ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আসন্ন পৌষ পার্বণ। বাংলার মানুষদের কাছে পৌষ পার্বণ মানেই কিন্তু আলাদা উন্মাদনা। একদিকে যেমন গঙ্গাসাগর স্নান, ঠিক তেমনই পিঠে পুলির পাহাড়। বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন রকমারি পিঠে। একেবারে সহজ রেসিপি (Pithe Recipe) রইল। ঝটপট দেখে নিন। আট থেকে আশি চেটেপুটে প্লেট সাফ করবে। কথা দিলাম!
শীতকাল মানেই খাওয়া দাওয়ার আদর্শ সময়। নোনতা হোক বা মিষ্টি পেটপুজো চলে সারা শীতজুড়ে। গ্রাম বাংলার এইসময় ঘরে ঘরে আউশ ধান গোলায় ওঠে। আর সেই নতুন চালেই পিঠে তৈরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করে বাঙালি। মা-ঠাকুরমাদের মতো সুনিপুণ না হলেও আজকের প্রজন্মের অনেকেই কিন্তু স্বজাতির ঐতিহ্য বজায় রাখতে মরিয়া। তাদের জন্যই রইল কিছু পিঠের (Pithe Recipe) রেসিপির হদিশ। তৈরি করতে পারলেই বুঝবেন নিজেদের ঐতিহ্য আপনি আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিয়ে যেতে পারবেন। পৌষ পার্বণের পিঠের পর্ব বন্ধ হয়ে যাবে না।
আরও পড়ুন: Local Train Cancel News: বছরের শুরুতেই রেলে ভোগান্তি, ১০০ ঘন্টা বন্ধ ট্রেন পরিষেবা
পাটিসাপটা (Pithe Recipe)
পিঠেদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মনে হয় পাটিসাপটা। অন্যান্য পিঠের তুলনায় এটি তৈরি করা সহজ এবং খেতেও সুস্বাদু। আজকাল মিষ্টির দোকানে পাটিসাপটা বিক্রি হলেও বাড়ির তৈরি পাটসাপটার কোনও তুলনা হয় না।
উপকরণ
চালের গুঁড়ো- ১ কাপ, ময়দা- অর্ধেক কাপ, সুজি- ১/৪ কাপ, দুধ- ১ কাপ, নুন- এক চিমটি, খেজুরের গুড়- অর্ধেক কাপ, ঘি বা সাদা তেল- ২ টেবিল চামচ
ক্ষীরের পুরের উপকরণ
গুড়- ১/৩ কাপ, নারকেল কোরা- ১ কাপ, ক্ষোয়া ক্ষীর- ১ কাপ,
প্রণালী
প্রথমে চালের গুঁড়ো, ময়দা, সুজি, দুধ এবং নুন একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার তাতে তরল খেজুরের গুড় ভালো করে মিশিয়ে নিন। খুব ভালো করে ব্যাটার তৈরি করুন (Pithe Recipe)। ব্যাটারটি ঘন এবং পাতলার মাঝামাঝি হবে। ব্যাটারটি ঢাকা দিয়ে রেখে দিন। এবার কড়াই গরম করে তাতে নারকেল দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকুন। এরপর এতে মেশান ক্ষোয়া ক্ষীর এবং গুড়।খুব ভালো করে পাক দিতে থাকুন। তবে পাক যেন শক্ত না হয়।
এবার পাটিসাপটা তৈরির পালা। চালু বা ফ্রাইং প্যানে তেল ব্রাশ করে নিন। তেল গরম হলেই তাতে গোল হাতা দিয়ে গোল করে ব্যাটারটি দিয়ে সাবধানে সেটি ছড়াতে থাকুন। আঁচ একেবারেই কমিয়ে রাখবেন। এবার পাটিসাপটার মাঝে লম্বা করে ক্ষীরের পুর বা ক্ষীরসাটি লম্বা করে দিয়ে দিন। তারপর অনেকটা অমলেটের মতো করে ভাঁজ করে নিন। আরও কয়েক মিনিট উলটে পালটে ভেজে নামিয়ে নিন পাটিসাপটা। গরম গরম কিংবা বাসি পাটি সাপটা দুই অবস্থাতেই দারুণ খেতে লাগে।

