ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: শীত ফুরিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে বসন্ত। আর বসন্ত মানেই প্রেম(Amar Sangi Movie Review)। বাতাসে হাল্কা হাল্কা প্রেমের গন্ধ বইতে শুরু করে দিয়েছে প্রায়। এই বসন্তের শুরুতে কেউ যদি প্রেমের গল্প শোনায় তাহলে খুব একটা মন্দ হয়না। তেমন এক প্রেমের গল্প নিয়ে হাজির হলেন পরিচালক দিব্য চ্যাটার্জি। নতুন ভাবে সৃষ্টি করলেন ‘অমর সঙ্গী’। ৩১ জানুয়ারি মুক্তি পেল দিব্য চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘অমর সঙ্গী’ তাঁর এই সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে দেখা গেল খুবই জনপ্রিয় দুই অভিনেতা অভিনেত্রীকে। বিক্রম চ্যাটার্জি এবং সোহিনী সরকার।
‘অমর সঙ্গী’ সিনেমার গল্প (Amar Sangi Movie Review)
সিনেমাটি কী আদ্যোপান্ত প্রেমের ছবি নাকি হরর-কমেডি? আসলে দুটোই। ছবির গল্প কেমন?(Amar Sangi Movie Review) সিনেমাতে আমরা দেখতে পাই অনুরাগ (বিক্রম) আর জয়ীর (সোহিনী) ছোটবেলার প্রেম। বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে তাদের। থাকার জন্য নতুন বাড়িও কিনে ফেলেছে। ক্লাস ফাইভ থেকে তারা সোল মেটস। এমন সময় হার্ট অ্যাটাকে মারা যায় জয়ী। মরে গিয়েও ফেরত এল জয়ী অনুরাগের কাছে। তারপরেই শুরু হল গল্পের মূল আকর্ষণ। ছেলেটা দৌড়য় কখনও সাধকের কাছে, তান্ত্রিকের কাছে, কখনও বা অকাল্ট বিশেষজ্ঞের কাছে। পড়তে থাকে ভূত নিয়ে নানারকম বই। কীভাবে হল ভুত ও মানুষের প্রেম? এর পরিণতিই বা কী হল শেষে জানতে হলে অবশ্যই ঘুরে আসুন ‘অমর সঙ্গী’র দুনিয়া থেকে।
রোমান্টিক জুটি হিসাবে সোহিনী-বিক্রম (Amar Sangi Movie Review)
রোমান্টিক জুটি হিসাবে সোহিনী-বিক্রম এই প্রথমবার একসাথে অভিনয় করলেন(Amar Sangi Movie Review)। সত্যিই তাঁদের ভালো মানিয়েছে বলছে দর্শক। বিক্রম এই অনুরাগের চরিত্রেও দশে দশ। তিনি এবারও তাঁর চরিত্রের ওঠা পড়া সঠিক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। সোহিনীর অভিনয় একবারের জন্যও মনে হয়নি কোথাও বাড়তি। বরং এই সিনেমায় সোহিনীকে একটু বেশিই স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়েছে। যেন এ চরিত্র সে নিজেই। তাঁর হাসি গোটা সিনেমা জুড়ে নজর কেড়েছে দর্শকের। একবারের জন্যও মনে হয়নি রোমান্টিক জুটি হিসেবে বিক্রম সোহিনীর এই প্রথম অভিনয়। অনুরাগের (বিক্রম) বন্ধুর চরিত্রে শ্রীমা ভট্টাচার্য আর অনিরুদ্ধ গুপ্তকেও মানিয়েছে ভালো। কিউ, মধুমিতা, অঙ্কুশ, অঙ্গনা, তথাগত, বিবৃতি, অনুরাধা নিজের জায়গাটুকুই উজ্জ্বল। প্রেমিকার চরিত্রে দিব্যাশা দাসের অভিনয় অসাধারণ ছিল। বাকি পার্শ্বচরিত্রদের অভিনয়ও কিন্তু বেশ ভালো। বিশেষ করে জয়ীর বাবার ভুমিকায় সন্দীপ বাবুর মেয়েকে দেখার অকুতির জায়গাটুকু তিনি অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আরও পড়ুন:Raghu Dakat: দেব ‘ডাকাত’, আর ইধিকা তাঁর পার্টনার! টলিউডের আড়ালে কী চলছে?
