ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: নামেই মিনি ডার্বি। শনিবার যুবভারতীতে একপেশে ম্যাচে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ৪-০ গোলে হারালো মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan beats Mohammedan FC)। সবুজ-মেরুনের হয়ে জোড়া গোল করলেন অধিনায়ক শুভাশিস বোস এবং মনবীর সিং। চারটির মধ্যে তিনটি গোলেই অ্যাসিস্ট করে ম্যাচের সেরা জেসন কামিংস। একপেশে ম্যাচে ৯০ মিনিটই দাপট দেখালো সবুজ-মেরুণ ব্রিগেড।
১৯ ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিল শীর্ষে থাকার পাশাপাশি লিগ শিল্ড খেতাব জয়ের আরও কাছে পৌঁছে গেল হোসে মোলিনার দল। তবে মাঠের খেলায় উত্তাপ না থাকলেও শনিবারের মিনি ডার্বিতে যুবভারতীর গ্যালারিতে ও বাইরে ছড়ালো উত্তেজনা। দলের ভরাডুবিতে গ্যালারি ও ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের বাইরে মহমেডান কর্তাদের ঘিরে ক্ষুব্ধ সাদা-কালো সমর্থকদের ‘চোর-চোর’ স্লোগানে মুখরিত হল যুবভারতী। সমর্থকদের ক্ষোভের আঁচ থেকে বাঁচতে স্টেডিয়ামের অন্য গেট দিয়ে পিঠটান দিলেন মহমেডান কর্তারা।
আরও পড়ুন: ISL Derby: আজ আইএসএলের মিনি ডার্বিতে মুখোমুখি মোহনবাগান-মহমেডান
আদৌ মিনি ডার্বি! (Mohun Bagan beats Mohammedan FC)
শনিবার আইএসএলে যুবভারতীতে মিনি ডার্বিতে মুখোমুখি হয়েছিল মহমেডান এবং মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan beats Mohammedan FC)। নামেই মিনি ডার্বি। দলের তলানিতে ঠেকা পারফর্মেন্স এবং ক্লাবের স্পন্সরশিপ নিয়ে চলতে থাকা ডামাডোলে মহমেডান সমর্থকরা মনে হয় আগেই বুঝতে পেরেছিলেন তাদের জন্য শনিবার রাতে যুবভারতীতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ফলাফল কী হতে চলেছে। তাই গ্যালারিতে মেরেকেটে ১০ হাজার মাত্র দর্শক। তার বেশিরভাগটাই সবুজ-মেরুন সমর্থক। প্রথম লেগের ম্যাচে এই মহমেডানকে যুবভারতীতেই ৩-০ গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগান। এবারও তার অন্যথা হল না। উল্টে ব্যবধান আরও বাড়ল। তাই খেলা শেষে এই ম্যাচকে আদৌ মিনি ডার্বি বলা যায় কিনা, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল।
ধারে-ভারে প্রতিপক্ষ মহমেডানের থেকে অনেকটাই শক্তিশালী মোহনবাগান (Mohun Bagan beats Mohammedan FC), তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তার ওপর শেষ দুই ম্যাচে ড্র করায় জয়ের খিদেটা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল শুভাশিস বোসদের। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠে কর্তৃত্ব দেখিয়ে গেল সবুজ-মেরুন ফুটবলাররাই। অথচ ম্যাচের আগের দিন দলের হেড কোচের অনুপস্থিতিতে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে মহমেডানের সহকারী কোচ মেহেরাজউদ্দিন জানিয়েছিলেন, তাঁরা শনিবার অলআউট ঝাঁপাবেন। কিন্তু কোথায় কী! উল্টে গোটা দলটার মধ্যেই যেন গাছাড়া ভাব। মন থেকে নয়, মহমেডান ফুটবলাররা জোর করে যেন মাঠে নেমে ছিলেন মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। ম্যাচ দেখে মনে হল যেন শুরু থেকেই সাদা-কালো ফুটবলাররা মোহনবাগানের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করল।
আরও পড়ুন: Wriddhiman Saha: ইডেনে কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ ঋদ্ধির! কিংবদন্তিকে সংবর্ধনা বাংলার ক্রিকেট সংস্থার
শুরু থেকেই আক্রমণে ঝড় তোলায় গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি মোহনবাগানকে (Mohun Bagan beats Mohammedan FC)। ১২ মিনিটে অধিনায়ক শুভাশিস বোসের গোলে খাতা খোলে পালতোলা নৌকো। লিস্টনের কর্নার থেকে ভেসে আসা বল হেড করে বক্সে নামান মনবীর সিং। সেখান থেকে কামিংস, জেমি ম্যাকলারেন এবং দিপ্পেন্দ্যু বিশ্বাসের পা ঘুরে বল পৌঁছায় শুভাশিসের কাছে। ডান পায়ের চকিত শটে গোল করে যান বাগান অধিনায়ক। ২০ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোলটি করেন মনবীর। কামিংসের কর্নার থেকে হেডে গোল করে যান মনবীর। মোহনবাগানের তৃতীয় গোল ৪৩ মিনিটে।