পুলি পিঠে (Pithe Recipe)
সুস্বাদু পুলি পিঠের অনেক রকম প্রকার হয়। যেমন নারকেলপুলি, দুধপুলি, ঝালপুলি, ভাপাপুলি এবং ক্ষীরপুলি। এখন নারকেল পুলির রেসিপি দেওয়া হল।
উপকরণ
নারকেল কোরা- ১টি গোটা নারকেল, চালের গুঁড়ো- ৫০০ গ্রাম, গুড়- ১ কাপ, ময়দা- ১/৪ কাপ, জল- ১ কাপ, তেল পরিমাণমতো
প্রণালী
কড়াইয়ে নারকেল কোড়া এবং গুড় একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে পুর তৈরি করে নিন। নারকেলের জল যেন পুরো শুকিয়ে যায়। নারকেলের পুর একেবারে শুকনো হবে। জল গরম করে তাতে চালের গুঁড়ো এবং ময়দা দিয়ে ভালো করে গুলি নিন। চালের গুঁড়ো সিদ্ধ হয়ে গেলে সেটি নামিয়ে সাবধানে ডো তৈরি করে ফেলুন। ছোটো ছোটো লেচি করে লুচির মতো করে বেলে নিন। খেয়াল রাখবেন বেশি পাতলা যেন না হয়।
লুচির ভিতরে নারকেলের পুর দিয়ে অর্ধেক ভাঁজ করে জল দিয়ে মুখটা বন্ধ করে দিন। অনেকটা মোমোর মতো। পুলি পিঠে তৈরির ছাঁচও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এবার প্যান গরম করে ডুবো তেলে পিঠে ভেজে নিন।
আরও পড়ুন: Winter Coffee: শীতের সকালে কফির কাপে চুমুক, রইল ৫ কফির সন্ধান…
ভাপা পিঠা (Pithe Recipe)
উপকরণ
চালের গুঁড়ো- এক কাপ, খেজুরের গুড়- পরিমাণ মতো, নারকেল কোরা- পরিমাণ মতো, জল।
প্রণালী
একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো নিয়ে তাতে সামান্য জল ছিটিয়ে ঝরঝরে করে মেখে নিন। চাইলে এর সঙ্গে সামান্য নুন মেশাতে পারেন।ভাপা পিঠে তৈরির নির্দিষ্ট পাত্র থাকে। সেটি না থাকলে ইডলি তৈরির পাত্রেও ভাপা পিঠে তৈরি করতে পারেন। পাত্রে গরম করে উপরে ইডলির পাত্র রাখবেন। তার আগে নির্দিষ্ট স্থানে ধরধরে চালের গুঁড়ো ইডলির আকারে গড়ে তাতে রেখে দিন। উপরে ছড়িয়ে দিন নারকেল কোরা এবং গুড়।
আবার চালের গুঁড়োর মাঝে নারকেল-গুড়ের পুর ভরেও ইডলির পাত্রে ভাপিয়ে নেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কচুরিতে পুর ভরার মতো করে চালের গুঁড়োয় নারকেল-গুড়ের পুর ভরে দুই হাত দিয়ে চেপে দিন। তারপর সেটি ইডলির পাত্রে রেখে দিন। গরম জলের ভাপে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভাপা পিঠে তৈরি হয়ে যাবে। ভাপা পিঠে খাওয়ার সময় উপর দিয়ে তরল গুড় ছড়িয়ে দিলে বেশ লাগে।

চিতই পিঠে (Pithe Recipe)
চিতই পিঠের সঙ্গে অনেকটা গোলা রুটির মিল আছে। আর মজার কথা হল এটি মিষ্টি বা নোনতা দুই রকম ভাবেই খোয়া যায়।
উপকরণ
আতপ চাল- ৩ কাপ, নুন পরিমাণ মতো, খেজুরের গুড়- আড়াই কাপ, দুধ- ২ লিটার, দারচিনি ২-৩টি, এলাচ- ২টি, জল- ৩ কাপ, কাজু-কিসমিস
প্রণালী
