ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আজ ২৫ বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিন (Rabindra Jayanti 2025)। বনফুলের লেখা থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসতেন। পুত্র রথীন্দ্রনাথও সে কথা লিখেছেন। ইন্দিরা দেবীও মোটামুটি কাছাকাছি কথাই লিখেছেন।তবে তাঁর খাদ্যদর্শনটি ধরতে পেরেছিলেন সম্ভবত রথীন্দ্রনাথই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নানা ধরনের খাবার ভালোবাসতেন এবং কখনও কখনও নিজ হাতে রান্নাও করতেন। আজ এই বিশেষ দিনে জেনে নেওয়া যাক কবিগুরুর প্রিয় খাবার ঠিক কিরকম ছিল।
‘প্রত্যেকটি পদের বৈশিষ্ট্য থাকা চাই’ (Rabindra Jayanti 2025)
রবীন্দ্রপুত্র রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘বাবার যেবার নিমন্ত্রণ করার পালা পড়ল, বাড়িতে হুলুস্থুল পড়ে গেল। মাকে ফরমাশ দিলেন খাওয়ানোর সম্পূর্ণ নতুন রকম ব্যবস্থা করতে হবে (Rabindra Jayanti 2025)। মামুলি কিছুই থাকবে না, প্রত্যেকটি পদের বৈশিষ্ট্য থাকা চাই।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘বাবা মনে করতেন খাওয়াটা উপলক্ষ মাত্র, রান্না ভালো হলেই হল না— খাবার পাত্র, পরিবেশনের প্রণালী, ঘর সাজানো, সবই সুন্দর হওয়া চাই। যেখানে খাওয়ানো হবে তার পরিবেশে শিল্পীর হাতের পরিচয় থাকা চাই। মা রান্নার কথা ভাবতে লাগলেন, অন্যরা সাজানোর দিকে মন দিলেন।’
মাংস (Rabindra Jayanti 2025)
কাঁচা আম দিয়ে মাংসঃ কাঁচা আমের সঙ্গে দই ও পাঠার মাংসের সঙ্গে বিভিন্ন মশলার কারসাজিতে তৈরি হত এই পদ। যা কবিগুরু গরমকালে খেতে খুবই পছন্দ করতেন (Rabindra Jayanti 2025)। সুরথি মিঠা কাবাবঃ এটি এক ধরনের মিষ্টি মুরগির মাংসের পদ। চিনি, কিসমিস, ছোট করে কাটা আমন্ড, জাফরনের মিশ্রণে তৈরি হয়। আমিষ মিষ্টির এই পদটি রবীন্দ্রনাথের সবসময়ের প্রিয় খাবার ছিল। আইরিস স্টুঃ দেশ-বিদেশের যাতায়াতের সময় রবীন্দ্রনাথ এই পদটি খেতে পছন্দ করতেন। যা আলু ও পেঁয়াজের সঙ্গে মাটন কিংবা ল্যাম্প দিয়ে তৈরি করা হত। এছাড়াও প্রিয় ছিল চিকেন কাবাব নোসি, পছন্দের মাটনের ইঁচড় দিয়ে কচি পাঁঠার মাংস।
মাছ
ভাপা ইলিশঃ মাছের পদকে কখনও পিছনে রাখতেন না রবীন্দ্রনাথ (Rabindra Jayanti 2025)। বিশেষ করে ইলিশের যে কোনও পদ যেমন ইলিশের ঝোল, ভাপা ইলিশ ছিল রবিঠাকুরের প্রিয় খাবারের তালিকায়। নারকেল চিংড়িঃ নারকেল এবং চিংড়ির মিলমিশের কথা সকলেরই জানা। নারকেলের দুধে পোস্ত ও সরষে বাটার সঙ্গে চিংড়ির এই পদ বরাবরই ভালবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। কাঁচা ইলিশের ঝোল, চিতল মাছের মুঠে, নারকেল চিঁড়ি, আদা দিয়ে মাছের ঝোল ছিল রবিঠাকুরের প্রিয় খাবারের তালিকায়।
পনির-ডিম
পনির দিয়ে বেকড ম্যাকরনিঃ ঠাকুরবাড়ির সদস্যরা অনেক পাশ্চাত্য পদ বেশ উপভোগ করতেন। যার মধ্যে অন্যতম পনির ও মশলা দিয়ে বেকড পাস্তা। এই বিশেষ পদটি পূর্ণিমা ঠাকুরের রেসিপির বইতেও উল্লেখ রয়েছে। ডিম দিয়ে ছোলার ডাল কারিঃ পরিচিত ছোলার ডাল দিয়েই এক অনবদ্য পদ ভালবাসতেন কবিগুরু। মশলাদার ডাল ও ডিম দিয়ে তৈরি হয় এই কারি। এতে থাকত খানিকটা মিষ্টির ছোঁয়াও।
চা ও শরবত
রবীন্দ্রনাথের প্রিয় পানীয়ের মধ্যে চা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল। তবে জাপানের চায়ের প্রতি কবিগুরুর আকর্ষণ অনেকটাই বেশি ছিল। অন্যদিকে শরবতের রকমফের নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন রবীন্দ্রনাথ। আর সেই কারণেই আসে নিমের শরবতের উদ্ভাবন। তবে আমসত্ত্ব, দুধ ও সন্দেশ ‘মাখা’ও কিন্তু রবিঠাকুরের প্রিয় পদ ছিল।
মিষ্টি
চন্দ্রপুলিঃ ঠাকুমা-দিদিমারা বাড়িতেই বানাতেন চন্দ্রপুলি। তবে এখন দোকানের মিষ্টিই ভরসা বাঙালির। বিশ্বকবিরও এই চাঁদ আকৃতির মিষ্টি পছন্দের তালিকায় ছিল। নারকেল কুড়িয়ে খোয়া ক্ষীর, গুঁড়ো চিনি ও কর্পূর দিয়ে তৈরি হয় এই মিষ্টি। ফ্রুট সালাডঃ বিভিন্ন দেশের প্রভাব রয়েছে ঠাকুরবাড়ির সালাড তৈরিতে। মধ্যাহ্নভোজের পর এই ফ্রুট সালাড খেতে পছন্দ করতেন রবীন্দ্রনাথ। পরিবন্ধঃ এটি রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর হাতের এক বিশেষ পদ ছিল। যাকে এলো ঝোলোও বলা হত। গজার মতো দেখতে এই মিষ্টি ময়দা ও চিনির সিরাপ দিয়ে তৈরি করে ডিপ ফ্রায়েড করা হত। এছাড়াও নারিকেল দিয়ে তৈরি মিষ্টি,পায়েস, ক্ষীর, দই দিয়ে বানানো মালপোয়া, চিড়ের পুলি, মানকচুর জিলিপি, আমসত্ত্ব খেতে খুব ভালবাসতেন।