ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: এক সাক্ষাৎকারে তিনি (Lata Mangeshkar) বলেছিলেন, “যেইগানে সুর নেই, সেই গান গাইতে আমার খুব অসুবিধা হয়।” যার ‘আওয়াজ’ই তাঁর নিজের ‘পেহচান’, সেই সুরসম্রাজ্ঞী ২০২২ সালে আজকের দিনেই পাড়ি দিয়েছিলেন সুরলোকে।
সুরের সরস্বতী (Lata Mangeshkar)
দেশাত্মবোধক গান ‘বন্দেমাতরম’ হোক বা (Lata Mangeshkar) প্রেমের গান ‘মেরে খোওয়াবো মে জো আয়ে’, সবেতেই তাঁর সুরের মূর্ছানা ঝরে পড়েছে। নিজেকে কখনোই টাইপকাস্ট হতে দেননি লতাজি। । ‘পেয়ার কা নাগমা’, ‘রহে না রহে হাম’ -এর মত বিরহ ঘেঁষা গানেও তিনিও সেরা। আজও সেইসব গান কানে এলে নিমেষেই ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে মন।
লতাজির জীবনে আসেনি প্রেম? (Lata Mangeshkar)
সারাজীবন সঙ্গীতকেই ভালোবেসে এসেছিলেন লতাজি (Lata Mangeshkar) । ভালোবেসে মন দেননি কাউকে। অন্তত প্রকাশ্যে তাঁর ভালোবাসার জীবন নিয়ে কোনও কথা আসেনি। তবে গুঞ্জন শোনা যায় বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি রাজ সিং ডুঙ্গারপুরকেই মন দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গলায় সুর থাকলেও তাঁর গায়ে ছিল না কোনও রাজরক্ত। তাই রাজ সিং-এর পরিবারের তরফে মেনে নেওয়া হয়নি তাঁকে।
বিবাহিত না হয়েও সিঁদুর পড়তেন তিনি
২০১৩ সালে এক কাছের মানুষের শিল্পী তবষ্যুম লতাজির সিঁথিতে সিঁদুর দেখে খুব অবাক হয়েছিলেন। তবষ্যুম লতাজিকে জিজ্ঞাসা করায় লতাজি বলেছিলেন গানকে ভালোবেসেই মাথায় সিঁদুর পরেন তিনি। তাঁর জীবনে গানই সব। গান ছাড়া তাঁর জীবনে দ্বিতীয় কোনও ভালোবাসা নেই।

টাকা-পয়সা নয় সম্মানই শেষ কথা
ইন্ডিয়ান আইডল নামক এক হিন্দি ভাষার সংগীত প্রতিযোগিতার মঞ্চে বিশেষ অতিথির আসন গ্রহণ করেছিলেন লতাজির দিদি আশা ভোঁসলে। আশাজি কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন যে, লতাজিকে যতই টাকা দেওয়া হোক না কেন, তিনি কিছুতেই কারোর বিয়ের মঞ্চে উঠে গান গাইতে গাইতেন না। তিনি এই বিষয়টাকে নিজের অসম্মান বলে মনে করতেন। যদি কোনও বিশেষ ধনী ব্যক্তি অনুরোধ করতেন, গান গাইতে হবে না, শুধু একবার লতাজি যদি বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও দেখা দেন, তাঁকে যথোচিত সম্মান অর্থ দেওয়া হবে, তাও রাজি হতেন না লতাজি।
গান ছাড়াও করেছেন সঙ্গীত পরিচালনা
১৯৫৫ সালে মারাঠি ছবি ‘রাম রাম পাভহানে’-তে সঙ্গীত পরিচালনা করেন লতাজি ৷ ‘মারাঠা তিতুকা মেলভাভা’ সিনেমাতেও সুর দিয়েছিলেলন তিনি। ভাজি পেনধরকর পরিচালিত ‘মোহিত্যাঞ্চি মঞ্জুলা’, ‘সাধি মানসে’, ‘তামবাড়ি মাটি’-না এই সিনেমাগুলিতেও সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন তিনি।
সুরে সুরে বাঁধা তাঁর জীবন
ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকর ৩৬টিরও বেশি ভাষায় ৩০ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন। তবে তাঁর জীবনের প্রথম ছবির গান গাইতে গিয়েই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মুম্বাইয়ের স্টুডিওতে ছিল মারাত্মক গরম, ফ্যানও ছিল বন্ধ। সেই কারণেই শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
‘ভারতরত্ন’ লতা মঙ্গেশকর
২০০১ সালে তিনি দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’-এ ভূষিত হন। পরিচয় চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮২ সালে, ১৯৭৪ সালে কোরা-কাগজ চলচ্চিত্রের জন্য এবং ১৯৯০ সালে লেকিন চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক গানের জন্য ৩ বার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হওয়ার পরেও লতা মঙ্গেশকর খুবই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন। শোনা যায়, প্রায় ১১১ কোটি টাকার মালিক ছিলেন ‘নাইটেঙ্গেল অফ ইন্ডিয়া’ ৷ আজ থেকে তিন বছর আগে, আজকের দিনেই ৯২ বছর বয়সে সুরলোকে পাড়ি দেন লতাজি।