ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে (Russia-Ukraine War) নতুন মোড়! ইউক্রেনের সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে কিম জং উনের বিশাল সেনা বাহিনী। এমনই দাবি করছে মার্কিন পেন্টাগন। ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার কুরস্ক এলাকায় ১০ হাজার উত্তর কোরিয়ান সেনা মোতায়েন করা রয়েছে বলে দাবি করচ্ছে মার্কিন পেন্টাগন।
পেন্টাগনের দাবি (Russia-Ukraine War)
মার্কিন পেন্টাগন আরও দাবি করছে, প্রায় ৩ হাজার উত্তর কোরিয়ান সেনা ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে রাশিয়া – ইউক্রেন সীমান্ত এলাকায়। পেন্টাগনের এমন দাবির পরেই, নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
কী বলছেন বাইডেন
এই ঘটনা নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, জো বাইডেন জানান, তিনি ইউক্রেন রাশিয়া সীমান্তে উত্তর কোরিয়ান সেনা মোতায়েনের (Russia-Ukraine War) বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। যদি উত্তর কোরিয়ার বাহিনী ইউক্রেন সীমান্ত পার করে ইউক্রেনে প্রবেশ করে তাহলে পাল্টা উত্তর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরও বলেন, তিনি ইউক্রেন সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। কিম জং উনের বাহিনী সীমান্ত পার করে ইউক্রেনের মাটিতে পা রাখলে পাল্টা উত্তর দেবে ইউক্রেন। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে আবারও ইউক্রেনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সবথেকে বড় প্রশ্ন (Russia-Ukraine War)
কিন্তু, এই মুহূর্তে সব চেয়ে বড় প্রশ্ন আদেও কি সীমান্ত পার করে ইউক্রেনের মাটিতে পা রাখবে কিমের সেনা বাহিনী? এবার কী তবে রাশিয়ার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করবে উত্তর কোরিয়া? ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এমনকি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেই রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। আবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনও চলতি বছরেই উত্তর কোরিয়া সফরে গিয়েছিলেন। রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এই দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক সামরিক চুক্তিও। যুদ্ধের সময় রাশিয়ার প্রয়োজনে সেনা পাঠানোর মতো একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এই দুই দেশের মধ্যে।
আরও পড়ুন: Israel Threaten Hezbollah: ‘নট ফর লং’, হিজবুল্লার নতুন নেতাকে কড়া বার্তা ইজরায়েলের
মিসাইল টেস্ট
এছাড়াও, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের মাঝেই বেশ কয়েকটি মিসাইল টেস্ট করেছিল উত্তর কোরিয়া। একাধিক বার পশ্চিমী দেশগুলিকে হুমকিও দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট কিম। তাহলে কী দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে রাশিয়ার পাশে দাঁড়াতে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে নামবে কিমের বাহিনী?
কী বলছে কূটনৈতিক মহল?
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে এই নিয়ে বেশ চর্চা শুরু হয়েছে। তবে কূটনৈতিক মহল অবশ্য বলছে, রাশিয়ার সীমান্তে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে সীমান্ত এলাকায় এই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও এরপর দু’পক্ষ প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে নামবে কী না তার উপর নির্ভর করবে যুদ্ধের গতি কোন দিকে যাবে।
পশ্চিমী সংবাদ
অন্যদিকে পশ্চিমি সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন উত্তর কোরিয়ান সেনার একটি ছোট্ট বাহিনী ইতিমধ্যেই সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনের মাটিতে প্রবেশ করেছে। এমনকি ওই রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে পূর্ব রাশিয়ায় ট্রেনিং নিচ্ছে উত্তর কোরিয়ান সেনা। সেই ট্রেনিং শেষ হলে আরও বেশি সংখ্যক উত্তর কোরিয়ান সেনা সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে প্রবেশ করতে পারে। তাদের দাবি, ইউক্রেনের অভ্যন্তরে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে ন্যাটো এবং পেন্টাগন।
আরও পড়ুন: Israel Attack: লেবাননে IDF বিমান হামলা, হত অন্তত ৮
রাশিয়ায় ট্রেনিং কোরিয়ার সেনার
প্রায় ১০,০০০ উত্তর কোরিয়ার সৈন্য রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে যাওয়ার পথে পূর্ব রাশিয়ায় ট্রেনিং নিচ্ছে। ইউক্রেনের সেনারা এবছর অগস্ট থেকে কুরস্কের অভ্যন্তরে বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে রেখেছে। সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে দাবি, একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন উত্তর কোরিয়ার সেনারা ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের অভ্যন্তরে রয়েছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও নিশ্চিত করে বলেনি ইউক্রেনের অভ্যন্তরে উত্তর কোরিয়ার সেনারা রয়েছে কিনা। এর আগে দক্ষিন কোরিয়া অভিযোগ তুলেছিল উত্তর কোরিয়ান সেনা বাহিনী রাশিয়ায় মোতায়েন করা হচ্ছে। যদিও এর পরেও প্রকাশ্যে এই নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেনি আমেরিকা।
আমেরিকা-কোরিয়া বৈঠক
এরই মধ্যে আমেরিকা ও দক্ষিন কোরিয়ার কূটনৈতিক স্তরে বৈঠক হয়। যে বৈঠকে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে সামরিক বর্ধিত সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এছাড়া উচ্চপদস্থ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা অ্যান্দ্রে ইয়ার্মাক আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান ও স্টেট সেক্রেটারি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে রাশিয়ায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া উত্তর কোরিয়ার সেনা বাহিনীর বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
ন্যাটো হেডকয়ার্টারে দক্ষিন কোরিয়া
এদিকে দক্ষিন কোরিয়ার কর্মকর্তা ‘ন্যাটো’র হেডকোয়াটারে গিয়ে জোটের সদস্যদের রাশিয়া সীমান্তে উত্তর কোরিয়ান সেনা বাহিনী মোতায়েন নিয়ে ব্যাখ্যা করেন। এরপর ‘ন্যাটো’র সদস্যরা মনে করছেন, ইউক্রেন সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের কারণে দক্ষিন কোরিয়া ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা করতে পারে। যদিও দক্ষিন কোরিয়ার দীর্ঘ নীতি রয়েছে যুদ্ধে কোনও দেশকে সামরিক সহায়তা না করা। কিন্তু, দক্ষিন কোরিয়া ইতিমধ্যেই ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা করার ইঙ্গিত দিয়েছে।
কী বলছেন দক্ষিন কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ‘ইউন সুক ইওল’ বলেন, “যদিও আমরা সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ না করার নীতি বজায় রেখেছি, আমরা উত্তর কোরিয়ার সামরিক কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে আমাদের অবস্থান নমনীয়ভাবে পর্যালোচনা করতে পারি।“ তবে উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের কারণে দক্ষিন কোরিয়া নিজেদের দীর্ঘ নীতি পরিবর্তন করতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের একাংশ।