ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আছে শুধু সাইনবোর্ড। পাঠাগার(Bangladesh Library) কিংবা বই, কোনোটিরই অস্তিত্ব নেই বাংলাদেশের একাধিক জায়গায়। তবুও ঢুকছে টাকা, পেয়েছে সরকারি বরাদ্দ। আবার দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো পাঠাগার আবার কারোর বসার ঘরের একটি তাকেই সীমাবদ্ধ। বেসরকারি এমন অসংখ্য পাঠাগারের নামে বছর বছর সরকারি বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশে।
১৯টি ভুয়া পাঠাগার (Bangladesh Library)
গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সন্দেহজনক পাঠাগারগুলো(Bangladesh Library) পরিদর্শন করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এবং পরিদর্শন করে তাঁরা জানান, সারা দেশে তালিকাভুক্ত বেসরকারি পাঠাগার আছে প্রায় ১ হাজার ৩০০টি। এর মধ্যে গত অর্থবছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক অনুদান পাওয়া বেসরকারি পাঠাগারের সংখ্যা ৯২৩। পাঠাগারের মধ্যে ৫৪টি পরিদর্শন করে ১৯টি ভুয়া পাঠাগার পাওয়া গেছে।
সংরক্ষিত অর্থ থেকে জনস্বার্থে বরাদ্দ (Bangladesh Library)
বেসরকারি গ্রন্থাগারে(Bangladesh Library) অনুদান বরাদ্দ এবং বই নির্বাচন–সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৪’–এর অনুদান–বণ্টন নীতি অনুযায়ী জানা যায়, ‘বার্ষিক মোট বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ২০ শতাংশ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী ও সচিবের বিশেষ বিবেচনায় সরাসরি মঞ্জুরি প্রদানের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এ সংরক্ষিত অর্থ থেকে জনস্বার্থে বরাদ্দ দেওয়া যাবে।‘
বেসরকারি পাঠাগারগুলো ক, খ ও গ—এই তিন শ্রেণির
বেসরকারি গ্রন্থাগারে অনুদান বরাদ্দ এবং বই নির্বাচনসংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৪’ অনুযায়ী, ক শ্রেণির পাঠাগারের(Bangladesh Library) অন্তত ৩ হাজার বই এবং গড়ে মাসে অন্তত ৩০০ জন পাঠকের উপস্থিতি থাকতে হবে। খ শ্রেণির জন্য দেড় থেকে তিন হাজার বই এবং মাসে ২০০ থেকে ৩০০ জন পাঠকের উপস্থিতি এবং গ শ্রেণির জন্য বইয়ের সংখ্যা ৫০০ থেকে ১ হাজার হতে হবে এবং পাঠকের সংখ্যা প্রতি মাসে ২০০ জন হতে হবে। তালিকাভুক্ত বেসরকারি পাঠাগারগুলো মূলত ক, খ ও গ—এই তিন শ্রেণির হয়।
আরও পড়ুন:Fire At Turkey Ski Resort: তুরস্কের স্কি রিসর্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, নিহত ৬৬ জন
বরাদ্দের ২০ শতাংশ মন্ত্রী ও সচিবের হাতে
বেসরকারি পাঠাগারের জন্য প্রতিবছরের বরাদ্দের ২০ শতাংশ থাকে মন্ত্রী ও সচিবের হাতে। প্রতিটি শ্রেণির জন্য বরাদ্দ অর্থের অর্ধেক টাকা পরিচালন ব্যয় এবং বাকি অর্ধেক টাকার বই দেওয়া হয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে। বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে এই অর্থ বিতরণের দায়িত্ব পালন করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। তবে দেশের বেসরকারি পাঠাগারগুলোকে তালিকাভুক্ত করে অনুদানের ক্ষমতা আছে গণগ্রন্থাগার এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের।
কোথায় কোথায় ভুয়া পাঠাগার?
জানা যাচ্ছে টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, নড়াইল, ঝিনাইদহ ও বরিশালে তালিকাভুক্ত বেসরকারি পাঠাগারের সংখ্যা প্রায় ৩০০। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সিয়াম পাঠাগারের আছে শুধু একটি সাইনবোর্ড। কিন্তু গত অর্থবছর পাঠাগারটি বিশেষ কোটায় বরাদ্দ পেয়েছে দুই লাখ টাকা। কক্সবাজারের মহেশখালীর আহমদ হোছাইন গ্রন্থাগারের কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। মহেশখালীর কালারমারছড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা এমন কোনো পাঠাগারের নাম কখনো শোনেননি। এটিও বিশেষ কোটায় গত অর্থবছর অনুদান পেয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
বসার ঘরের একটি তাকই হচ্ছে পাঠগার
জয়পুরহাটের পাঁচবিবির মালঞ্চা গণপাঠাগার ও বিজ্ঞান ক্লাব গত অর্থবছরে পেয়েছে দুই লাখ টাকার অনুদান। সরেজমিনে জাগীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কর্মকর্তারা দেখেছেন, একটি বেসরকারি সংস্থার বসার ঘরের একটি তাকই হচ্ছে ওই পাঠগার। যেখানে কোনো কালে পাঠের ব্যবস্থা ছিল না। জয়পুরহাটে ১০টি পাঠাগারই ভুয়া পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহের বিদ্যাগঞ্জের সাজেদা-কাশেম গণগ্রন্থাগার এবং সদরের অন্যচিত্র মডেল পাঠাগার দুটিতে গত অর্থবছর এ দুই পাঠাগার বিশেষ কোটায় পেয়েছে আট লাখ টাকা বরাদ্দ।
কী বলছেন উপগ্রন্থাগারিক?
পাঠাগার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উপগ্রন্থাগারিক মো. রাসেল রানা। তিনি জানান খুব তাড়াতাড়ি এই ভুয়া পাঠাগারগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাঠাগারগুলি যাদের নামে রয়েছে, তাঁদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।