ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: প্যালেস্তিনীয় নেতা মাহমুদ আব্বাস এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস রবিবার ঘোষণা করেছেন যে, গাজার জনগণকে জোর করে উচ্ছেদ করার যে প্রস্তাব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Trump on Gaza) দিয়েছেন, তাঁর এর বিরোধিতা করবেন। ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে “পরিষ্কার” করে ফেলা হবে।
গাজা থেকে প্যালেস্তিনীয়দের উচ্ছেদের পরিকল্পনা (Trump on Gaza)
ট্রাম্প গাজার বর্তমান অবস্থা নিয়ে বলেন, এটি একটি “ধ্বংসস্থলে” পরিণত হয়েছে (Trump on Gaza)। তিনি জর্ডনের রাজা আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা বলে প্রস্তাব করেছেন প্যালেস্তিনীয়দের জর্ডন ও মিশরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা। তিনি বলেন, “আমি চাই মিশর তাদের মানুষদের নিক। এবং আমি চাই জর্ডন তাদের নিক।”
মাহমুদ আব্বাস ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে বসে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “প্যালেস্তিনীয় জনগণ তাদের দেশ এবং পবিত্র স্থান ত্যাগ করবে না।”
হামাস নেতা বাসেম নাঈম বলেন, “আমরা এমন কোনও পরিকল্পনা সফল হতে দেব না, যেমনটা আগে কখনও দিইনি।” অন্যদিকে ইসলামিক জিহাদ এই পরিকল্পনাকে “ঘৃণ্য” বলে উল্লেখ করেছে।
গাজার উচ্ছেদ: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি? (Trump on Gaza)
প্যালেস্তিনীয়দের জন্য, গাজা থেকে তাদের সরানোর (Trump on Gaza) যেকোনও চেষ্টা ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় যে “নাকবা” বা বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল, তা মনে করিয়ে দেবে। সেই সময় লক্ষ লক্ষ প্যালেস্তিনীয় তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছিলেন।
গাজা থেকে স্থানচ্যুত (Trump on Gaza) রাশাদ আল-নাজি বলেন, “আমরা ট্রাম্প এবং গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই যে, আমরা কোনওভাবেই প্যালেস্তাইন বা গাজা ছাড়ব না।”
আরব লিগ এবং প্রতিবেশী দেশের প্রতিক্রিয়া
আরব লিগ ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, “মানুষকে তাদের জমি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করা জাতিগত নিধনের সমান।”
জর্ডনের বিদেশমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, “প্যালেস্তিনীয়দের উচ্ছেদের বিষয়ে আমাদের বিরোধিতা শক্তিশালী এবং স্থায়ী। জর্ডান জর্ডানিয়ানদের জন্য এবং প্যালেস্তাইন প্যালেস্তিনীয়দের জন্য।”
মিশরের বিদেশ মন্ত্রকও প্যালেস্তিনীয়দের “অপরিহার্য অধিকার” লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়।
যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সংকট
অক্টোবর ৭, ২০২৩-এ হামাসের ইজরায়েলের উপর হামলার পর থেকে গাজায় যুদ্ধ চলছে। গাজায় ইজরায়েলের আক্রমণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৭,৩০৬ মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক।
বর্তমানে হামাস এবং ইজরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক দফা বন্দি বিনিময় হয়েছে। শনিবারের বিনিময়ে ৪ জন ইজরায়েলি নারী সৈনিক এবং ২০০ জন প্যালেস্তিনীয় বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তবে ইজরায়েল অভিযোগ করেছে যে, হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে। তারা জানিয়েছে, হামাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দি, আরবেল ইয়েহুদকে মুক্তি দেয়নি।
মানবিক পরিস্থিতি: এখনও সংকটপূর্ণ
যুদ্ধবিরতির ফলে কিছু খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধ সরবরাহ গাজায় পৌঁছেছে। তবে জাতিসংঘের মতে, “মানবিক পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ।”
হামাস জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরে যাওয়ার জন্য প্যালেস্তিনীয়দের চলাচলে বাধা দেওয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের সমান।
লেবাননে উত্তেজনা
এদিকে লেবাননে হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইজরায়েলের একটি যুদ্ধবিরতিও কার্যকর হয়েছে। তবে ইসরায়েলি সেনারা এখনও সীমান্ত থেকে পুরোপুরি সরে যায়নি।
লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, সীমান্তে বাড়ি ফিরতে যাওয়া বাসিন্দাদের ওপর ইজরায়েলি সেনারা গুলি চালিয়েছে, যার ফলে প্রায় ২০ জন নিহত হয়েছেন।
জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি
গাজার পরিস্থিতি ক্রমেই আরও জটিল হয়ে উঠছে। ট্রাম্পের বিতর্কিত প্রস্তাব এবং যুদ্ধবিরতির টানাপোড়েন পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করছে। প্যালেস্তিনীয় জনগণ এবং তাদের নেতারা তাদের জমি ছাড়ার যে কোনও পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। বিশ্বজুড়ে মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।