ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পৃথিবীর বৃহত্তম বাঁধ (Largest Dam) নির্মাণ হতে চলেছে ভারত চিন সীমান্তে। এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে চিনের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়। চিনের সীমান্তে বাঁধ নির্মাণ আন্তর্জাতিক কুটনীতি কিনা সেই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন!
কোথায় তৈরি হচ্ছে এই বাঁধ? (Largest Dam)
ভারত-চিন সীমান্তে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর নির্মাণ করা হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম বাঁধটি (Largest Dam)। চিনের নিয়ন্ত্রণে থাকা তিব্বতের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। যার প্রায় ৬০ শতাংশ চিনের তিব্বতে অবস্থিত। বাকি অংশ ভারত ও বাংলাদেশে রয়েছে। এই তিব্বতের ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে তৈরি করা হচ্ছে এই বাঁধ।
কেন এই বাঁধ নির্মাণ? (Largest Dam)
চিন কেন হঠাৎ করে এই বাঁধ (Largest Dam) নির্মাণ করতে গেল? এই প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক! ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে সবচেয়ে বাঁধ তৈরি করার পেছনে অন্য কোনও কুটনীতি নেই তো? চিনের তরফে জানানো হয়েছে এই বাঁধ নির্মাণের অন্যতম কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদন, জল সরবরাহ,বন্যা নিয়ন্ত্রণ সহ উন্নয়নের কাজ করা। তবে এই বাঁধ নির্মাণ যে শুধু উন্নয়ন নয় সেটাই মনে করছে ভারতের কুটনীতিবিদরা।
আরও পড়ুন: Israel Airstrike: ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইয়েমেনের বিমানবন্দরে তীব্র ধ্বংসযজ্ঞ
ভারতের চিন্তার কারণ কী?
চিন সীমান্তে এত বিশাল বাঁধ নির্মাণ করলে তা ভারতকে বেশ কিছু সমস্যায় ফেলতে পারে। প্রথমত, চিন বাঁধের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের বেশি পরিমাণ জল সঞ্চয় করে চিনের অন্যান্য অংশের শহরগুলোতে সরবরাহ করতে পারে। যা ভারতের জন্য বেশ চিন্তার। কেননা, গোটা উত্তর পূর্ব ভারত অনেকটাই ব্রহ্মপুত্র নদের জলের উপর নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে উত্তর পূর্ব ভারতে দেখা দিতে পারে জল সংকট। এছাড়াও আরও একটি চিন্তার কারণ রয়েছে এই বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে।
চিন এই বিশাল বাঁধে অধিক পরিমাণে জল সঞ্চয় করে তা একেবারে ছেড়ে দিতে পারে। এতে উত্তর পূর্ব ভারতে বন্যা দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে ব্রহ্মপুত্র দু’টি পাতের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ফলে সংবেদনশীল ওই এলাকায় নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে কৃত্রিম উপায়ে বাধা দেওয়া হলে ভূমিকম্পের আশঙ্কাও থেকে যায়। এজন্যই এই বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রয়েছে ভারত।

ব্রহ্মপুত্রের জল নিয়ন্ত্রণ করবে বেজিং?
জানা গেছে, চিন ব্রহ্মপুত্রের বাঁকে বাঁধটি তৈরি করতে চলেছে। ফলে ব্রহ্মপুত্রের জল নিজেদের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বেজিং। আর তাতেই চিন্তায় পড়েছে ভারত এবং বাংলাদেশ। চিনের বাঁধ ব্রহ্মপুত্রের স্বাভাবিক প্রবাহকে রুখে দিয়ে বর্ষায় উজানের দিকে আরও জল ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবার গরমের মরসুমে জলের অভাবও দেখা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: Benjamin Netanyahu in Trouble: সারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ, বিরোধীদের হয়রানির অভিযোগ
কত খরচ এই বাঁধ নির্মাণে?
চিন যে বাঁধ ভারত – চিন সীমান্তে তৈরি করছে সেটি পৃথিবীতে তৈরি হওয়া সবচেয়ে বড় বাঁধ হবে। এজন্য এই বাঁধ নির্মাণের খরচও যে বেশ ব্যয় বহুল হবে সেটাই স্বাভাবিক। ভারত-চিন সীমান্তে তৈরি হওয়া এই বাঁধ নির্মাণে খরচ পড়ছে প্রায় ১৩৭ বিলিয়ন ডলার। এই বিশাল অর্থ খরচ করে চিন যে বাঁধ নির্মাণ করছে তার জল ধারণ ক্ষমতা এত বেশি হবে যে তা গোটা উত্তর পূর্ব ভারতের জন্য বেশ চিন্তার।
ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ কী
ভারতের তরফে প্রকাশ্যে কিছু না বলা হলেও, ভারত চিনের পদক্ষেপ গুলোর উপরে নজর রাখছে। ভারত এক্ষেত্রে কিভাবে জল সংকটের সমাধান করবে চিন যদি বাঁধে জল আটকাতে দেয়? এই প্রশ্নের উত্তরও ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। ভারতের তরফে জানানো হয়েছে চিনের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা যেমন উঁচু পার্বত্য এলাকায়, তেমনই ভারতেও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বেশ অনেকটা অংশে পর্বত রয়েছে। এজন্য ভারতও অরুনাচল প্রদেশের ইংকিয়ং-এ ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। যে বাঁধ হবে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁধ। জল ধারণের বিচারের ভারতের বৃহত্তম বাঁধ হিরাকুদে’র পরেই থাকবে এই বাঁধটি। এই বাঁধ উত্তর পূর্ব ভারতের জলের চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

ভারতের বাঁধ নির্মাণে খরচ কত?
জানা গেছে,ভারত ব্রহ্মপুত্র নদের উপর অরুনাচল প্রদেশের ইংকিয়ং-এ যে বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে তার জন্য খরচ হবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। যা চিনের তৈরি বাঁধের থেকে অনেক সস্তা। এই বাঁধের ১০ বিলিয়ন ঘন মিটার জল ধারণ ক্ষমতা থাকবে।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের কী জানিয়েছে?
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দেশের উন্নয়ন ও সবুজ শক্তি নির্মাণের জন্যই চিন এত বিশাল অর্থ খরচ করে এই বাঁধ নির্মাণ করছে। এরসঙ্গে কুটনৈতিক সম্পর্কের কোনো যোগ নেই। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হবে জল সঞ্চয় ও সরবরাহ করা। তবে এই বাঁধ নির্মাণের প্রত্যেকটি পদক্ষেপের উপর কড়া নজর রাখছে ভারত।