ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। বাংলা জুড়ে শীতের আমেজ। আর শীতকাল মানেই উরু উরু মন। ঘুরতে যেতে কোন অজুহাত লাগে না বাঙালির। এবার শীতে বাঁকুড়া (Travel Destination Bankura) জেলাই হয়ে উঠতে পারে আপনার সপ্তাহান্তের ওয়ান স্টপ ডেস্টিনেশন।
ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য বাঁকুড়া (Travel Destination Bankura) জেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র মনিমুক্ত। পাহাড়, জঙ্গল, নদী থেকে শুরু করে প্রাচীন মন্দির সব কিছুরই দেখা মিলবে এই বাঁকুড়ায়। শীতের মরসুমে ঘুরে আসার জন্য তেমনই পাঁচ জায়গার সন্ধান রইল আপনার জন্য।
শুশুনিয়া (Travel Destination Bankura)
রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে বরাবরই বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বাঁকুড়া (Travel Destination Bankura) জেলার। আর সেই বাঁকুড়ার ছাতনার অন্যতম পর্যটনস্থল শুশুনিয়া (Susunia) । বিষ্ণুপুর থেকে ঘণ্টা দেড়েকের পথ শুশুনিয়া। পশ্চিমবঙ্গের ‘প্রাচীনতম’ পাহাড় শুশুনিয়ার কোলে আপনি খুঁজে পেতে পারেন বাংলার নৈসর্গিক দৃশ্য।
আরও পড়ুন: Offbeat Tour: উইকেন্ডে কাটুক একান্তে, প্রিয়জনের সঙ্গে ঘুরে আসুন পাপড়খেতি
পাহাড়ের নীচ দিয়ে অবিরাম বয়ে চলেছে গন্ধেশ্বরী। আর চারিদিকে রয়েছে শাল, পলাশ, অর্জুন, মহুয়া। কান পাতলে শোনা যায় পাখিদের কলরব। আর পাহাড়ের জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রহস্যময় জীবাশ্ম। শুশুনিয়ার গায়ে খোদিত শিলালিপি, আজও ‘শুশুনিয়া লিপি’-র ইতিহাস বহন করে চলেছে। পাহাড়ের কোলে হারিয়ে যেতে চান কিংবা বাংলার ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান, একবেলা কাটিয়ে যেতে পারেন এখানে।
বিষ্ণুপুর (Travel Destination Bankura)
প্রাচীন মন্দির দেখার ইচ্ছে থাকলে কিংবা ইতিহাসপ্রেমী হলে ঘুরে আসতে পারেন বাঁকুড়ার (Travel Destination Bankura) বিষ্ণুপুর থেকে। কলকাতা থেকে ১৫২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর (Bishnupur)। বিষ্ণুপুর টেরাকোটা, পোড়া মাটির মন্দির দেখে ছুটি কাটাতে পারেন এখানে। সাক্ষী হতে পারবেন বাংলার ইতিহাসের। বিষ্ণুপুর এত মন্দির রয়েছে যে ঘুরে দেখার জন্য একটা গোটা দিন দরকার।
বিষ্ণুপুরের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল রাসমঞ্চ, শ্যামরাই মন্দির, কেষ্টরাই বা জোড়বাংলা মন্দির, রাধাশ্যাম মন্দির, রাধা লালিজু মন্দির, মৃন্ময়ী মন্দির, নন্দলাল মন্দির, রাধাগোবিন্দ মন্দির, রাধামাধব মন্দির, কালাচাঁদ মন্দির। বিষ্ণুপুরেই রয়েছে ১৭৪২ সালে তৈরি বিশালাকার দলমাদল কামান। কথিত আছে বাংলায় মারাঠা আক্রমণের সময় রাজা মদনমোহন স্বহস্তে এই কামানের সাহায্যে মারাঠা বাহিনিকে পরাস্ত করেছিলেন।
জয়পুর (Travel Destination Bankura)
শহুরে কোলাহল ছাড়িয়ে, নিরিবিল প্রান্তরে দু’ দণ্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে একদিনের সফরে ঘুরে আসুন জয়পুরের জঙ্গল (Jaypur Forest) থেকে। কলকাতা থেকে জয়পুর জঙ্গলের দূরত্ব ১২৯ কিলোমিটার। যাঁরা ছুটির দিনে লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন তাঁদের জন্য আদর্শ হল এই রুট। লং ড্রাইভে গেলে বিষ্ণুপুরের আগেই পড়বে জয়পুরের জঙ্গল। রাস্তার দু’পাশে শাল, সেগুন, বহেড়া, মহুয়ার সারি। জঙ্গলের থাকার জন্য রিসর্ট, লজ, হোটেলও রয়েছে। চাইলে বিষ্ণুপুরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিস্ট লজেও থাকতে পারেন। গভীর জঙ্গলে ঢুকলে হাতি বা চিতল হরিণের দেখা মিলতেও পারে।
আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর ভূতুড়ে ভারতের শেষ রাস্তা, একবার ঘুরে আসতেই পারেন
মুকুটমনিপুর (Travel Destination Bankura)
শীতের উইকেন্ড কাটাতে পারেন জল, জঙ্গল আর পাহাড়ি সৌন্দর্যে ঘেরা ‘বাঁকুড়ার রানি’ মুকুটমণিপুরে (Mukutmonipur)। বাঁকুড়া শহর থেকে মুকুটমণিপুরের দূরত্ব মাত্র ৫৫ কিলোমিটার। শীতের শুরু থেকেই পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে এখানে। একদিনে ঘুরে নিতে পারবেন মুশাফিরানা, ডিয়ার পার্ক, পরেশনাথ, শিব মন্দির, বারো ঘুটু পাহাড়, সোনার বাংলা এবং কংসাবতী-কুমারীর সঙ্গমস্থল। তবে সেখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নৌকাবিহারে সূর্যাস্ত দেখা।
বিহারীনাথ পাহাড় (Travel Destination Bankura)
আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হন কিংবা ট্রেক করতে ভালবাসেন তাহলে ঘুরে আসুন বাংলার আদিম পাহাড় বিহারীনাথে। সমুদ্রতল থেকে ৪৫১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই পাহাড়টি বাঁকুড়া জেলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এটি পূর্বঘাট পর্বতমালার অংশ। ঘন সবুজ বনানী, মনোরম পরিবেশ এবং মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে ভরা এই স্থানটি পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। বিহারীনাথ পাহাড়ে (Biharinath Hill) পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের থাকার ব্যবস্থা।এখানে ঘুরে দেখতে পারেন বিহারীনাথ মন্দির, পাহাড়ি ঝর্ণা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রামদা ঝর্ণা, সীতা ঝর্না এবং লক্ষ্মণ ঝর্না।
তাহলে আর দেরি কেন, পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন বাঁকুড়া ভ্রমণে।