এবারও সেই কামিংসের ফ্রিকিক থেকে বল ভেসে আসে মহমেডান বক্সে। ম্যাকলারেনের শৈল্পিক ফ্লিকে বল পেয়ে যান শুভাশিস। চলতি বলেই বাঁপায়ের শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করে যান বাগান অধিনায়ক। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল মহমেডান(Mohun Bagan beats Mohammedan FC)। কাসিমভের করা কর্নার থেকে মহমেডানের মনবীরের হেড দুরন্ত তৎপরতায় হাত ছুঁইয়ে বার পোস্টের উপর দিয়ে বার করে দেন সবুজ-মেরুন গোলরক্ষক বিশাল কাইত। সাদা-কালো ব্রিগেডের দুর্দশা এখানেই শেষ নয়। প্রথমার্ধের একদম শেষ মুহূর্তে, সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডার টম অলড্রেডকে ফাউল করে এবং লাথি মেরে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন কাসিমভ। ফলে প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি দশজনে হয়ে যায় মহমেডান।
ম্যাচের বাকি অর্ধেক অর্ধেকটা ১০ জনই খেলতে হয় মহমেডামকে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ৫৩ মিনিটে মোহনবাগানের হয়ে চতুর্থ এবং নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন মনবীর। এইগোলোর ক্ষেত্রেও অবদান সেই কামিংসের। বাঁদিকের কর্নার থেকে তাঁর ভাসানো ক্রস থেকে হেডে গোল করে যান মনবীর। এদিন মোহনবাগান যেভাবে খেলছিল তাতে মনে হচ্ছিল অন্তত হাফ ডজন গোল হজম করতে চলেছে মহামেডান। সেটা আর হয়নি। তবে ৮২ মিনিটের মাথায় মনবীরের পরিবর্তে নামা দিমিত্রি পেত্রাতোসের সাদা-কালো বক্সের মাঝখান থেকে নেওয়া বাঁপায়ের শট বারে লেগে ফিরে না এলে এদিন অন্তত ৫ গোলেই ম্যাচটা জিততে পারতো মোহনবাগান (Mohun Bagan beats Mohammedan FC)।
গোটা দল ভালো খেললেও আলাদা করে সকলের নজর কাড়লেন সবুজ-মেরুনের তরুণ ডিফেন্ডার দিপ্পেন্দ্যু বিশ্বাস। চোটের কারণে ছিটকে যাওয়া তারকা ডিফেন্ডার রড্রিগেজের জায়গায় নেমে দারুন সামলালেন সবুজ-মেরুন রক্ষণ (Mohun Bagan beats Mohammedan FC)। তাই ম্যাচ শেষে আলাদা করে শুভাশিস, অলড্রেডদের প্রশংসা আদায় করে নিলেন তিনি। দলের বড় জয় এবং নিজে জোড়া গোল করতে পেরে একটু বেশিই খুশি সবুজ-মেরুন অধিনায়ক শুভাশিস। চলতি আইএসএলে ইতিমধ্যেই ছ’টি গোল করে ফেলেছেন তিনি। রক্ষণের ফুটবলার হয়েও এতগুলো গোল করতে পেরে খুশি পাওলো মালদিনির ভক্ত শুভাশিস। তবে, দল লিগ শিল্ড জয়ের অনেক কাছে পৌঁছে গিয়েছে স্বীকার করলেও খেতাব যে নিশ্চিত, তা এখনই মানতে নারাজ বাগান অধিনায়ক।
আরও পড়ুন: Virat Kohli: ১২ বছর পর রঞ্জিতে প্রত্যাবর্তন বিরাটের, বিশেষ প্রস্তুতি কিং কোহলির
সেই সঙ্গে তরুণ ডিফেন্ডার দিপেন্দ্যুরও ভুয়সী প্রশংসা করলেন শুভাশিস। ও যেভাবে প্রত্যেকটা সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে তাতে দিপ্পেন্দ্যুকে আর জুনিয়র নয়, সিনিয়র ডিফেন্ডার বলেই মনে করছেন সবুজ-মেরুন অধিনায়ক। এবারে এখনও পর্যন্ত টানা ১১ ম্যাচে একটাও গোল হজম করেনি মোহনবাগান। অতীতে আইএসএলে টানা ১৫ ম্যাচে ক্লিন শিট রাখার রেকর্ড রয়েছে মোহনবাগানের। এবার সেই রেকর্ডও ভেঙ্গে যাবে বলেই আশাবাদী শুভাশিস। (Mohun Bagan beats Mohammedan FC) দলের জয়ে খুশি তারকা ডিফেন্ডার অলড্রেডও। বড় ব্যবধানে জয় এলেও ম্যাচটা যে মোটেও সহজ ছিল না তা জানিয়ে দিলেন তিনি। সেই সঙ্গে এদিনও হলুদ কার্ড দেখায় পরের ম্যাচে খেলতে না পারার আফসোসও করে গেলেন তিনি। তবে সেই নিয়ে চিন্তিত নন সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডার। পরের ম্যাচে দিপ্পেন্দ্যু-রড্রিগেজ জুটিতেই ভরসা রাখছেন অলড্রেড।
মহমেডানকে ৪-০ গোলে হারিয়ে খুশি হওয়ার পাশাপাশি দুঃখ প্রকাশ করলেন মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত। মহমেডানের দুর্দশাকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলেই মনে করছেন তিনি। সেই সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলকেও খোঁচা দিতে ছাড়েননি তিনি। ম্যাচ শেষে মোহনবাগান সচিব বলেন, ‘মহমেডান তো বটেই, কলকাতার বাকি দুটি দলই যে ফুটবল খেলছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের ও দুঃখজনক। বুঝতে হবে টুর্নামেন্টটা আইএসএল।(Mohun Bagan beats Mohammedan FC) আই লিগ জিতে এসে কেউ যদি মনে করে এখানেও ভালো ফল করবে সেটা ভুল।’ মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট এদিনের জয়ে লিগ শিল্ড জয়ের অনেক কাছে পৌঁছে গেল বলেই মনে করছেন তিনি। তবে, সামনের ম্যাচগুলোতে জয় পেলেই টানা দ্বিতীয়বার লিগ শিল্ড ক্লাবে আসবে বলেই জানিয়ে দিলেন দেবাশিস দত্ত।