ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গোটা পশ্চিম এশিয়ার রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখে ছিলেন সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন আল সৌদ (US-Saudi Relation)। কিন্তু, সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে উত্থান যেমন দ্রুত গতিতে হয়েছিল, তেমনই দ্রুত গতিতে পতনের শুরুটাও হয়েছে, এমনই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। গোটা পশ্চিম এশিয়ায় নাকি গুরুত্ব কমেছে ইসলামিক দুনিয়ার নেতা হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবের। গোটা বিশ্বে সৌদি আরবের এই গুরুত্ব কমার পেছনে আসল কারণ কী সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন আল সৌদের একনায়কতন্ত্র?
এখন ইসলামিক বিশ্বের নেতা সৌদি নয় (US-Saudi Relation)
কিছুদিন আগেও গোটা ইসলামিক বিশ্ব সৌদিকেই নিজের নেতা মনে করতো (US-Saudi Relation)। কিন্তু, এখন ধীরে ধীরে বদল হয়েছে সৌদির সেই দাপট। এখন ইসলামিক দেশগুলির মধ্যে বেশ ভাগই সৌদিকে আর নিজেদের নেতা বলে মানতে চাইছে না। প্যালেস্টাইনদের একাংশ ইতিমধ্যেই সৌদিকে শত্রু হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে ইরানের শিয়া পন্থীরাও সৌদি আরবকে পছন্দ করছে না। দেশটির সাথে ভালো সম্পর্ক নেই মধ্যপ্রাচ্যের আর একটি ধনকুবের দেশ কাতারের। ফলে পশ্চিম এশিয়ায় ধীরে ধীরে প্রভাব কমছে সৌদি আরবের।
সৌদির মূল অস্ত্র ধর্ম (US-Saudi Relation)
বিশ্বের সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রগুলিকে নেতৃত্ব দেওয়ার পেছনে সৌদি আরবের মূল অস্ত্র ছিল ধর্ম (US-Saudi Relation)। কেননা সৌদি আরবেই রয়েছে ইসলাম ধর্মের দুই পবিত্র তীর্থক্ষেত্র মক্কা ও মদিনা। আর সেই ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করেই বহুদিন ধরে গোটা ইসলামিক দুনিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছে সৌদি। কিন্তু, বর্তমানে পরিস্থিতি অনেক খানি বদল হয়েছে। এর পেছনে কেউ কেউ যুবরাজের অতিরিক্ত আমেরিকা প্রেমকেও দায়ী করছেন।

আরও পড়ুন: Increased pressure on Yunus: নির্বাচনের আগে সংস্কার নয়, ইউনূসের উপর চাপ বাড়াল জাতীয় পার্টি
মিশরের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য
বহুদিন ধরে মধ্য এশিয়ার ইসলামিক দেশগুলির একচ্ছত্র রাজা সৌদি থাকলেও ধীরে ধীরে সেটার দখল পেয়েছে মিশর। গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের পর থেকে গোটা পশ্চিম এশিয়ার আরব দেশ গুলির সংঘবদ্ধ করার কাজটা শুরু করেছিল মিশর। সেই সময় থেকেই মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসের প্যান আরব প্রকল্পের কথা বলেছিলেন। আরব দুনিয়ার মধ্যে পশ্চিমি প্রভাবে ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম একেবারেই মেনে নিতে পারেননি তিনি। আর তাই ইসলামীয় দেশগুলির জোট তৈরিতে জোর দেন তিনি। এমনকি আরব দুনিয়াকে ইউরোপ এবং মার্কিন সংস্কৃতি থেকে দূরে রাখতে কোমর বেঁধে প্রচার চালান তৎকালীন মিশরীয় প্রেসিডেন্ট নাসের। এমনকি ইসলামিক দেশ গুলির যৌথ বাহিনী নিয়ে ছ-দিনের যুদ্ধেও নেমে ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: FBI Director Kash Patel: এফবিআই প্রধান হয়েই কাশ প্যাটেল দিলেন হুঁশিয়ারি

সৌদির মার্কিন প্রেম
আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে ব্যাপক ‘স্নায়ু যুদ্ধ’ চলছিল গত শতকের ৭০ ও ৮০-র দশকে। সে সময় ইরানের সাথে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে শুরু করেছিল। আমেরিকাও পশ্চিম এশিয়ায় রাশিয়ার পাল্টা প্রভাব বৃদ্ধি করতে চাইছিল। সেই সময় আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়ে সৌদি নিজের অর্থনীতিকে মজবুত করেছিল। ১৯৯১ সালে কুয়েত আক্রমণ করেন তৎকালীন ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেন। এর জেরে পশ্চিম এশিয়ায় শুরু হয় উপসাগরীয় যুদ্ধ। এতে সরাসরি অংশ নিয়েছিল আমেরিকা। উপসাগরীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে খোলাখুলি ভাবে সমর্থন করেছিল সৌদি আরব। বিনিময়ে মার্কিন ডলারে ভরে ওঠে সৌদির অর্থ ভাণ্ডার। সৌদি থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কিনতে শুরু করে ওয়াশিংটন ও পশ্চিমি বিশ্ব। কিন্তু এর ফলে গোটা পশ্চিম এশিয়ার ইসলামিক দেশের কাছে ইসলামিক নেতৃত্ব হিসেবে নিজের মর্যাদা হারায় সৌদি আরব।