ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: প্রাচীন মন্দিরের প্রতি ইটে গেঁথে আছে ইতিহাস। অজস্র কাহিনীর ভার আজও বয়ে চলেছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বন্দর আদি কালীবাড়ি। কথিত আছে সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধরের হাত ধরে শুরু হয়েছিল শ্যামাপুজো (Kalipuja 2024)। পাঁচশ বছরের পুরনো এই পুজোয় আজও ভিড় জমান দূর-দূরান্তের হাজার হাজার ভক্ত।
প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো কালীমন্দিরের চাতালে পা দিলেই ইতিহাসের গন্ধ ঠেকে নাকে। বটগাছের ঝুরিতে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসা ঘণ্টার শব্দে মিশে যায় ভক্তি আর নিষ্ঠা। প্রাচীন রীতি মেনেই উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বন্দর আদি কালীবাড়িতে আজও হয়ে আসছে শ্যামা মায়ের আরাধনা। কবে এই পুজোর শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মতভেদ।
আরও পড়ুন: প্রায় ১০০ বছর ধরে শক্তি আরাধনা, তুঙ্গে প্রস্তুতি কৃষ্ণনগর মংলাপাড়া বারোয়ারির
ইতিহাস বিশেষজ্ঞদের মতে, রায়গঞ্জ শহরের নদী তীরবর্তী প্রাচীন এলাকা হল বন্দর। এককালে বৈদেশিক বাণিজ্য ও যোগাযোগের জন্য এই বন্দর এলাকাকে ব্যবহার করা হত। যা এখানকার দিনাজপুর রাজ এস্টেটের অধীন। কথিত আছে, ৫০০ বছর আগে পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে এক সাধক পায়ে হেঁটে এসে উপস্থিত হন কুলিক নদীর বন্দর ঘাটে। ঘাটের কাছেই একটি গাছের নীচে বসে তিনি সিদ্ধিলাভ করেন। সেই থেকে এখানে শুরু হয় কালীর আরাধনা।
প্রথমে বেদীতেই পুজোর প্রচলন হয়েছিল। ১২১৬ বঙ্গাব্দে দিনাজপুরের রাজা এখানে মন্দির তৈরি করে দেন। এরপর সাধক বামাখ্যাপার বংশধর জানকীনাথ চট্টোপাধ্যায় বারাণসী থেকে কালীর মূর্তি এনে পুজো শুরু করেন। এককালে এখানকার প্রধান সেবাইত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধর মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়, কিন্তু প্রয়াত হয়েছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী রিয়া চট্টোপাধ্যায় এবং স্থানীয় বাসিন্দারা একযোগে সামলাচ্ছেন পুজো।
আরও পড়ুন: দীপাবলিতে মেঘমুক্ত আকাশ, কালীপুজোর পরই শীতের আগমন শহরে!
আরও পড়ুন: সন্তানকে স্বামী প্রণবানন্দ বিদ্যাপীঠে ভর্তি করতে ইচ্ছুক, নভেম্বরেই শুরু হচ্ছে আবেদন প্রক্রিয়া
এই মন্দির বহু ইতিহাসের সাক্ষী। সে সময় মায়ের কোনও মন্দির ছিল না। জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে একদল ডাকাত ওই আসনে মায়ের পুজো করত। তারা ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় ও ফিরে আসার পর দুই বার করে মায়ের পুজো দিয়ে যেত। পরে বাণিজ্য যাওয়ার সময় বা ফেরার সময় ধনী ব্যবসায়ীরাও এই বেদিতে পুজো দিয়ে যেতেন। এতে নাকি ডাকাতি হওয়ার কোনও ভয় থাকত না। পরে লোক মুখেই এই জায়গার মাহাত্ম্যের কথা ছড়িয়ে পড়ে। আবার কেউ কেউ বলেন, মায়ের ইচ্ছেতেই তৈরি হয় তাঁর মন্দির।
আনুমানিক ১৮০৮ নাগাদ অবিভক্ত বাংলার দিনাজপুরের মহারাজা তারকনাথ চৌধুরি মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে একটি মন্দির গড়ে তোলেন। তিনিই সাধক বামাক্ষ্যাপার উত্তরসুরী জানকিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে এই মন্দিরে পুজোর দায়িত্ব দেন। ১৮০৯ সালে জানকি নাথবাবু বেনারস থেকে কষ্টি পাথরের বিগ্রহ এনে মাতৃ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। যা এখনও এই মন্দিরে বিরাজমান। আজও নাকি কালীপুজোর রাতে মন্দির থেকে মায়ের পায়ের নুপূরধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। দেবীকে নাকি হেঁটে বেড়াতেও দেখেছেন অনেকে। এমন অজস্র গল্প ছড়িয়ে রয়েছে রায়গঞ্জ বন্দরের আদি কালীবাড়ির পুজো ঘিরে।
আরও পড়ুন: Raigunj Incident: দেনার দায়ে পাঁচ বছরের শিশুকন্যাকে খুন, গ্রেফতার বাবা
উত্তর দিনাজপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় রায়গঞ্জ বন্দর আদি কালীবাড়িতে পার্শ্ববর্তী জেলা ও ভিন রাজ্য থেকেও বহু মানুষ ভিড় করেন কালীপুজোর রাতে। কলকাতা সহ অন্যান্য জেলার পাশাপাশি ওডিশা, বিহার, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও ভক্তরা পৌঁছে যান এখানে। কালীপুজোর রাতে এই মন্দিরে ভিড় জমান দেশ বিদেশের বহু ভক্ত। সুদূর জাপান, কানাডা, আমেরিকা, ইংল্যান্ড থেকে বহু প্রবাসী ভারতীয় এখানে পুজোর রাতে আসেন। কালিপুজোর রাতে এখানে সপ্তসতী চন্ডীপাঠ ও হোম হয়। তন্ত্রমতে পুজো হয় বলে রয়েছে পশুবলী প্রথাও।