরামিষভোগ হয়। কালীপুজোর দিন বহু মানুষের সমাগম ঘটে। বিভিন্ন জায়গা থেকে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আগে নগর পরিক্রমা করলেও এখন আর সেসব হয় না। যেহেতু সদরঘাটের কাছেই মায়ের মন্দির পুজো হয়ে গেলে কেবলমাত্র ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়। নিয়ম নিষ্ঠা মেনে বংশ-পরম্পরায় ভট্টাচার্য পরিবারের মায়ের পুজো করে চলেছেন।