ছবির কাহিনী ও স্ক্রিপ্ট
ছবির গল্প অরিত্র সেনগুপ্ত আর দিব্য যৌথভাবে লিখেছেন। ‘শরীরী হোক বা অশরীরী, প্রেমটা আমি তোর সঙ্গেই করব’ এই সংলাপ প্রেমিক মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই(Amar Sangi Movie Review)। সিনেমায় এমন অনেক সংলাপ আছে যা প্রেমিক হৃদয় সহজেই ছুঁতে বাধ্য। যেখানে যতটা দরকার ততটা যোগ করা হয়েছে। তবে অন্যান্য চরিত্রদের সংলাপ গুলো হয়তো আর একটু অন্যরকম করা যেত। যেমন তাঁদের মা বাবার চরিত্রের সংলাপগুলো। এক মেয়ে হারানোর বেদনা তেমন ভাবে ফুটে ওঠেনি সংলাপে মনে করছেন দর্শক। তবে অনুরাগ বা জয়ীর সব সংলাপই দর্শকের মন কেড়েছে। শেষ দিকে জয়ীর মুখে একটা সংলাপ মনে গেঁথে যাওয়ার মতোই– ‘আমার যেটুকু ভালোবাসার কোটা তোকে সব দিয়ে দিয়েছি’। বিক্রম বলেছিলেন বিক্রমের কথায় এই ছবিতে কাজ করার অন্যতম কারণ হলো ছবির স্ক্রিপ্ট। যথেষ্ট মজাদার এবং বিনোদনমূলক বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারা আমার কাছে যথেষ্ট আনন্দের। সোহিনীর কথায়,’স্ক্রিপটা আমার খুব ভালো লেগেছিল’।
পরিচালক হিসেবে দিব্য চট্টোপাধ্যায়
ছবির পরিচালক দিব্য চট্টোপাধ্যায়। যিনি এর আগে হিন্দি সিরিজ লিখেছেন, যেটি ছিল ডার্ক কমেডি। ফলে এই জনারে পরিচালকের দক্ষতা রয়েছে। তাঁর প্রতিটা চরিত্রের কাস্টিং খুব ভালো লেগেছে দর্শকদের। এছাড়াও প্রতিটা সিনের ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল থেকে সার্বিক কম্পোজিশনের কারণে দিব্যকে সাধুবাদ না দিয়ে পারা যায়না। টিমের প্রতিটা চরিত্রকে নিজের নিজের জায়গা মতো সুযোগ দেওয়া হয়েছে নিজের জায়গাটুকু ফুটিয়ে তোলার।
আরও পড়ুন:Kaushik Ganguly: ফেডারেশনের সাথে সমস্যা মিটলো কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের, শুরু হবে ‘জংলা’র শুটিং
সিনেমার গান
সিনেমার গানগুলো অসাধারণ সুন্দর হয়েছে। বিশেষ করে অর্ক ও সৃজনীর গলায় ‘পুরনো প্রেমের পদ্য’ মন ছুঁয়েছে দর্শকের। এছাড়াও জনপ্রিয় গান ‘রাইকোমল’ এই সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে যা আরও সুন্দর করে তুলেছে দৃশ্যকে এবং সিনেমার বিষয়বস্তুকে।
মিষ্টি প্রেমের গল্প
এটি একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প। যদিও সিনেমা দেখতে দেখতে মনে হবে এসব আজগুবি। কিন্তু প্রেমে ভালোবাসায় তো সবই আজগুবি। অবাস্তব হলেই তখন সবই হয়তো বাস্তব। মন আবেগের উপরে আমাদের হাত কোথায়? দুটি মানুষের প্রেম, খুনসুটি,সম্পর্কের জটিলতা এবং জীবনের স্বাভাবিক বহমানতা এসব নিয়েই ‘অমর সঙ্গী’। কমবয়সের অতৃপ্ত প্রেম যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকতে পারে কীভাবে এবং তার আবেগ যে কী মারাত্বক হয়ে ওঠে জানতে গেলে দেখতেই হবে এই ছবি। তবে সাবধান যারা কারোর প্রেমের আবেগে বুদ হয়ে আছেন তারা এই সিনেমা দেখতে গেলেই কিন্তু মুখে হাসি, চোখে জল নিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে হল থেকে এটুকু বলায় যায়।