ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে কিউবায় অবস্থিত গুয়ানতানামো বে-তে (Guantanamo Bay) নতুন একটি অভিবাসী আটক কেন্দ্র তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, এই কেন্দ্র ৩০,০০০ অবৈধ অভিবাসীকে আটক রাখতে সক্ষম হবে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই কেন্দ্র “মার্কিন জনগণের জন্য বিপজ্জনক” সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ অবৈধ অভিবাসীদের জন্য তৈরি করা হবে।
গুয়ানতানামো বে-তে নতুন আটক কেন্দ্র (Guantanamo Bay)
গুয়ানতানামো বে (Guantanamo Bay) আগে থেকেই মার্কিন নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি। সেখানে আগে থেকেই উচ্চ নিরাপত্তা বিশিষ্ট একটি সামরিক কারাগার আছে।
কিন্তু নতুন কেন্দ্রটি হবে সম্পূর্ণ আলাদা। এটি মূলত অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ বিভাগ (ICE) দ্বারা পরিচালিত হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের “বর্ডার জার” টম হোমান বলেছেন, গুয়ানতানামোতে (Guantanamo Bay) আগে থেকে থাকা অভিবাসী আটক কেন্দ্রকে সম্প্রসারিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, যে অভিবাসীদের মার্কিন কোস্টগার্ড সমুদ্রে আটক করবে, তাদের সরাসরি গুয়ানতানামোতে পাঠানো হবে।
কবে এই কেন্দ্র চালু হবে বা এর জন্য কত খরচ হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন: Viral Video Washington Crash: ওয়াশিংটনে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে যাত্রীবাহী বিমান, ভাইরাল ভিডিয়ো!
কিউবার নিন্দা (Guantanamo Bay)
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পরপরই কিউবার সরকার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে (Guantanamo Bay)। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ-ক্যানেল বলেছেন, “নতুন মার্কিন সরকার নির্মমতার পরিচয় দিয়েছে। তারা গুয়ানতানামোতে জোর করে বিতাড়িত অভিবাসীদের আটক করবে, যা একটি অবৈধভাবে দখল করা কিউবার ভূখণ্ড।”
কিউবার বিদেশমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেজ বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞার পরিচয় দেয়।”
লাকেন রাইলে আইন ও ট্রাম্পের বক্তব্য
ট্রাম্প এই ঘোষণা “লাকেন রাইলে আইন” স্বাক্ষরের সময় করেছেন। নতুন এই আইন অনুযায়ী, যে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চুরি বা হিংসাত্মক অপরাধের অভিযোগ আছে, তাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জেলে আটকে রাখা হবে।
ট্রাম্প বলেন, “অনেক অভিবাসী এতটাই বিপজ্জনক যে আমরা তাদের নিজেদের দেশেও ফেরত পাঠাতে পারি না, কারণ সেখান থেকে তারা আবার ফিরে আসতে পারে। তাই আমরা তাদের গুয়ানতানামোতে পাঠাব। এটা এমন একটা জায়গা, যেখান থেকে পালানো কঠিন।”
তিনি আরও বলেন, এই কেন্দ্র তৈরি হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী আটক রাখার ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে।
আরও পড়ুন: Plane Crash In South Sudan: উড়েই ভেঙে পড়ল বিমান, দক্ষিণ সুদানে মৃত ২০
গুয়ানতানামোতে অভিবাসী আটক ব্যবস্থা আগেও ছিল
গুয়ানতানামোতে আগেও অভিবাসীদের আটক রাখা হতো। গুয়ানতানামো মাইগ্র্যান্ট অপারেশন সেন্টার (GMOC) নামে পরিচিত একটি কেন্দ্র বহু বছর ধরে অভিবাসীদের আটকে রেখেছে।
২০২৪ সালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোজেক্ট (IRAP) অভিযোগ করেছিল যে, সেখানে আটক অভিবাসীদের “অমানবিক” পরিবেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দি রাখা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা ও অর্থ সাহায্য
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, নতুন সম্প্রসারিত কেন্দ্রটি হবে একটি সম্পূর্ণ নতুন অভিবাসী আটক শিবির। এর জন্য কংগ্রেসের কাছে অর্থ চাওয়া হবে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন, “এই অর্থ বাজেটের পুনর্বিবেচনা ও বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে আসবে।”
গুয়ানতানামো কারাগার: এক বিতর্কিত অধ্যায়
গুয়ানতানামোতে একটি উচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট সামরিক কারাগার রয়েছে। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সন্ত্রাসবাদীদের আটক রাখতে শুরু করে।
একসময় শত শত বন্দি সেখানে রাখা হতো। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং অন্যান্যরা এটি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তবে এখনো এটি চালু রয়েছে। বর্তমানে ১৫ জন বন্দি সেখানে আটক রয়েছেন।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকেও কড়া সমালোচনা এসেছে। বহু মানবাধিকার সংস্থা গুয়ানতানামোর অস্তিত্বের বিরোধিতা করে আসছে। তারা বলছে, সেখানে আটক ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নেই এবং তারা বছরের পর বছর বিনা বিচারে আটক থাকেন। এখন ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন পরিকল্পনা গুয়ানতানামোকে আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
তীব্র সমালোচনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প গুয়ানতানামো বে (Guantanamo Bay)-তে ৩০,০০০ অভিবাসী ধারণক্ষমতার নতুন একটি কেন্দ্র তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। কিউবার সরকার এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। এই কেন্দ্র কবে তৈরি হবে এবং এর ব্যয় কত হবে, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এটি দ্রুত চালু করতে চায় এবং এর জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন চাইবে। বিশ্ব এখন দেখছে, এই পরিকল্পনা কতটা সফল হবে এবং এটি অভিবাসন নীতিতে কী পরিবর্তন আনবে।