ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ২০২৬ সালের বিধানসভা (Panchayet Roads) নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গ্রামীণ রাস্তা সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
নির্বাচনের নতুন কৌশল? (Panchayet Roads)
সাধারণত প্রতি বছর এই খাতে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা (Panchayet Roads) বরাদ্দ করা হয়, কিন্তু আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে এই বরাদ্দ একলাফে বাড়িয়ে এক হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এই বৃদ্ধিকে নজিরবিহীন বলে মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে, যা আগামী নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় কৌশল হিসেবে কাজ করতে পারে।
বরাদ্দের মূল লক্ষ্য (Panchayet Roads)
এই বরাদ্দের মূল লক্ষ্য হল প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক (Panchayet Roads) যোজনা (পিএমজিএসওয়াই) এবং গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (আরআইডিএফ) প্রকল্পে নির্মিত পুরনো রাস্তাগুলির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ। পিএমজিএসওয়াই প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণের জন্য ৬০ শতাংশ টাকা কেন্দ্রীয় সরকার বহন করে, আর বাকি ৪০ শতাংশ রাজ্য সরকার দেয়। তবে এই প্রকল্পের একটি শর্ত হলো, নির্মিত প্রতিটি রাস্তার শুরু ও শেষে প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত ফলক বসাতে হয়।
আরও পড়ুন: Stealing Gold Chain: ঢাকুরিয়ায় লক্ষাধিক টাকার সোনার হার ছিনতাই, আতঙ্কে প্রৌঢ়া!
ভোট পেতেই রাস্তা সারাই? (Panchayet Roads)
এই ফলকগুলি বছরের পর বছর রাস্তার পাশে থেকে যায়, যা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় পর এই রাস্তাগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো স্পষ্ট নীতি নেই। ফলে এই দায়িত্ব রাজ্য সরকারের উপর বর্তায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনের আগে এই রাস্তাগুলির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে জোর দেওয়া হয়েছে, কারণ রাস্তার অবস্থা খারাপ হলে তা ভোটারদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মানুষের কথা ভেবেই কাজ
রাজ্যের সদ্য পেশ করা বাজেট অনুযায়ী, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের জন্য মোট ৪৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা শুধুমাত্র পিএমজিএসওয়াই এবং আরআইডিএফ প্রকল্পে নির্মিত রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের মতে, এই রাস্তাগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হলে গ্রামীণ পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, যা গ্রামীণ অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
সামাজিক প্রকল্প
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়ন সরাসরি ভোটের উপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। তৃণমূল সরকার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষক বন্ধু, দুয়ারে সরকার ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার গ্রামীণ এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এবার রাস্তা সংস্কারের মতো পরিকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার ভোটারদের আরও কাছাকাছি আসতে চাইছে।

বিরোধীদের কড়া নজর
অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলি এই বরাদ্দকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকার এই রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে গাফিলতি করেছে, আর নির্বাচনের আগে হঠাৎ এত বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ করার মূল উদ্দেশ্য হলো ভোটব্যাঙ্ক সুসংহত করা। বিরোধীরা এই প্রকল্পের তদারকি ও বাস্তবায়নের উপর কড়া নজর রাখার ঘোষণা করেছে।
গ্রামীণ আর্থিক অবস্থার উন্নতি!
গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়ন শুধু পরিবহণ ব্যবস্থাই নয়, গ্রামীণ অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভালো রাস্তা কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে, যা গ্রামীণ আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়। তাই এই প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন গ্রামীণ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
সময় কথা বলবে
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্কের জন্য এটি একটি বড় কৌশল হতে পারে, যা তৃণমূল সরকারের পক্ষে ইতিবাচক ফল আনতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা হয় কি না এবং প্রকল্পগুলি কতটা সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়।