ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ঘরের মাঠে আবার জয়ে ফিরল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। আইএসএলে শেষ দুই ম্যাচে জামশেদপুর এবং চেন্নাইনের বিরুদ্ধে তাদের ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্র করার পর সোমবার যুবভারতীতে বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয় তুলে নিল মোহনবাগান (Mohun Bagan vs Bengaluru FC)। সেই সঙ্গে প্রথম লেগের ম্যাচে সুনীল ছেত্রীদের বিরুদ্ধে ০-৩ গোলে হারের মধুর প্রতিশোধটাও নিয়ে নিল হোসে মোলিনার দল।
ম্যাচের ৭৪ মিনিটে ম্যাচে একমাত্র গোলটি করে সবুজ-মেরুণ শিবিরকে মূল্যবান ৩ পয়েন্ট এনে দিলেন লিস্টন কোলাসো। গত দুই ম্যাচে ড্র করায় লিগ শিল্ড জয়ের যে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল এদিনের বেঙ্গালুরু এফসি বধে সেই পথ আরও মসৃণ হল বাগানের। এই মুহূর্তে ১৮ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষেই রইল মোহনবাগান। অপরদিকে ১৮ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা বেঙ্গালুরু লিগ শিল্ডের শিরোপা জয়ের দৌড় থেকে প্রায় ছিটকে গেল।
আরও পড়ুন: Virat Kohli: ১২ বছর পর রঞ্জিতে প্রত্যাবর্তন বিরাটের, বিশেষ প্রস্তুতি কিং কোহলির
তবে মোহনবাগানের যে চ্যাম্পিয়ন্স লাক কাজ করছে, সোমবারের ম্যাচ তার বড় প্রমাণ। গোটা ম্যাচে লিস্টনের গোল আর দু-একটা আক্রমণ ছাড়া মোহনবাগানের আর সেইরকম কোনও বলার মতো খেলাই চোখে পড়ল না। গোটা ম্যাচে বেঙ্গালুরুরই আক্রমণ ও দাপট ছিল বেশি। তাই সোমবারের ম্যাচ (Mohun Bagan vs Bengaluru FC) দেখে সংবাদপত্রে অতীতের সেই বিখ্যাত হেড লাইনের কথাই মনে পড়ে যাচ্ছিল সকলের- ‘খেলল বেঙ্গালুরু, জিতল মোহনবাগান’!
অগোছালো ফুটবল খেলেও জয়ে ফিরল মোহনবাগান (Mohun Bagan vs Bengaluru FC)
খেলার শুরু থেকেই বলের দখল রাখার পাশাপাশি একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে গেল বেঙ্গালুরু (Mohun Bagan vs Bengaluru FC)। তার সুবাদে বেশ কয়েকবার গোল করার জায়গা পৌঁছেও গিয়েছিলেন সুনীল ছেত্রী, পেদ্রো কাপোরা। কিন্তু সবুজ-মেরুণ রক্ষণ এবং গোলরক্ষক বিশাল কাইথ সতর্ক থাকায় বিপদ হয়নি। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে মোহনবাগানের বক্সের একেবারে মাঝখানে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। তাঁর শট সাইড নেট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধের খেলা গোলশূন্য ভাবেই শেষ হয়।
আরও পড়ুন: National games BOA: ন্যাশনাল গেমসে বাংলার প্রতিনিধি দলে ৩৮৮ জন, পদকজয়ীদের আর্থিক পুরস্কার-সরকারি চাকরি
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে আরও ঝাঁঝ বাড়ায় বেঙ্গালুরু। ৫৭ মিনিটে পেদ্রো কাপোর হেড গোলে ঢোকার মুহূর্তে লাফিয়ে বল বারের উপর দিয়ে ঠেলে পাঠিয়ে দেন বাগান গোলরক্ষক বিশাল কাইথ। সকলেই যখন ধরে নিয়েছে ড্রয়ের হ্যাটট্রিক করতে চলেছে মোহনবাগান, তখনই ‘কাহানি মে টুইস্ট’ (Mohun Bagan vs Bengaluru FC)। ৭৪ মিনিটে বেঙ্গালুরুর বক্সের বাঁ দিক থেকে গ্ৰেগ স্টুয়ার্টের ক্রস হেড করে ক্লিয়ার করেন বেঙ্গালুরুর রাহুল বেকে। বক্সের বাইরে মাঝামাঝি জায়গায় ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা লিস্টন চলতি বলে জোড়ালো শট নেন। বল জড়িয়ে যায় বেঙ্গালুরুর জালে। গোয়ানিজ ফরোয়ার্ডের দৃষ্টিনন্দন গোলে পয়সা উসুল গ্যালারিতে উপস্থিত প্রায় ৪২ হাজার সবুজ-মেরুণ সমর্থকের।
