ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সংসারের অভাব সামলাতে নিজের কিডনি বিক্রি করেন যুবক। এবার সেই হাতিয়ে নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালালো যুবকের স্ত্রী। এই ঘটনায় কার্যত শোরগোল হাওড়ার (Howrah) সাঁকরাইলে। স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ ৩৯ বছরের পিন্টু বেজ।
বিশ্বাস করে নিজের কিডনি বিক্রির ১০ লক্ষ টাকা স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা হাতে পেয়েই বদলে গেল স্ত্রী। স্বামীকে কিছু না বলেই প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছাড়ল গৃহবধূ সুপর্ণা বেজ। এখন ভাঙা শরীরে কার্যত নিঃস্ব অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন সাঁকরাইল এর নিজের বাড়িতে। চাইছেন বিশ্বাসঘাতকতার বিচার।
সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে নিজেদের কন্যার বিয়ের জন্য গয়না করিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বার বার বলে স্বামীকে একটা কিডনি বেচতে বাধ্য করেন স্ত্রী সুপর্ণা বেজ। এরপর সেখান থেকে পাওয়া নগদ মোট দশ লাখ টাকা সহ কেনা গয়না নিয়ে ৩২ বছরের সুপর্ণা বেজ বেপাত্তা হয়ে যান তার প্রেমিকের সঙ্গে। হাওড়ার (Howrah) সাঁকরাইলের ৩৯ বছরের এক ব্যক্তির এমনই অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে।
হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলা (Howrah)
সূত্রের খবর পিন্টু বেজ তার স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি করেন এবং তার পর স্ত্রীকে খুঁজে পেতে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলা করেন। এ ক্ষেত্রে মামলাকারীর স্ত্রীকে খুঁজে এনে আদালতে হাজির করানোর কথা। যদিও হেবিয়াস কর্পাস মামলায় পুলিশের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, তদন্তকারীদের কাছে ওই মহিলা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছেন।
তাঁর প্রেমিক এবং তিনি এখন স্বামী–স্ত্রীর মতো থাকছেন। কেউ তাঁকে জোর করে কিছু করায়নি। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার, ২৭ জানুয়ারি হেবিয়াস কর্পাস মামলাটি খারিজ করে দেয়। আদালতের বক্তব্য, যেহেতু মহিলার হদিশ পাওয়া গিয়েছে। তিনি স্বেচ্ছায় স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছেন, তাই এই ক্ষেত্রে আর হেভিয়াস কর্পাসের আবেদন কার্যকর হবে না (Howrah) ।
আরও পড়ুন: RSS: চলতি বছরেই শতবর্ষপূর্তি সংঘের, বঙ্গজুড়ে একাধিক কর্মসূচি
যদিও এরপর নিজের টাকা পয়সা স্ত্রীর কাছ থেকে আদায় করতে স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। গত ২৩ ডিসেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে সাঁকরাইলের ওই তরুণী আর বাড়ি ফেরেননি বলে তাঁর স্বামী জানিয়েছেন।
এই ঘটনায় আইনজীবীদের বক্তব্য, গোটা ঘটনায় কিডনি বেচে টাকা পাওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। যা আইনত দণ্ডনীয় এবং সে ক্ষেত্রে ৩৯ বছরের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেআইনি কাজের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। তবে আইনজীবীদের অন্য একটি অংশের অভিমত হল, মামলাকারীকে প্রথম থেকে ভুল বুঝিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী।(Howrah) সুতরাং, এখানে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করা ওই ব্যক্তিকে ঘটনার শিকার বলে ধরে নেওয়ার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে বলে ওই আইনজীবীরা মনে করছেন।
মেয়ের বিয়ের জন্য গয়না তৈরি করতে চাপ (Howrah)
স্বামীর অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীকে বারাকপুরের বাসিন্দা এক যুবক ভুল বুঝিয়ে তুলে নিয়ে গিয়েছেন। হাইকোর্টে দায়ের করা অভিযোগে সাঁকরাইলের ওই ব্যক্তি আরও জানান, অভাবের সংসারে বছর বারোর মেয়ের ভবিষ্যতে বিয়ের জন্য এখন থেকেই কিছু গয়না তৈরি করিয়ে রাখার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চাপ দিচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী।
গত বছর নভেম্বর মাসে স্ত্রীর কথা মত পিন্টু বেজ নিজের শরীরের একটি কিডনি বিক্রি করে। ডাক্তার ৩ মাস বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। এক মাস পনেরো দিনের মাথায় স্ত্রী বাজার করতে যাবার নাম করে তার কিডনি বিক্রির সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় প্রেমিকের সঙ্গে। ১৬ বছরের দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী এই ভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করায় যথারীতি পিন্টু মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: Weather Update: একধাক্কায় ৪ ডিগ্রি পারদ পতন, বাংলায় শীত আর কতদিনের অতিথি?
দুজনে প্রেম করেই বিয়ে করেছিলেন।(Howrah) পিন্টু বাবু একটি কারখানায় কাজ করতেন সেই টাকায় কোনও মতে সংসার চলছিল। এই মধ্যেই স্ত্রী সুপর্ণা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমে পড়েন বারাকপুরের সুভাষ কলোনির বাসিন্দা রবি দাসের সঙ্গে। পেশায় রং মিস্ত্রি। গত শুক্রবার পিন্টু বাবু তার মা কল্পনা বেজ ১২ বছরের মেয়েকে নিয়ে যায় বারাকপুরের সুভাষ কলোনিতে স্ত্রীকে আনতে। স্ত্রী আসতে চাইনি বলে স্পস্ট জানিয়ে দেয়। টাকার প্রসঙ্গ তোলায় প্রেমিক রবিদাস বলেন, আইনে যখন গেছেন আইনের মাধ্যমে যা হবার হবে। অগত্যা খালি হাতেই ফিরতে হয় পিন্টু বেজকে। এখন তিনি বুঝতে পারেন কিডনি বিক্রির জন্য তার স্ত্রী প্রেমিকের সাথে পরিকল্পনা করেই এই কাজ করেছেন।
মা কল্পনা বেজ বাড়ির ছোট ছেলের এই অবস্থার জন্য দুশ্চিন্তায় আছেন। ক্যামেরার সামনে কেঁদে ফেলছেন কথা বলতে বলতে। ধুলাগড় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আক্তার লস্কর এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেন স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না বলে এই ভাবে স্বামীর কিডনি বিক্রি করে পরপুরুষের সাথে চলে যাওয়াটা ঠিক নয়। এই ঘটনায় সমাজের প্রভাব পরে আগামী দিনে নতুন প্রজন্ম কি শিখবে? এখন টাকা আদায়ের জন্য পিন্টু বেজ কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। ভবিষ্যতে কি হয় সেই দিকে তাকিয়ে আছে।