ত্রয়ণ চক্রবর্ত্তী, কলকাতা: সামনেই পশ্চিমবঙ্গে ফের উপনির্বাচন (West Bengal Byelection)। ছটি আসনেই প্রার্থী ঘোষনা হয়ে গিয়েছে। প্রার্থী তালিকায় চমক রয়েছে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি দলেরই। তৃণমূলে প্রার্থীতালিকা নিয়ে কোনও বিক্ষোভ দানা বাঁধেনি। তবে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির প্রার্থী বাছাই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। বিশেষ করে মাদারিহাটের প্রার্থী নিয়ে বিভক্ত বঙ্গ বিজেপি।
মাদারিহাটের নির্দল প্রার্থী (West Bengal Byelection)
উপনির্বাচনে মাদারিহাট ছাড়া আর কোনও আসন নিয়ে আশার আলো দেখছিল না বাংলার গেরুয়া শিবির। কিন্তু এই আসনেই গোর্খাদের সমর্থনে একজন নির্দলকে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে মাদারিহাট নিয়েও আশঙ্কা শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে।
বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মনে করছে, গোর্খারা এই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করায় নতুন করে ভাবতে হবে দলকে। ফলে ওই বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছে, উপনির্বাচনে এবার শাসকদলের কাছে ৬-০ তে হারতে হবে গেরুয়া শিবিরকে।
তবে, ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসন থেকে ভাল ভোটে জিতেছিলেন বর্তমান বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা। কাজেই পদ্ম শিবিরের একাংশের দাবি মাদারিহাট পদ্মশিবিরের দখলেই থাকবে।
বাকি আসনেও জয় নিয়ে চাপে (West Bengal Byelection)
মাদারিহাট নিয়ে দোলাচল চলছেই। সেই সঙ্গেই বাকি পাঁচটি বিধানসভা আসনেও কোনও আশার আলো দেখছে না বঙ্গ বিজেপি। যদিও তাদের দাবি, ছয়টি আসনেই তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই বিজেপিরই। বামেরা থাকবে সেই তৃতীয় স্থানেই।
আরও পড়ুন: Cyclone Dana: জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর, দিলেন জরুরি নির্দেশ
উত্তরবঙ্গের সিতাই (তফসিলি) আসনে দীপক কুমার রায়, মাদারিহাট (তফসিলি উপজাতি) কেন্দ্রে রাহুল লোহারকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি বিধানসভা আসনে রূপক মিত্র ও হাড়োয়ায় বিমল দাস প্রার্থী হয়েছেন।
মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে শুভজিৎ রায় এবং বাঁকুড়ার তালডাংড়া আসনে অনন্যা রায় চক্রবর্তী প্রার্থী হয়েছেন।
স্থানিয় নেতৃত্বের উপর ভরসা
উপনির্বাচনের প্রার্থী তালিকায় স্পষ্ট, স্থানীয় নেতৃত্বের উপরেই ভরসা রেখেছে গেরুয়া শিবির। দলীয় সূত্রে খবর, উপনির্বাচনেও পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নামার বিষয়ে খামতি রয়েছে বিজেপির। কারণ, ছয়টি বিধানসভা এলাকায় দলের পুরনো কর্মীদের সেভাবে নামানো যায়নি।
আদি-নব্য দ্বন্দ্ব
উপনির্বাচন নিয়ে বঙ্গ বিজেপির পুরনো নেতা এবং কর্মীদের গাছাড়া মনোভাব ভাবাচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্বকে। বিভিন্ন জেলাতেই দলের সেই আদি এবং নব্য দ্বন্দের জেরে এখনও পর্যন্ত বসে যাওয়া পুরনো নেতা এবং কর্মীদের বড় অংশকেই মাঠে নামানো যায়নি।
রাজ্য নেতাদের প্রতি ক্ষোভ
বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সকলকে নিয়েই চলার চেষ্টা করছেন। পুরনোদের অনেককেই বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সুকান্তর প্রতি সমর্থন থাকলেও রাজ্য নেতাদের একাংশের প্রতি পুরনোদের বড় অংশ এখনও ক্ষুব্ধ।
আরও পড়ুন: Cyclone Dana: দানার দাপটে জলমগ্ন কলকাতা! চিন্তায় মৃৎশিল্পী-কৃষকরা
বিজেপির এক রাজ্য নেতার দাবি, মেদিনীপুর, তালড্যাংরা ও নৈহাটিতেও আমরা ভাল লড়াই দেব। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে কতটা প্রস্তুতি নিয়েছে বিজেপি, এইসব বিধানসভা এলাকায়? এই প্রশ্নের অবশ্য সঠিক উত্তর দিতে পারেননি ওই রাজ্য নেতা। শনিবার বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হলেও সাংগঠনিক বা ভোট প্রস্তুতি নিয়ে এখনও রাজ্যস্তরে কোনও বৈঠক বিজেপি করতে পারেনি।
কর্মীদের গাছাড়া মনোভাব
একুশের বিধানসভা ভোটের পর বিভিন্ন উপনির্বাচনের ফলাফলে বঙ্গ বিজেপির বিপর্যয়ই হয়েছে। জেতা আসন হাতছাড়া হয়েছে। উপনির্বাচনে দিনহাটা, রানাঘাট, রানাঘাট (দক্ষিণ), বাগদা, রায়গঞ্জ আসনগুলি হারিয়েছে বিজেপি। উল্টোদিকে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর যতগুলি উপনির্বাচন হয়েছে, সমস্ত আসনেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা। দলের একাংশর কথায়, সংগঠনের অবস্থা খুব একটা মজবুত নয়, তাই উপনির্বাচনে প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও তাদের গাছাড়া মনোভাব রয়েছে।