লিস্টনের গোলে মান বাঁচল (Mohun Bagan vs Bengaluru FC)
গোল করে জার্সি খুলে ‘সিক্স প্যাক’ বডি দেখিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো সেলিব্রেশন করে হলুদ কার্ডও দেখলেন লিস্টন। এছাড়াও এদিন মোহনবাগান অধিনায়ক শুভাশিস বোস এবং ম্যাচের সেরা আপুইয়াও দেখলেন হলুদ কার্ড। গোল করে দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরে খুশি লিস্টন (Mohun Bagan vs Bengaluru FC)। তবে জার্সি খেলে রোনাল্ডোর মতো সেলিব্রশেন করা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে কিছুটা লিজ্জিত হয়েই লিস্টন জানিয়ে দিলেন, ‘আগে থেকে কিছু ঠিক করা ছিল না। আবেগের বশেই করে ফেলেছেন।’
দু’ম্যাচ ড্রয়ের পর দলের জয়ে ফেরা এবং তিন পয়েন্ট পাওয়াকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সবুজ-মেরুণের তারকা ব্রিটিশ ফরোয়ার্ড গ্ৰেগ স্টুয়ার্ট। লিস্টনের গোলেরও প্রশংসা করলেন তিনি। তবে লিগ শিল্ড খেতাব জয়ের অনেকটাই কাছে পৌঁছে গেলেও খেতাব জেতা প্রায় নিশ্চিত, এমনটা মানতে নারাজ তিনি। সামনে মহামেডান সহ বেশকিছু কঠিন ম্যাচ রয়েছে। তাই সেই ম্যাচ গুলোতে ভালো খেলা ও জয় পাওয়ার উপরেই দল ফোকাস করছে বলে জানালেন।

আরও পড়ুন: Novak Djokovic: চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ইতি! ম্যাচ ছাড়তে বাধ্য হলেন নোভাক জকোভিচ
এদিন জয় পেলেও বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে দল যে মোটেও ভালো খেলেনি, ম্যাচ শেষে তা জানিয়ে দিলেন মোহনবাগানের প্রাক্তন শীর্ষকর্তা সৃঞ্জয় বসু। সেই সঙ্গে লিস্টনের গোলের প্রশংসা করার পাশাপাশি তাঁর বেশিক্ষণ পায়ে বল ধরে রাখার সমালোচনাও করলেন। সৃঞ্জয় বসু বলেন, ‘মোহনবাগান মোটেও ভালো খেলেনি। লিস্টন গোল করে পাপে প্রায়শ্চিত্ত করেছে। ও যেন একটি আঠার কোম্পানির বিজ্ঞাপন করছে মনে হচ্ছিল (Mohun Bagan vs Bengaluru FC)। সারাক্ষণ পায়ে বল আঠার মতো আটকে দৌড়ে গেল। ওকে এটা বুঝতে হবে।’ তবে দলের জয়ে খুশি মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত।
লিস্টনের গোলের প্রশংসা করার পাশাপাশি দল প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে গোল হজম না করে ক্লিনশিট রাখায় উচ্ছ্বসিত তিনি। তাই আনোয়ার আলির মতো তারকা ডিফেন্ডার মোহনবাগান ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলে চলে যাওয়ায় ‘শাপে বর হয়েছে’ বলেই মনে করছেন তিনি। সেইসঙ্গে গত ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মোহনবাগান কর্তাদের ব্যঙ্গ করে যুবভারতীর গ্যালারিতে টাঙানো টিফো নিয়েও পড়শি ক্লাবকে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না তিনি। দেবাশিস দত্ত জানিয়ে দিলেন ‘অন্যকে ছোট করে কেউ বড় হতে পারে না। তাই ১০টা ম্যাচের পর একটাতে জয় পায়। এবং পয়েন্ট টেবিলে ১১ নম্বরে থাকে।’