আতপ চাল ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর মিহি করে বেটে সামান্য নুন দিয়ে ঘণ্টাখানেক রেখে দিন। এরপর মিশ্রণে পরিমাণমতো উষ্ণ গরম জল দিয়ে ব্যাটার তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন, ব্যাটার যেন খুব ঘন কিংবা পাতলা না হয়। চিতই পিঠে সবচেয়ে ভালো হয় মাটির তাওয়াতে। আজকাল হয়তা তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই লোহা বা ননস্টিক প্যানেও কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। তাওয়া গরম করে তাতে সাদা তেল ব্রাশ করে নিন। এরপর একটা হাতা দিয়ে চালের ব্যাটার গরম তেলে দিয়ে হালকা করে গোলাকারভাবে ছড়িয়ে দিন। সঙ্গে সঙ্গে তাওয়ায় ঢাকনা দিয়ে তার উপর সামান্য জল ছিটিয়ে দেবেন। ৩ থেকে ৪ মিনিট পর পিঠে তুলে ফেলুন।
পিঠের রস তৈরির জন্য খেজুরের গুড় জলে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে নিন। মিশ্রণটি ফুটে উঠলে এলাচ, দারচিনি, কাজু এবং কিসমিস দিয়ে নামিয়ে ফেলুন। এবার সেটি একদম ঠান্ডা করে তাতে দুধ মিশিয়ে নিন। গরম অবস্থায় একেবারেই দুধ দেবেন না।
দুধ হাতা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফের জ্বাল দিন। ২ লিটার দুধ ঘন হয়ে যখন ১ লিটার করে নিতে হবে। গরম অবস্থাতেই পিঠেগুলি দুধের রসে দিয়ে কম করে ৫-৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পরিবেশন করুন। সারারাত ডুবিয়ে রাখলে আরও ভালো।
আবার চিতই পিঠা দিয়ে কোনও নোনতা তরকারি যেমন, আলুর তরকারি, আলু ফুলকপির তরকারি এমন কী মাংসের কিমা দিয়েও খেতে ভালো লাগে।
আরও পড়ুন: Beet Root Recipe: পুষ্টিগুণে ভরপুর বিটরুট, জেনে নেন বিটের সুস্বাদু ৪ রেসিপি
মালপোয়া (Pithe Recipe)
শীতকালে পিঠে তো খাবেনই। কিন্তু সঙ্গে মালপোয়া না হলে শীতটা ঠিক জমবে না বস্। তাহলে তার রেসিপিটাও একবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক।
উপকরণ
ময়দা- ১ কাপ, সুজি- ১ কাপ, চিনি- ১/২ কাপ, দুধ- ১ কাপ, মৌরি- সামান্য, ঘি বা সাদা তেল
সিরার জন্য
চিনি- ১ কাপ, জল
প্রণালী
ময়দা, সুজি, চিনি এবং মৌরি একটি বড় পাত্রে নিয়ে শুকনো অবস্থায় মিশিয়ে নিন। এবার এতে দুধ দিয়ে গোলা তৈরি করুন। গোলা বেশি ঘন হয়ে গেলে আরেকটু দুধ দিয়ে ফেটিয়ে নিতে পারেন। গোলা ঘণ্টা খানেক ঢাকা দিয়ে রেখে দিন। এবার সিরা তৈরি করে নিন। পাত্রে এক কাপ জলে এক কাপ চিনি দিয়ে ফুটিয়ে নিন।
চিনি যেন পুরোপুরি মিশে যায়। এতে দুই তিনটি এলাচ দিয়ে দিতে পারেন। সিরা আলাদা করে রাখুন। এবার কড়াইয়ে তেল বা ঘি গরম করে হাতা দিয়ে ব্যাটার দিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিন। সোনালি-বাদামি রং হয়ে গেলে নামিয়ে নেবেন। অনেকে রস ছাড়া মালপোয়া ভালোবাসেন। তাঁরা সিরা ব্যবহার করবেন না। আর যাঁরা রসে ডোবানো মালপোয়া পছন্দ করেন তাঁরা গরম মালপোয়া এক মিনিট সিরায় ডুবিয়ে তুলে ফেলুন।